বগুড়ায় প্রতারণার অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া দুজন। ছবি: বগুড়ার জেলা পুলিশ

বগুড়ার শাজাহানপুরে গ্রাহকের মোবাইল ব্যাংকিং নম্বর সংগ্রহ করে প্রতারণার অভিযোগে আরিফ খান (২২) ও আমিরুল ইসলাম (২০) নামের দুই তরুণকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

গ্রেপ্তার হওয়া আরিফ খান মাগুরা জেলার শ্রীপুর উপজেলার রাজাপুর মধ্যপাড়া গ্রামের আফিল উদ্দিনের ছেলে এবং আমিরুল ইসলাম একই উপজেলার চরচৌগাছি গ্রামের কবির শেখের ছেলে।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে আদালতের মাধ্যমে তাঁদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

পুলিশ সূত্র জানায়, শাজাহানপুর উপজেলার দুবলাগাড়ী এলাকায় জাহাঙ্গীর আলম নামের এক ব্যক্তি বিকাশ, নগদ ও ফ্লেক্সিলোডের ব্যবসা করেন। দেড় সপ্তাহ আগে থেকে কিছু গ্রাহক অভিযোগ করছিলেন যে, তাঁর দোকান থেকে বিকাশ বা নগদে লেনদেন করার পর অফিসের পরিচয়ে তাঁদের নম্বরে ফোন করে বলা হচ্ছে, আপনার অ্যাকাউন্টের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে। অ্যাকাউন্টটি সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হবে। যদি অ্যাকাউন্ট সচল রাখতে চান, তাহলে আপনার মোবাইলে পিন (মোবাইল ব্যাংকিংয়ের পিন) নম্বরটি টাইপ করুন। পিন টাইপ করার সঙ্গে সঙ্গে অ্যাকাউন্টের ব্যালেন্স শূন্য হয়ে যায়। এভাবে অনেক গ্রাহক প্রতারণার শিকার হয়েছেন।

বিষয়টি নিয়ে ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলমের সন্দেহ হলে তিনি সতর্ক হন এবং প্রতারক চক্রটিকে শনাক্ত করতে চেষ্টা চালান। একপর্যায়ে ওই দুই তরুণের ওপর তাঁর সন্দেহ হয়। তাঁরা মাঝেমধ্যেই জাহাঙ্গীরের দোকানে বিকাশ ও নগদে ক্যাশইন-ক্যাশআউট করতেন। লেনদেনকালে উদ্যোক্তা খাতায় নম্বর লেখার সময় তাঁরা লুকিয়ে তাঁদের মোবাইলে ভিডিও করতেন। বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার জন্য ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলম পুলিশের পরামর্শে তাঁর বন্ধুদের সহযোগিতায় চক্রটিকে ধরার পরিকল্পনা করেন।

পরিকল্পনা অনুযায়ী গত মঙ্গলবার উদ্যোক্তা খাতায় তাঁর দুই বন্ধুর মোবাইল নম্বর লিখে রাখেন জাহাঙ্গীর। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ওই তরুণ এসে বিকাশে আট হাজার টাকা ক্যাশইন করেন। এ সময় তাঁরা আগের দিনের মতো উদ্যোক্তা খাতায় লেখা নম্বরগুলো ভিডিও করেন। ওই দিন বিকেলে ওই দুই নম্বরে অফিসের পরিচয়ে ফোন করে তাঁরা প্রতারণার চেষ্টা করেন। বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর বুধবার (৯ মার্চ) বিকেলে আবার ওই তরুণ এসে লেনদেনকালে ভিডিও করার সময় জাহাঙ্গীর পুলিশকে খবর দেন। পুলিশ তাৎক্ষণিক এসে তাঁদেরকে আটক করে। পরে এ ঘটনায় ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলম বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেন।

গ্রেপ্তার ওই ব্যক্তিরা আন্তজেলা প্রতারক চক্রের সদস্য। তাঁরা দেশের বিভিন্ন জেলায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। ওই দুজনের বাড়ি মাগুরা জেলায় হলেও তাঁরা ১৫ দিন ধরে বগুড়ার তিনমাথা এলাকায় একটি হোটেলে কক্ষ ভাড়া নিয়ে থাকছিলেন। সেখান থেকে তাঁরা জেলার বিভিন্ন স্থানে প্রতারণা করে আসছিলেন।

তাঁদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন জব্দ করে প্রতারণার অনেক প্রমাণ পাওয়া গেছে। প্রতারণার কাজে তাঁরা গোপনে ভিডিও করাও বার্তা আদান-প্রদানের জন্য বিভিন্ন রকম এনক্রিপটেড অ্যাপস ব্যবহার করে থাকেন। মামলা করার পর তাঁদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।