বিশ্বের প্রাচীন সভ্যতার অন্যতম এক নিদর্শন পাকিস্তানের মহেঞ্জোদারো। সেটি সম্প্রতি প্রলয়ংকরী বন্যায় ব্যাপকভাবে বিধ্বস্ত হয়েছে। মার্কিন গণমাধ্যম সিএনএন এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।খবর আজকের পত্রিকার।
পাকিস্তান বর্তমানে ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়ংকর বন্যার সঙ্গে লড়াই করছে। বর্তমানে পাকিস্তানের আনুমানিক এক-তৃতীয়াংশ এলাকা বন্যার পানির নিচে রয়েছে। এই বন্যায় এখন পর্যন্ত প্রায় দেড় হাজার মানুষের প্রাণহানি হয়েছে।
সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করাচি থেকে ৫০৮ কিলোমিটার দূরে সিন্ধু নদীর উপত্যকায় মহেঞ্জোদারো অবস্থিত। এটি জাতিসংঘের ইউনেসকো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ। মহেঞ্জোদারো সভ্যতা ৫ হাজার বছর আগে ব্রোঞ্জ যুগে নির্মিত হয়েছিল।
সিন্ধু রাজ্যের সংস্কৃতি, পর্যটন ও পুরাকীর্তি বিভাগের কিউরেটর ইহসান আলি আব্বাসি এবং স্থপতি নাভিদ আহমেদ সংঘ স্বাক্ষরিত এক চিঠি সম্প্রতি ইউনেসকোতে পাঠানো হয়েছে। সেই চিঠিতে তাঁরা বলেছেন, ‘এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক ব্যাপার যে আমরা মহেঞ্জোদারো সভ্যতার ব্যাপক ধ্বংসলীলা দেখছি।’
চিঠিতে তাঁরা আরও বলেছেন, ‘প্রাচীন সভ্যতার সংরক্ষিত এই স্থাপনা বর্তমানে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। বন্যায় যাদের বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তারা এখানে অস্থায়ীভাবে আশ্রয় নিয়েছে। মানবিক কারণে আমরা জাদুঘরের নিচতলায়, গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গায় এবং আমাদের কোয়ার্টারে তাদের আশ্রয় দিয়েছি।’
সিএনএন জানিয়েছে, ইউনেসকোর কাছে পাঠানো চিঠির সঙ্গে সংযুক্ত ছবিতে মহেঞ্জোদারোর ধসে পড়া ইটের দেয়াল ও মাটির স্তর দেখা গেছে। মহেঞ্জোদারোর বেশির ভাগ অবকাঠামো ১৯২০-এর দশকে আবিষ্কৃত হয়েছে। ইউনেসকো বলেছে, মাটির ওপরের এই স্থাপনা পরিবেশগত কারণে সংবেদনশীল।
প্রাচীন এই স্থাপনার ক্ষয়ক্ষতি কমানোর জন্য কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
পদক্ষেপগুলোর মধ্যে রয়েছে জমে থাকা পানি পাম্প দিয়ে নিষ্কাশন করা, ধসে যাওয়া ইটের দেয়াল মেরামত করা, ড্রেন পরিষ্কার করা ইত্যাদি। তবে এই ব্যবস্থাগুলো যথেষ্ট নয় বলেও চিঠিতে স্বীকার করা হয়েছে।
স্থাপনাটি সম্পূর্ণরূপে মেরামতের জন্য ১০ কোটি পাকিস্তানি রুপি চেয়ে ইহসান আলি আব্বাসি ও নাভিদ আহমেদ সংঘ তাঁদের চিঠিটি শেষ করেছেন।
মহেঞ্জোদারো সভ্যতার নিদর্শনকে ইউনেসকো ১৯৮০ সালে বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে নিবন্ধন করে। সে সময় ইউনেসকো বলেছিল, এটি ভারতীয় উপমহাদেশের সবচেয়ে প্রাচীন পরিকল্পিত শহর। স্থাপনাটি সিন্ধু সভ্যতার ব্যতিক্রমী সাক্ষ্য বহন করছে। শুরুর দিকে এটি একটি ব্যস্ত নগরী ছিল। এখানে গণস্নানাগার, শৌচাগার ও বৌদ্ধবিহার ছিল। স্থাপনাগুলোর বেশির ভাগই রোদে পোড়ানো ইট দিয়ে তৈরি।