মেছের আলী হত্যা মামলার তদন্তকালে উদ্ধার হওয়া ব্যাগ। ছবি: বাংলাদেশ পুলিশ

রাজধানীর খিলক্ষেতে একটি ফেলে যাওয়া ব্যাগের সূত্র ধরে সবজি ব্যবসায়ী মেছের আলী হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) খিলক্ষেত থানা-পুলিশ। এ ঘটনায় গ্রেপ্তার রমজান আলী আদালতে হত্যার কথা স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। খবর ডিএমপি নিউজের।

গত রোববার রাতে গাজীপুর জেলার শ্রীপুর থানার মাওনা এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। গুলশান বিভাগের ক্যান্টনমেন্ট জোনের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার ইফতেখায়রুল ইসলাম পিপিএম এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

তিনি বলেন, ২৩ মে বিকেলে খিলক্ষেত থানার বরুয়ার বোয়ালিয়া খাল-সংলগ্ন আশিয়ান হাউজিং প্রজেক্টের বালুর চরে মেছের আলীর মৃতদেহ পাওয়া যায়। এ ঘটনায় খিলক্ষেত থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করা হয়। মামলাটি তদন্তকালে ঘটনাস্থলে একটি ব্যাগ পাওয়া যায়। সেই ব্যাগ থেকে লোহার কাঁচি, কম্বলসহ কিছু নতুন-পুরোনো কাপড় ও মিনা নামে একজনের জন্মনিবন্ধন ও টিকা কার্ড পাওয়া যায়।

অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার বলেন, ব্যাগ ও ঘটনাস্থলের আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করা হয়। জন্মসনদের পরিপ্রেক্ষিতে মিনাকে ও তাঁর স্বামী শাহাবুদ্দিনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। মিনা ও তাঁর স্বামী শাহাবুদ্দিন জানান, পবিত্র ঈদুল ফিতরের কয়েক দিন আগে শাহাবুদ্দিন তাঁর গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনায় যাওয়ার জন্য নারায়ণগঞ্জ থেকে কমলাপুর রেলস্টেশনে উপস্থিত হন। সে সময় রমজান আলী নামের এক ব্যক্তি তাঁকে একসঙ্গে নেত্রকোনায় যাওয়ার কথা বলেন। রমজান আলী ট্রেনের জন্য অপেক্ষা না করে কারওয়ান বাজার থেকে বাসে করে যাওয়া বিকল্প রাস্তার কথা বলে।

পরে শাহাবুদ্দিন সরল বিশ্বাসে রমজান আলীর সঙ্গে কারওয়ান বাজার যান। সেখানে গিয়ে রমজান আলী চা পান করার কথা বলেন শাহাবুদ্দিনকে। রমজান আলী চা পান করার পর শাহাবুদ্দিনকে তাঁর কাছে থাকা ব্যাগ ও টাকা তাঁকে দিতে বলেন। শাহাবুদ্দিন ৪০০ টাকা ও তাঁর ব্যাগটি রমজান আলীর কাছে দেন। রমজান আলীর মোবাইল ফোন থেকে শাহাবুদ্দিন তাঁর স্ত্রীকে জানান, তিনি রমজান আলীর সঙ্গে গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছেন, তিনি একই এলাকায় যাবেন। শাহাবুদ্দিন চা পান করার ফলে তন্দ্রাচ্ছন্ন হলে রমজান আলী ব্যাগ ও টাকা নিয়ে চলে যান। ঘটনাস্থলে পাওয়া ব্যাগটি শাহাবুদ্দিনকে দেখানো হলে তিনি তাঁর ব্যাগটি শনাক্ত করেন।

অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার ইফতেখায়রুল ইসলাম আর বলেন, ২০ মে মেছের আলী বাসা থেকে বের হলে ওই দিন রাতে বিমানবন্দর রেলস্টেশনে রমজান আলীর সঙ্গে পরিচয় হয়। অটোরিকশাযোগে রমজান আলী ও মেছের আলী বড়ুয়া রেলগেট এলাকায় আসেন। তখন রমজান আলীর পেছনে একটি ব্যাগ ঝোলানো ছিল। ওই ব্যাগের ভেতরেই শাহাবুদ্দিনের কাছ থেকে নেওয়া ব্যাগটি ছিল। মেছের আলীকে নিয়ে রমজান আলী রেলগেটের সামনের এক দোকানে চা পান করেন। চা পান করার সময় মেছের আলীর কাছে ৪ হাজার টাকা রমজান আলী দেখতে পান। এরপর রমজান আলী কৌশলে মেছের আলীর চায়ের মধ্যে চেতনানাশক ওষুধ মিশিয়ে দেন।

তিনি বলেন, নিহত মেছের আলীর কাছে থাকা ৪ হাজার টাকা নেওয়াই রমজান আলীর মূল উদ্দেশ্য ছিল। মেছের আলী ও রমজান আলী চা পান করার পর বরুয়ার বোয়ালিয়া খাল-সংলগ্ন আশিয়ান হাউজিং প্রজেক্টের বালুর চরে উপস্থিত হন। কিছুক্ষণ পর মেছের আলী অজ্ঞান হয়ে গেলে রমজান আলী মেছের আলীকে একটু দূরে রেখে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। রমজান আলী মনের অজান্তে ব্যাগটি ঘটনাস্থলে রেখে চলে যান। এই ব্যাগের সূত্র ধরেই অপরাধীকে শনাক্ত করা হয়।

খিলক্ষেত থানায় দায়ের করা হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার রমজান আলীকে আদালতে পাঠানো হলে তিনি দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দেন বলে জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।