রাজারবাগে বাংলাদেশ পুলিশ অডিটরিয়ামে কেক কেটে কমিউনিটি পুলিশিং ডে উদ্বোধন করা হয়। ছবি: বাংলাদেশ পুলিশ।

‘কমিউনিটি পুলিশিংয়ের মূলমন্ত্র, শান্তি-শৃঙ্খলা সর্বত্র’ প্রতিপাদ্যে আজ দেশব্যাপী পালিত হচ্ছে কমিউনিটি পুলিশিং ডে-২০২২।

দিবসের বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে র‌্যালি, আলোচনা সভা, পুরস্কার বিতরণ ইত্যাদি।

পুলিশ অডিটরিয়ামে কমিউনিটি পুলিশিং ডে উদযাপন অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। ছবি: বাংলাদেশ পুলিশ।

কমিউনিটি পুলিশিং ডে-২০২২ এর কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ সকালে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স থেকে এক বর্ণাঢ্য র‌্যালির আয়োজন করা হয়। র‌্যালিটি বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে এসে শেষ হয়।

পরে রাজারবাগে বাংলাদেশ পুলিশ অডিটরিয়ামে এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম বিপিএমের (বার) সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এমপি। বিশেষ অতিথি ছিলেন ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ, বাংলাদেশ চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বিপিএম (বার), পিপিএম।

পুলিশ অডিটরিয়ামে কমিউনিটি পুলিশিং ডে উদযাপন অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। ছবি: বাংলাদেশ পুলিশ

অনুষ্ঠানে মুখ্য আলোচক ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। বক্তব্য দেন অতিরিক্ত আইজিপি (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) মো. আতিকুল ইসলাম বিপিএম (বার), পিপিএম (বার), ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার বিপিএম (বার) এবং মিরপুর মডেল থানার কমিউনিটি পুলিশিং কমিটির সভাপতি দেওয়ান আব্দুল মান্নান।

অনুষ্ঠানে অতিরিক্ত আইজিপিগণ, ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাগণ এবং রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার কমিউনিটি পুলিশের সদস্যগণ উপস্থিত ছিলেন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, কমিউনিটি পুলিশিংয়ের কাজ হলো সমাজে অপরাধ সংঘটিত হওয়ার আগেই অপরাধীকে চিহ্নিত করা, অপরাধীদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা। আমরা এ ক্ষেত্রে শতভাগ সফল হয়েছি।

তিনি বলেন, কমিউনিটি পুলিশিং কার্যক্রমের ফলে সমাজে বাল্যবিবাহ, ইভ টিজিং অনেক কমেছে। এখনো কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। মাদক নিয়ন্ত্রণে আমাদের আরও কাজ করতে হবে।

মন্ত্রী বলেন, জঙ্গি ও সন্ত্রাস দমনে আমরা যখন কঠিন সমস্যার মুখে পড়েছিলাম, তখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সর্বস্তরের জনগণকে ঘুরে দাঁড়ানোর আহবান জানিয়েছিলেন। তখন সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ যার যার জায়গা থেকে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে। সে সময় আমরা অভূতপূর্ব সফলতা দেখেছিলাম। জনগণ যখন পাশে থাকে কোনো কিছুই আর অসাধ্য থাকে না।

কমিউনিটি পুলিশিং ডে উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখছেন ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ বাংলাদেশ চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বিপিএম (বার), পিপিএম। ছবি: বাংলাদেশ পুলিশ

তিনি বলেন, কমিউনিটি পুলিশিংয়ের মাধ্যমে সমাজকে আরও কীভাবে সুন্দর করা যায়, পরিচ্ছন্ন করা যায়, সে লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি।

মন্ত্রী আরও বলেন, একসময় গ্রামে বিচারব্যবস্থা ছিল, কমিউনিটি পুলিশিংয়ের লক্ষ্যও একই রকম। আমরা নিজেরা যদি নিজেদের সমস্যা সমাধান করতে পারি, সমাজে অপরাধ অনেকটা কমে যাবে। আর পুলিশ তো সব সময়ই রয়েছে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ, বাংলাদেশ চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বিপিএম (বার), পিপিএম বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন প্রথম ক্ষমতা গ্রহণ করেন, তখন আপনারা দেখেছেন পাহাড়ি এলাকায় কী অবস্থা ছিল। সেখানে সন্ত্রাসী কার্যক্রম চলত। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর তত্ত্বাবধানে সে সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সমন্বয়ে আভিযানিক অপারেশনের পাশাপাশি তাদেরকে আত্মসমর্পণ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার সুযোগও দেওয়া হয়েছিল। এরপর থেকেই পাহাড়ি এলাকায় শান্তির সুবাতাস বইছে।

