মেয়েকে হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার বাবা রফিকুল ইসলাম। ছবি: বাংলাদেশ পুলিশ

রংপুরে চাঞ্চল্যকর লিপি বেগম হত্যা মামলার রহস্য উদ্ঘাটন করেছে জেলা পুলিশ। তদন্তে বেরিয়ে এসেছে, বাবা রফিকুল ইসলামই তাকে হত্যা করেছেন। আসামি আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছেন।

রংপুর পুলিশ জানায়, গত ২৫ জুলাই রংপুরের পীরগাছা থানার অনন্তরাম বড়বাড়ি এলাকার সেলিম মিয়ার ধানখেত থেকে মধ্যবয়সী এক নারীর মাটিতে পুঁতে রাখা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে লাশটি স্থানীয় রফিকুল ইসলামের মেয়ে হিসেবে পরিবার শনাক্ত করে। এ ঘটনায় নিহত নারীর বাবা পীরগাছা থানায় মামলা করেন।

লাশ উদ্ধারের পর থেকেই খুনের রহস্য উদঘাটন ও আসামি গ্রেপ্তারের জন্য পীরগাছা থানা-পুলিশ ও জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের যৌথ দল তদন্তে নামে। তথ্যপ্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ রফিকুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি নিজের মেয়েকে খুনের কথা স্বীকার করেন।

পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদ ও আদালতে দেওয়া ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে রফিকুল ইসলাম বলেন, স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদের পরপরই রফিকুল ইসলামের মেয়ে লিপি বেগমের অস্বাভাবিক জীবন শুরু হয়। মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে সে। অসামাজিক কার্যকলাপেও জড়িয়ে পড়ে। লিপির এসব অনৈতিক কর্মকাণ্ড নিয়ে গ্রামে অনেক সালিস-বিচারও হয়েছে। সর্বশেষ পবিত্র ঈদুল আজহার ছুটিতে রফিকুল বাড়িতে গিয়ে জানতে পারেন, তাঁর মেয়ে অন্তঃসত্ত্বা। এরপর দিশেহারা হয়ে গত ২২ জুলাই দিবাগত রাত ১টার দিকে লিপিকে ঘুমন্ত অবস্থায় শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন রফিকুল। এরপর লাশ বাড়ির পাশের ধানখেতে পুঁতে রাখেন। কিন্তু দুদিন পর রফিকুলের আশঙ্কা হয়, লাশটি কেউ দেখে ফেলতে পারে। এ কারণে তিনি লাশটি তুলে আরও দূরের একটি জমিতে পুঁতে রাখেন।

রংপুর জেলার সহকারী পুলিশ সুপার (সি-সার্কেল) মো. আশরাফুল আলম জানান, মেয়ের অসামাজিক কাজে অতিষ্ঠ হয়ে রফিকুল এই কাজ করেছেন বলে পুলিশের কাছে স্বীকার করেছেন। রফিকুলের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তাঁকে সঙ্গে নিয়েই পুলিশ এরই মধ্যে হত্যা ও লাশ গুমে ব্যবহৃত আলামত উদ্ধার করেছে। রফিকুল আদালতে স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছেন। পরে তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

রংপুর জেলা সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সভাপতি ফখরুল আনাম বেঞ্জু বলেন, চাঞ্চল্যকর লিপি হত্যা মামলার রহস্য সাত দিনের মধ্যে উদঘাটন নিঃসন্দেহে পুলিশের একটি মাইলফলক। আমরা পুলিশের এমন দ্রুত সেবা সব সময় পেতে চাই।