বাসে সুপারভাইজারের রক্তাক্ত লাশ উদ্ধারের ঘটনায় গ্রেপ্তার ইউসুফ। ছবি: বাংলাদেশ পুলিশ

লক্ষ্মীপুরে ৯ এপ্রিল যাত্রীবাহী একটি বাস থেকে ওই বাসের সুপারভাইজার রিয়াদ হোসেন লিটনের (৩৭) রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এর পরপরই বিভিন্ন তদন্ত সংস্থার পাশাপাশি ছায়া তদন্ত শুরু করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি। কাজ শুরুর এক সপ্তাহেই হত্যার রহস্য উদঘাটন ও আসামি গ্রেপ্তার করেছে তারা।

নিহত সুপারভাইজার রিয়াদের বাড়ি লক্ষ্মীপুরের চন্দ্রগঞ্জ থানায়। এ ঘটনায় ছায়া তদন্তের শুরুতেই ঘটনাস্থল ও আশপাশের এলাকার বিভিন্ন উৎস থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য সরেজমিনে সংগ্রহ করে সিআইডি। পরে সংগৃহীত বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে ঘটনার সঙ্গে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার থানার মো. ইউসুফ ভুইয়ার (২৫) সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়। সিআইডির একটি দল ১৬ এপ্রিল (শনিবার) দিবাগত রাতে নরসিংদীর মাধবদী থানা এলাকা থেকে ইউসুফকে গ্রেপ্তার করেছে।

সিআইডি জানায়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার ইউসুফ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানিয়েছেন, তিনি ভবঘুরে জীবনযাপন করছিলেন। একপর্যায়ে ওবায়দুর নামের তাঁর এক প্রতিবেশী তাঁকে বাসেচালকের সহকারীর চাকরির প্রস্তাব করেন। এতে তিনি রাজি হন। পরে ‘ইকোনো সার্ভিস’-এর চালক নাহিদের (৩৫) সহকারী হিসেবে কাজ শুরু করেন। ৮ এপ্রিল বেলা ৩টার দিকে ঢাকার মানিকনগরে ওই বাসের কাউন্টার থেকে চালক নাহিদের সঙ্গে পরিচিত হয়ে সুপারভাইজার রিয়াদসহ বাসের পুরোনো কর্মী ও যাত্রী নিয়ে লক্ষ্মীপুরের উদ্দেশে রওনা হন ইউসুফ। রাত সাড়ে ১১টার দিকে লক্ষ্মীপুরে পৌঁছে সব যাত্রী নামিয়ে লক্ষ্মীপুর সদর থানার ঝুমুর মোড়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে লক্ষ্মীপুর-ঢাকা আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে বাসটি পার্ক করা হয়। চালক নাহিদ, সুপারভাইজার রিয়াদ ও সহকারী শিপন তাঁদের সারা দিনের প্রাপ্য মজুরি ভাগ-বাঁটোয়ারা করে নাহিদ ও শিপন বাড়ির উদ্দেশে চলে যান।

সংবাদ সম্মেলনে সিআইডির কর্মকর্তারা। ছবি: বাংলাদেশ পুলিশ

সিআইডি আরও জানায়, ৮ এপ্রিল দিবাগত রাত ১টার দিকে ইউসুফ গাড়িতে অবস্থানরত সুপারভাইজার রিয়াদের কাছে পারিশ্রমিক চান। এ সময় রিয়াদ জানান, ইউসুফের ডিউটি এখনো শুরু হয়নি। ৯ এপ্রিল ভোর থেকে ডিউটি শুরু হবে এবং লক্ষ্মীপুর-ঢাকা প্রতিটি আপ-ডাউন ট্রিপের জন্য ৪০০ টাকা করে পাবেন। কিন্তু ইউসুফ ঢাকা থেকে লক্ষ্মীপুর পর্যন্ত পুরোনো সহকারী শিপনের সঙ্গে কাজ শিখতে শিখতে এসেছেন দাবি করে তাঁকেও পারিশ্রমিক দিতে বলেন। এ নিয়ে কথা-কাটাকাটি এবং পরে হাতাহাতিও হয়। এরই একপর্যায়ে গাড়িতে থাকা লোহার হুইল রেঞ্জ দিয়ে ইউসুফ সুপারভাইজার রিয়াদের মাথায় উপর্যুপরি আঘাত করেন। এতে রিয়াদ নিহত হন। এরপর রিয়াদকে গাড়ির সিটের ওপর বসিয়ে দ্রুত পালিয়ে যান।

এ ঘটনায় নিহত রিয়াদের স্ত্রী হালিমা আক্তার (২৯) লক্ষ্মীপুর সদর থানায় ৯ এপ্রিল মামলা করেন।