প্রেস ব্রিফিংয়ে কথা বলেন ডিবির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার, বিপিএম (বার)। ছবি : ডিএমপি নিউজ

রাজধানীর মৌচাক ফ্লাইওভার ও নারায়ণগঞ্জ জেলার সিদ্ধিরগঞ্জের সানারপাড় এলাকায় ডাকাতির ঘটনায় অস্ত্রসহ আন্তজেলা ডাকাত দলের তিনজন সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা রমনা বিভাগ। খবর ডিএমপি নিউজের।

গ্রেপ্তার আসামিরা হলেন জলিল মোল্লা, রিয়াজ ও দীপু।
গতকাল বুধবার (২২ সেপ্টেম্বর) এক অভিযানে ঢাকা মহানগরী, সাভার ও যশোর জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে আসামিদের গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা রমনা জোনাল টিম। এ সময় আসামিদের কাছ থেকে ডাকাতির ঘটনায় ব্যবহৃত দুটি বিদেশি রিভলবার, ৫০ রাউন্ড গুলি, দুটি মোটরসাইকেল ও লুণ্ঠিত এক লাখ টাকা জব্দ করা হয়।

গোয়েন্দা রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার এইচ এম আজিমুল হকের তত্ত্বাবধানে অভিযানটি পরিচালিত হয়।
আজ বৃহস্পতিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টায় ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানান ডিবির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার, বিপিএম (বার)।

ডিবির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বলেন, ২৮ আগস্ট একজন ব্যবসায়ী মতিঝিলের নিহন মানি এক্সচেঞ্জ থেকে ৬০ লাখ টাকা নিয়ে গাড়িতে রওনা দেন। ৬ জন ডাকাত মোটরসাইকেলে ওই ব্যবসায়ীর গাড়ি অনুসরণ করেন। এরপর বেলা দেড়টার দিকে মৌচাক ফ্লাইওভারের ওপর গাড়িটির গতিরোধ করে।

ডাকাতেরা আতঙ্ক সৃষ্টির জন্য ২ রাউন্ড ফাঁকা গুলি করে এবং হাতুড়ি দিয়ে গাড়ির দরজার গ্লাস ভেঙে ফেলে। এ সময় ডাকাতেরা গাড়ির ব্যাকডালা খুলে ভেতর থেকে একটি কালো ব্যাগে রাখা ৬০ লাখ টাকা নিয়ে পালিয়ে যায়। এই ঘটনায় ২৯ আগস্ট ডিএমপির রমনা মডেল থানায় একটি মামলা হয়।

তিনি বলেন, এ ছাড়া ৪ সেপ্টেম্বর আরেক ব্যবসায়ী মতিঝিল থেকে একটি ব্যাগে ২৫ লাখ টাকা নিয়ে যাওয়ার সময় ওই ডাকাত দলের সদস্যরা তিনটি মোটরসাইকেলে অনুসরণ করতে থাকেন। ওই ব্যবসায়ী দুপুর ১টা ৫০ মিনিটে নারায়ণগঞ্জ জেলার সিদ্ধিরগঞ্জের সানারপাড় পৌঁছামাত্র ডাকাত দলের সদস্যরা তাঁর গতিরোধ করেন। এ সময় ডাকাত দল ২৫ লাখ টাকা ছিনিয়ে নেয়।

জব্দ করা রিভলবার, গুলি ও লুণ্ঠিত টাকা। ছবি : ডিএমপি নিউজ

তাৎক্ষণিক পথচারীরা জড়ো হয়ে প্রতিরোধ করতে চাইলে ডাকাতেরা পথচারীদের লক্ষ্য করে দুই রাউন্ড গুলি ছুড়লে এক পথচারী গুলিবিদ্ধ হয়।
ডিবির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বলেন, এই ঘটনায় নারায়ণগঞ্জ জেলার সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় একটি মামলা হয়। ডাকাতির দুটি ঘটনার ছায়া তদন্ত শুরু করে গোয়েন্দা রমনা বিভাগের রমনা জোনাল টিম।

আসামিদের অপরাধ প্রক্রিয়া
গ্রেপ্তার আসামিদের অপরাধ প্রক্রিয়া সম্পর্কে ডিবির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বলেন, তাঁরা সাধারণত সাপ্তাহিক ছুটির দিন বিশেষ করে শনিবারকে ডাকাতির জন্য বেছে নেয়। তাঁরা সবাই পেশাদার ডাকাত দলের সদস্য। এই ডাকাত দলের একটি গ্রুপ মানি এক্সচেঞ্জ এলাকায় অবস্থান করে যে সব ব্যবসায়ী বেশি পরিমাণে টাকা বহন করে, তাঁদের টার্গেট করে।

টার্গেটকৃত ব্যক্তির তথ্য তাঁদের সহযোগী মোটরসাইকেলে অবস্থানকারী গ্রুপকে দেন। তাঁরা টার্গেটকৃত ব্যবসায়ীকে অনুসরণ করতে থাকেন এবং সুবিধাজনক স্থানে পৌঁছলে ফাঁকা গুলি করে আতঙ্ক সৃষ্টির মাধ্যমে উক্ত ব্যবসায়ীকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করেন। এরপর তাঁর মূল্যবান জিনিসপত্র ও টাকাপয়সা ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যান।

পুলিশের ঊর্ধ্বতন এই কর্মকর্তা বলেন, গ্রেপ্তার হওয়া জলিলের বিরুদ্ধে চারটি মামলা ও অন্যদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। উপরোক্ত দুটি ডাকাতির ঘটনায় জড়িত অন্য অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

ডিবির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার আরও বলেন, গ্রেপ্তার আসামিদের কাছ থেকে অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় ডিএমপির কোতোয়ালি থানায় মামলা হয়েছে। মামলার তদন্ত অব্যাহত আছে। ঢাকা মহানগরের যেকোনো এলাকায় ডাকাতি কিংবা কোনো গুলির ঘটনা ঘটলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। এমন ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।