ইউনেসকো সদর দপ্তরে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ভাষণ দেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: বাসস

করোনাভাইরাসের মহামারি পরিস্থিতিতে বৈশ্বিক মানবতার অভিন্ন স্বার্থে দৃঢ় অংশীদারত্ব গড়ে তুলতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। খবর বাসসের।

জাতিসংঘ শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থার(ইউনেসকো) ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে ইউনেসকো সদর দপ্তরে ১২ নভেম্বর (শুক্রবার) আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে দেওয়া ভাষণে এই আহ্বান জানান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। ইউনেসকোর মহাপরিচালক অড্রে আজোলে অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে বলেন, তাঁর সরকার সহিষ্ণুতা ও মর্যাদা সঞ্চারিত করার মাধ্যমে শান্তির বার্তা ছড়িয়ে দিচ্ছে। তিনি বলেন, ‘এ লক্ষ্যে আমরা শিক্ষা, বিজ্ঞান, সংস্কৃতি ও যোগাযোগকে কার্যকর হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছি।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আমাদের সাফল্য উদযাপনের এক অনন্য মুহূর্ত। এ ছাড়া এটি শতবর্ষ উদযাপনের আগে পরবর্তী ২৫ বছরে সংস্থার কার্যকলাপগুলো পুনর্বিবেচনা এবং আত্মসমালোচনা করার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপলক্ষ। তিনি বলেন, ‘ইউনেসকোর নীতির প্রতি বাংলাদেশের অঙ্গীকার ১৯৭২ সালে আমাদের প্রাথমিক সদস্যপদ লাভের মাধ্যমে প্রতিফলিত। আমরা এই সংগঠনকে বিশ্ব শান্তি ও সম্মিলিত সমৃদ্ধি জোরদারের জন্য অন্যতম কার্যকর মঞ্চ হিসেবে বিবেচনা করি।’

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শান্তিকেন্দ্রিক পররাষ্ট্রনীতি দ্বারা পরিচালিত বাংলাদেশ সর্বদা বিশ্ব শান্তি উদ্যোগের অগ্রভাগে থাকে। তিনি বলেন, ‘শীর্ষ অবদানকারী হিসেবে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষায় আমাদের অংশগ্রহণ এমনই একটি ঘটনা।’ তিনি বলেন, ‘বৃত্তি প্রদান, লিঙ্গ-সংবেদনশীল দৃষ্টিভঙ্গি, স্কুল ফিডিং প্রোগ্রাম, আইসিটি শিক্ষার মতো পদক্ষেপের মাধ্যমে শিক্ষায় আমাদের বিনিয়োগ প্রচুর।’

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বৃহস্পতিবার ‘সৃজনশীল অর্থনীতি’র জন্য ইউনেসকো-বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আন্তর্জাতিক পুরস্কার’ প্রদান অনুষ্ঠানে যোগদানের কথা স্মরণ করেন। তিনি বলেন, ‘এই আন্তর্জাতিক পুরস্কার অবশ্যই সৃজনশীল উদ্যোক্তা বিকাশে উৎসাহ জোগাবে।’ তিনি আরও বলেন, ইউনেসকো জাতির পিতার ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণকে একটি প্রামাণ্য ঐতিহ্য হিসেবে ঘোষণা করায় তিনি কৃতজ্ঞ।

মহামারি অনেক মানুষের জীবন কেড়ে নিয়েছে এবং জীবন বদলে দিয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এটি আমাদেরকে উদ্ভাবনী কাজ এবং গতির মাধ্যমে বেঁচে থাকতেও শিখিয়েছে।’ তিনি মহামারি থেকে পুনরুদ্ধারের পথে থাকা বিশ্বের সামনে চারটি পরামর্শ তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘আসুন, আমাদের বিশ্বমানবতার অভিন্ন কল্যাণের জন্য দৃঢ় অংশীদারত্ব গড়ে তুলতে এই মুহূর্তটি কাজে লাগাই।’

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাঁর প্রথম পরামর্শে মহামারি শিক্ষাব্যবস্থাকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করেছে উল্লেখ করে বলেন, পুনরুদ্ধারের জন্য, ডিজিটাল সরঞ্জাম ও পরিষেবা, ইন্টারনেট অ্যাকসেস, ডিজিটাল বিষয়বস্তু এবং শিক্ষকদের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে বিনিয়োগ করে শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দিতে আমাদের একটি বৈশ্বিক পরিকল্পনা দরকার। দ্বিতীয়ত, প্রযুক্তি-সহায়ক অর্থপূর্ণ শিক্ষার পরিবেশ তৈরির জন্য অবশ্যই সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্ব গড়তে হবে। তৃতীয় পরামর্শে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কোভিড-১৯ টিকাকে অবশ্যই ‘বৈশ্বিক গণপণ্য’ হিসেবে বিবেচনা করা উচিত বলে উল্লেখ করেন। চতুর্থ ও শেষ পরামর্শে তিনি বলেন, ‘আমাদের জনগণের কল্যাণের জন্য প্রযুক্তি স্থানান্তরকে গুরুত্ব দিয়ে বিজ্ঞান ও বৈজ্ঞানিক গবেষণার সুবিধা কাজে লাগাতে হবে।’