স্বপন হত্যা মামলায় গ্রেপ্তারকৃত চার আসামির তিনজন। ছবি: বাংলাদেশ পুলিশ

কিশোরগঞ্জের ভৈরবের চা বিক্রেতা স্বপন মিয়ার (৩৮) লাশ উদ্ধার হয় গত ২৮ জুলাই স্থানীয় একটি কালভার্টের নিচ থেকে। লাশ উদ্ধারের পরপরই মামলা করেন তাঁর ছোট ভাই রিপন মিয়া (৩৫)। থানা-পুলিশের পাশাপাশি ছায়া তদন্তে নামে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। বিস্তারিত তদন্তে একটা সময় বেরিয়ে আসে প্রকৃত ঘটনা। জানা যায়, ভাইকে নৃশংসভাবে হত্যা করে বিচারপ্রার্থী হয়েছে রিপন নিজেই।

পিবিআই হেডকোয়ার্টার্সের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আবু ইউছুফ স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, তদন্তে জানা গেছে, মাদকাসক্ত রিপনের সঙ্গে নানা বিষয়ে বিরোধ ছিল বড় ভাই স্বপনের। তার জেরেই তাঁকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেন রিপন।

নিহত স্বপনের বাড়ি কিশোরগঞ্জের ভৈরবের চাঁনপুর এলাকায়। চার ভাইয়ের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। সবার বড় ভাই খোকন মিয়া (৪০) সৌদিপ্রবাসী। স্বপনের ছোট ভাই রিপনও একসময় কাজের সন্ধানে মালয়েশিয়া পাড়ি জমিয়েছিলেন। ২–৩ বছর আগে দেশে ফেরেন। করোনা মহামারির কারণে এরপর আবার বিদেশে যাওয়ার চেষ্টা করেও পারেননি। একপর্যায়ে বাড়ির পাশে মাছের খামারসহ কৃষিজমি আবাদ শুরু করেন তিনি। কিন্তু ক্রমেই তিনি নেশার জগতে হারিয়ে যাচ্ছিলেন। এতে বাধা দেওয়ায় বড় ভাই স্বপনের সঙ্গে প্রায়ই কথা-কাটাকাটি হতো তাঁর। এর সঙ্গে যোগ হয়েছিল পৈতৃক সম্পত্তি নিয়ে বিরোধ। স্বপন–রিপনদের সবার ছোট ভাই (৩১) বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী। স্বপন নিহত হওয়ার তিন দিন পর তাঁর একটি পুত্রসন্তানের জন্ম হয়।

তদন্তে জানা যায়, গত ২৫ জুলাই রাত আনুমানিক সাড়ে ১০টার দিকে রিপন তাঁর পূর্বপরিচিত আব্দুর রউফ, ইমান আলী, সবুজ, বুলবুলের সঙ্গে স্বপনকে হত্যা করার পরিকল্পনা করেন। এই চারজনের মধ্যে বুলবুলের বিরুদ্ধে আগে থেকেই চুরি, ডাকাতি ও খুনের অভিযোগ ছিল। পরিকল্পনা অনুযায়ী ২৬ জুলাই ভোরে ইমান আলী ও বুলবুল ভৈরব বাজার বাইন্নাপট্টি থেকে অ্যাসিড কিনে আনেন। এরপর তাঁরা একটি অটোরিকশা ভাড়া করেন। ওই দিন দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে রিপন, ইমান আলী, সবুজ, বুলবুল, আব্দুর রব এবং অটোরিকশাচালক স্থানীয় একটি মার্কেটের ভেতরে অবস্থান নেন। স্বপন সে সময় মুঠোফোনে কথা বলতে বলতে বাড়ি ফিরছিলেন। মার্কেটের সামনে আসতেই তাঁকে পেছন থেকে গামছা দিয়ে নাক–মুখ–চোখ বেঁধে ফেলা হয়। এরপর তাঁকে অটোরিকশায় তুলে ছোট রাজাকাটা কবরস্থানের দিকে রওনা হন তাঁরা। একপর্যায়ে স্বপন কৌশলে নিজেকে ছুটিয়ে অটোরিকশা থেকে লাফিয়ে পড়েন। এ সময় ইমান আলী তাঁকে অ্যাসিড ছুড়ে মারেন। এতে স্বপনের শরীরের অনেক জায়গা ঝলসে যায়। স্বপন আত্মরক্ষার্থে পাশের বিলে লাফ দেন। দুর্বৃত্তরা সেখানে স্বপনকে পানির নিচে চেপে ধরে। একপর্যায়ে স্বপনের ঘাড় ভেঙে তাঁর মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়। পরে তাঁর লাশ নিয়ে কিছু দূরে একটি কালভার্টের নিচে ফেলে দেয় দুর্বৃত্তরা। ২৮ জুলাই সেখান থেকে স্বপনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় সন্দেহভাজন তিনজনের বিরুদ্ধে ভৈরব থানায় ২৯ জুলাই মামলা করেন রিপন।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, স্বপনের লাশ উদ্ধারের পর থানা–পুলিশের পাশাপাশি ছায়া তদন্ত শুরু করে পিবিআই। এ সময় রিপনের আচরণে সন্দেহ হলে ১৭ সেপ্টেম্বর (শুক্রবার) তাঁকে গ্রেপ্তার করে কিশোরগঞ্জে পিবিআইয়ের টিম। একই দিন আব্দুর রব (৩৫), ইমান আলী (২৮) ও সবুজকে (৩৫) নিজ নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ভাই হত্যার কথা স্বীকার করেন রিপন। পরে ১৮ সেপ্টেম্বর (শনিবার) কিশোরগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. শহীদুল ইসলাম চৌধুরীর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন তিনি।