বগুড়ায় শিশু সামিউল হত্যাকাণ্ডে গ্রেপ্তার ফজলুল হক ও অনীতা রানী। ছবি: বাংলাদেশ পুলিশ।

বিয়েবিচ্ছেদের প্রতিশোধ নিতেই শিশু সামিউল হককে খুন করেছেন তার সৎ বাবা ফজলুল হক। এ হত্যার ঘটনায় সহযোগী এক নারীসহ ফজলুল হককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

আজ বুধবার বেলা ১১টায় এক সংবাদ সম্মেলনে একথা জানান বগুড়ার পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী বিপিএম।

তিনি জানান, ‘এই হত্যাকাণ্ড ফজলুল একাই করেছেন। গ্রেপ্তার নারী অনীতা রানী মোবাইলে নকল মা সেজে ফজলুলকে সহযোগিতা করেছেন। হত্যার ঘটনায় দুইজনের নামে মামলার প্রস্তুতি চলছে।’

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বিয়ের দু সপ্তাহের মাথায় দ্বিতীয় স্বামী ফজলুলকে তালাক দেন নিহত শিশু সামিউলের মা। এর কারণও ছিল সামিউল। বিয়েবিচ্ছেদের ঘটনায় ক্ষুব্ধ হন ফজলুল হক। তাই প্রতিশোধ নিতে খুন করেন সামিউলকে।

এর আগে মঙ্গলবার সকালে বগুড়ার শাজাহানপুরের লাউয়ের ক্ষেত থেকে ৮ বছরের শিশু সামিউলের গলায় ফাঁস দেয়া মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
এ ঘটনায় বিকেলে সামিউলের সৎ বাবা ফজলুল হককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর তাকে ও সহযোগিতা করার অপরাধে অনীতা রাণীকে গ্রেপ্তার করা হয়।

ফজলুল শাজাহানপুরের খরনা ইউনিয়নের কমলাচাপড় গ্রামের এবং অনীতা চেলোগ্রামের বাসিন্দা। তারা একসঙ্গে দিনমজুরের কাজ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে সুদীপ কুমার জানান, সামিউলের বাবা জাহাঙ্গীরের সঙ্গে সম্পর্ক শেষ করে মা সালেহা বেগম গত এপ্রিল মাসের শেষের দিকে ফজলুল হককে বিয়ে করেন। কিন্তু বিয়ের পর থেকে ফজলুল সৎ ছেলে সামিউলকে মেনে নিতে পারেননি। তিনি প্রায়ই সামিউলকে সালেহার মা ও বোনের কাছে রেখে আসতে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতেন। ফজলুল প্রায়ই রাতের বেলা সামিউলকে ঘরের বাইরে রেখে দরজা বন্ধ করে দিতেন। এমনকি খাবার না দিয়ে তাকে অনাহারে রাখতেন। ঈদে সামিউল তার মায়ের সঙ্গে বেড়াতে যেতে চাইলে ফজলুল তাদের মারধর করে সালেহার বোনের বাড়ি পাঠিয়ে দেন।

এসব কারণে গত ১১ মে সালেহা ফজলুলকে তালাক দেন। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হন ফজলুল।

পুলিশ সুপার আরও জানান, পরে ১৬ মে সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে সামিউলের মাদ্রাসায় যান ফজলুল। সেখানে গিয়ে সামিউলকে নিয়ে যাওয়ার কথা জানান। কিন্তু মাদ্রাসার নিয়ম অনুযায়ী মায়ের অনুমতি ছাড়া ছাত্রদের বাইরে যাওয়ার নিষেধ থাকায় অসম্মতি জানান মাদ্রাসার শিক্ষক আবু মুছা।

এ সময় পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী অনীতা রানী সামিউলের মা সেজে মোবাইলে কথা বলেন মাদ্রাসা শিক্ষকের সঙ্গে। কথা বলে নিশ্চিত হলে সামিউলকে ফজলুলের সঙ্গে যেতে দেয় মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ।
এর পরপরই ফজলুল সামিউলকে মানিকদিপা এলাকার লাউ ক্ষেতে নিয়ে যান। সেখানে সামিউলের গলায় সুতার রশি পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করেন।

শিশু সামিউল। ছবি : বাংলাদেশ পুলিশ।

হত্যাকাণ্ডের ৬ ঘণ্টার মাথায় শাজাহানপুর থানার পুলিশ কয়েকটি ভাগে ভাগ হয়ে অভিযান চালিয়ে ফজলুল ও অনীতাকে গ্রেপ্তার করে।

সুদীপ কুমার বলেন, ‘এই হত্যাকাণ্ড ফজলুল একাই করেছেন। অনীতা মোবাইলে নকল মা সেজে ফজলুলকে সহযোগিতা করায় অপরাধ করেছেন। তবে অনীতা হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে জানতেন না। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দুইজনের নামে মামলার প্রস্তুতি চলছে।’