রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে বাংলাদেশ পুলিশ অডিটোরিয়ামে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত বীর মুক্তিযোদ্ধা পুলিশ সদস্যগণ। ছবি : ডিএমপি

মহান স্বাধীনতার প্রথম প্রতিরোধ যুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তোলা বীর পুলিশ মুক্তিযোদ্ধাগণকে সংবর্ধনা দিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।

মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে শনিবার (১৭ ডিসেম্বর) সকালে রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে বাংলাদেশ পুলিশ অডিটোরিয়ামে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক, বিপিএম (বার), পিপিএম।

সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক, বিপিএম (বার), পিপিএম। ছবি : ডিএমপি

বীর পুলিশ মুক্তিযোদ্ধাগণের মধ্যে কয়েকজন সদস্য মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তাঁদের দুঃসাহসিক অভিযানের স্মৃতিচারণ করেন। এ সময় অনেকে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। এ ছাড়া অনুষ্ঠানে বীর পুলিশ মুক্তিযোদ্ধাগণ মহান মুক্তিযুদ্ধে পুলিশের অবদান ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মহানুভবতার স্মৃতিচারণ করেন।
অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, শিক্ষানুরাগী ও বীর পুলিশ মুক্তিযোদ্ধার সন্তান মুহম্মদ জাফর ইকবালকে উত্তরীয় পরিয়ে দেন ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক, বিপিএম (বার), পিপিএম। ছবি : ডিএমপি

মহান মুক্তিযুদ্ধে প্রায় ৩০ লাখ শহীদ এবং ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের সব শহীদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে ডিএমপি কমিশনার বলেন, সেই মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে প্রথম প্রতিরোধ থেকে আজ পর্যন্ত প্রতিটি ক্রান্তিলগ্নে বাংলাদেশ পুলিশ জাতির পাশে রয়েছে, ভবিষ্যতেও থাকবে। ১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে আমাদের পূর্বসুরিগণ বুকের তাজা রক্ত দিয়ে স্বাধীনতা অর্জন করেছেন। পরবর্তী প্রজন্মও অগ্নিসন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ কঠোরভাবে দমন করেছে।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত সম্মানিত অতিথিবৃন্দের একাংশ। ছবি : ডিএমপি

তিনি বলেন, ভবিষ্যতেও কেউ যদি বাংলাদেশের স্বাধীনতা নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে চায়, তাহলে বাংলাদেশ পুলিশ কখনো তা সফল হতে দেবে না। এ দেশকে আমরা হায়েনামুক্ত রাখব, ইনশাল্লাহ।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, তোমরা অনেকেই বড় অফিসার হবে। তোমাদেরকে মুক্তিযুদ্ধের বই পড়তে হবে। মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বের গল্প শুনতে হবে। বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে জানতে হবে। এ দেশের স্বাধীনতা সম্পর্কে জানতে হবে।

অনুষ্ঠানের শুরুতে বীর পুলিশ মুক্তিযোদ্ধাগণকে ফুল ও উত্তরীয় পরিয়ে শুভেচ্ছা জানান ডিএমপি কমিশনার। এরপর মহান মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর ভূমিকা সম্বলিত তথ্যনির্ভর প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ পুলিশ থিয়েটার অ্যান্ড কালচারাল ক্লাব এবং সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করে।

বীর পুলিশ মুক্তিযোদ্ধা মাহবুব উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম (অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার) বলেন, আমার জীবনটাই শুরু হয়েছিল পুলিশ বাহিনীর মাধ্যমে। এ দেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে পুলিশের যে কৃতিত্ব ও গৌরবগাঁথা, তা আমাদের সবাইকে স্বীকার করতে হবে। স্বীকার করতে হবে বঙ্গবন্ধুকে। আমার পরম সৌভাগ্য আমি আল্লাহর রহমতে বেঁচে আছি। কিন্তু আমার অনেক সহকর্মী বুলেটের সামনে বুক উঁচু করে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে নিয়েছেন। কারণ তাঁরা স্বপ্ন দেখেছেন স্বাধীনতার। তাঁদের বুকে ছিল দেশপ্রেম। এই রাজারবাগ থেকেই মুক্তিযুদ্ধের প্রথম প্রতিরোধ বুলেটটি ছোড়া হয়েছিল। বাংলাদেশের পতাকা আমরা নব প্রজন্মের কাছে রেখে যাচ্ছি। তারা আগামীর বাংলাদেশ গড়ে তুলবে।

বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, শিক্ষানুরাগী ও বীর পুলিশ মুক্তিযোদ্ধার সন্তান মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, মুক্তিযুদ্ধ হলো আমাদের ডিএনএর মতো। এর অস্তিত্ব কখনো মুছে ফেলা যাবে না। স্বাধীনতার মূল্য যদি রক্ত দিয়ে দিতে হয়, তাহলে বাংলাদেশের মতো কেউ স্বাধীনতা অর্জন করেনি। যুদ্ধাপরাধীর বিচার করায় তিনি মহান আল্লাহ ও প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান। তিনি মুক্তিযুদ্ধের অভিজ্ঞতার কথা, ইতিহাসের কথা বইতে লেখার অনুরোধ করেন, যাতে পরবর্তী প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জানতে পারে।

অনুষ্ঠানে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিবর্গ, রাজারবাগ পুলিশ লাইনসের আশপাশের মুক্তিযুদ্ধ পরিবারের সদস্য, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনারগণ, যুগ্ম পুলিশ কমিশনারগণ, উপপুলিশ কমিশনারগণ, বিভিন্ন পদমর্যাদার নতুন প্রজম্মের পুলিশ সদস্যগণ উপস্থিত ছিলেন।