বাগেরহাটের খানজাহান আলী মাজার পরিদর্শনে গিয়ে ভিক্ষুক ও ছিন্নমূল মানুষের মাঝে খেজুর ও ফল বিতরণ করেন ট্যুরিস্ট পুলিশ খুলনা অঞ্চলের পুলিশ সুপার দেওয়ান লালন আহমেদ। ছবি: বাংলাদেশ পুলিশ

সুন্দরবন কিংবা স্থাপত্যশৈলীর অনন্য নিদর্শন ষাটগম্বুজ মসজিদ অথবা খানজাহান আলীর মাজার। দেশের দক্ষিণাঞ্চলের এই পর্যটন-আকর্ষী জায়গাগুলোয় প্রতিবছর ছুটে যান হাজার হাজার পর্যটক। তাঁদের ভ্রমণ নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন করতে সদা জাগ্রত রয়েছে ট্যুরিস্ট পুলিশ। পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ট্যুরিস্ট পুলিশ খুলনা অঞ্চল নিয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা।

সম্প্রতি বাগেরহাটের খানজাহান আলী মাজার পরিদর্শন শেষে ট্যুরিস্ট পুলিশ খুলনা অঞ্চলের পুলিশ সুপার দেওয়ান লালন আহমেদ জানান, সুন্দরবন ও ষাটগম্বুজ মসজিদসহ পর্যটন-আকর্ষী বাগেরহাটের সব এলাকায় বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে ট্যুরিস্ট পুলিশ। এ জন্য ট্যুরিস্ট পুলিশ খুলনা অঞ্চলের সব সদস্যের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। দর্শনীয় স্থানগুলোয় কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যদের সতর্ক থাকতে দেওয়া হয়েছে নির্দেশ।

পুলিশ সুপার দেওয়ান লালন আহমেদ বলেন, সাধারণত ঈদের ছুটিতে ট্যুরিস্ট স্পটগুলোতে পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড় হয়। ঈদের সময় ট্যুরিস্ট স্পটগুলোতে যাতে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে, সে জন্য সবাইকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ট্যুরিস্ট পুলিশ খুলনা অঞ্চলের ফেসবুক পেজ ও হটলাইন নম্বরে দর্শনার্থীরা পর্যটন স্পটে হয়রানি বা কোনো সমস্যায় পড়লে অভিযোগ দিতে পারেন। অভিযোগ পেলে ট্যুরিস্ট পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নেবে।

এর আগে খানজাহান আলী মাজার চত্বরে ভিক্ষুক ও ছিন্নমূল মানুষের মাঝে খেজুর ও ফল বিতরণ করেন পুলিশ সুপার। এ সময় ট্যুরিস্ট পুলিশ বাগেরহাট জোনের ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক মোশারফ হোসেন, পুলিশ পরিদর্শক মনির হোসেনসহ পুলিশের অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

ট্যুরিস্ট পুলিশের তথ্য বলছে, পুলিশের বিশেষ ইউনিট ট্যুরিস্ট পুলিশের টুঙ্গিপাড়া, বাগেরহাট, সুন্দরবন, সাতক্ষীরা ও কুষ্টিয়ায় রয়েছে পাঁচটি জোন অফিস। আর একটি সাবজোন অফিস আছে মেহেরপুরে। এসব জোন অফিসের পর্যটন স্পটগুলোয় ২০২১ থেকে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৩৬ লাখ ৪৮ হাজার ৫২৩ জন দেশি পর্যটক, ৫৩৪ জন বিদেশি পর্যটক ও ১ হাজার ২২ জন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (ভিআইপি) ভ্রমণ করেছেন। তাঁদের নিরাপত্তা ও নিরাপদ ভ্রমণ নিশ্চিত করেছেন বাহিনীর সদস্যরা।

যশোর থেকে ঘুরতে এসে এক পর্যটক বলেন, ‘পরিবার-পরিজন নিয়ে প্রথমে খানজাহানের মাজারে নেমেছি। সেখান থেকে ষাটগম্বুজে যাওয়ার সময়, পুলিশ সদস্যরা আমাদের পথ চিনিয়ে দিয়েছেন। তাঁদের এই আন্তরিকতায় আমরা খুশি।’

প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর বাগেরহাটের কাস্টোডিয়ান মো. যায়েদ বলেন, ‘ট্যুরিস্ট পুলিশের কাজ খুবই প্রশংসনীয়। তাঁরা সব সময় দর্শনার্থীদের খেয়াল রাখেন। কেউ কখনো অসুস্থ হলে বিনা মূল্যে চিকিৎসা দেওয়ার ব্যবস্থাও করেন। এ ছাড়া কোনো দর্শনার্থী যদি তাঁর স্বজন হারিয়ে ফেলেন, তাঁদের খোঁজার ক্ষেত্রেও পুলিশ সদস্যরা তৎপর। সব মিলিয়ে তাঁদের কার্যক্রমে এই এলাকার পর্যটনশিল্প নতুন মাত্রা পেয়েছে।’

দেশের পর্যটনশিল্পে গতি আনতে ২০১৩ সালের নভেম্বরে যাত্রা করে পুলিশের এই বিশেষ ইউনিট। তাদের কর্মতৎপরতায় পর্যটন খাত মহামারির ধাক্কা সামলে উঠছে বলে মনে করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক মিহির কুমার দে জানান, সুন্দরবনের ভেতরে বর্তমানে মোট সাতটি পর্যটনকেন্দ্র রয়েছে। এগুলো হলো করমজল, হারবাড়িয়া, কটকা, কচিখালী, দুবলার চর, হিরণ পয়েন্ট ও কলাগাছী। এ ছাড়া শেখেরটেক, কালাবগী, আলীবান্ধা ও আন্ধারমানিককে পর্যটন স্পট হিসেবে গড়ে তোলার কাজ চলছে।