আইজিপি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশে যেভাবে সন্ত্রাসী কার্যক্রম দমন করা হয়েছে, তা বিশ্বব্যাপী আজ প্রশংসিত। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, কমিউনিটি পুলিশের সদস্যদের সমন্বয়ে আমরা জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস সফলভাবে দমন করতে সক্ষম হয়েছি।

আইজিপি বলেন, দেশে কমিউনিটি পুলিশিংয়ের মাধ্যমে ‘পুলিশই জনতা, জনতাই পুলিশ’ মূলমন্ত্রে আমরা একসঙ্গে কাজ করে যাচ্ছি। এখন প্রতি মাসে সারা দেশে প্রতি থানায় ‘ওপেন হাউস ডে’ পালন করা হয়। যেখানে সাধারণ মানুষ পুলিশ অফিসারদের সাথে সরাসরি কথা বলেন, তাদের সমস্যা তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, এতে করে সাধারণ মানুষ থানা থেকে কেমন সেবা পাচ্ছেন, ওই এলাকায় কী ধরনের অপরাধ বেশি ঘটছে, কেন ঘটছে তা আমরা জানতে পারি। সাধারণ মানুষের পরামর্শ নিয়ে পুলিশ সে ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নিচ্ছে।

আইজিপি বলেন, বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘আপনারা স্বাধীন দেশের পুলিশ, আপনারা জনগণের পুলিশ, আপনাদের দায়িত্ব জনগণকে সেবা করা।’ বঙ্গবন্ধুর নির্দেশনা অনুযায়ী কমিউনিটি পুলিশিং ও বিট পুলিশিংসহ বিভিন্ন কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ পুলিশ এখন জনগণের কাছাকাছি চলে গেছে। এতে করে সমাজে অপরাধ দমন সহজ হয়েছে।

পুলিশপ্রধান বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশ পুলিশের সকল জেলা, রেলওয়ে, হাইওয়ে, ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ ও মেট্রোপলিটন ইউনিটে কমিউনিটি পুলিশিংয়ের চলমান কার্যক্রম বাস্তবায়নের লক্ষ্যে দেশব্যাপী ৫৪ হাজার ৭১৮টি কমিটিতে ৯ লাখ ৪৭ হাজার ৭০১ জন কমিউনিটি পুলিশিং সদস্য কাজ করছেন।

মুখ্য আলোচক বলেন, কমিউনিটি পুলিশিংয়ের মূল কাজ সম্পর্ক স্থাপন, পার্টনারশিপ। পুলিশ সমাজের মানুষকে সাথে নিয়ে সততার সাথে, স্বচ্ছতার সাথে দায়িত্ব পালন করলে সমাজে অপরাধ কমবে, শান্তিশৃঙ্খলা বজায় থাকবে।

তিনি বলেন, তরুণ প্রজন্মের কাছে কমিউনিটি পুলিশিংয়ের বার্তা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে আমাদের কাজ করতে হবে। কারণ, তারাই ভবিষ্যতে দেশের নেতৃত্ব দেবে।

তিনি আরও বলেন, অপরাধ দমনে সাধারণ মানুষকেও এগিয়ে আসতে হবে। পুলিশ এবং জনতা মিলেই সমাজে অপরাধ দমন করতে হবে, তাহলে সমাজে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় থাকবে।

সভাপতির বক্তব্যে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ইভ টিজিং, যৌতুক, মাদক ইত্যাদি সামাজিক অপরাধের বিরুদ্ধে সমাজের সবাই মিলে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। সমাজের সবাইকে একসাথে বসে সামাজিক সমস্যা সমাধান করতে হবে।

অতিরিক্ত আইজিপি মো. আতিকুল ইসলাম বিপিএম (বার), পিপিএম (বার) বলেন, সমাজে অপরাধ দমনে কমিউনিটি পুলিশের সদস্যদের কাজে লাগাতে হবে। পুলিশের পাশাপাশি কমিউনিটি পুলিশের সদস্যরা কাজ করলে সমাজে অপরাধ কমে আসবে।

অনুষ্ঠানে শ্রেষ্ঠ কমিউনিটি পুলিশিং ম্যানেজার ও সদস্যদের পুরস্কৃত করা হয়।

উল্লেখ্য, প্রতিবছরের অক্টোবর মাসের শেষ শনিবার ‘কমিউনিটি পুলিশিং ডে’ উদযাপিত হয়ে আসছে।