বগুড়ার প্রধান ডাকঘরে চাঞ্চল্যকর ডাকাতি ও ডাকঘরের প্রহরী খুনের ঘটনায় আসামি গ্রেপ্তার প্রসঙ্গে ব্রিফ করেন পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী বিপিএম পিপিএম। ছবি: বাংলাদেশ পুলিশ

বগুড়ার প্রধান ডাকঘরে চাঞ্চল্যকর ডাকাতি ও ডাকঘরের প্রহরী প্রশান্ত কুমার আচার্য্য খুনের ঘটনার ১০ দিনের মধ্যে রহস্য উদঘাটন করেছে জেলা পুলিশ। পাশাপাশি এই ঘটনার একমাত্র আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

গ্রেপ্তার আসামির নাম মো. শফিকুল ইসলাম (৪০)।

বগুড়ার প্রধান ডাকঘরে ডাকাতি ও ডাকঘরের প্রহরী খুনের ঘটনায় গ্রেপ্তার আসামি। ছবি: বাংলাদেশ পুলিশ

এ ঘটনায় বগুড়ার পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী বিপিএম পিপিএম ৪ মে (বৃহস্পতিবার) ব্রিফিং করেন।

পুলিশ সুপার জানান, গত ২৪ এপ্রিল দিবাগত রাত ৩টার দিকে বগুড়া সদর থানার সাতমাথা এলাকায় অবস্থিত প্রধান ডাকঘরের ভল্ট কেটে ডাকাতি ও ডাকঘরে পাহারারত অফিস সহায়ক প্রশান্ত কুমার আচার্য্যকে (৪৩) হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় সদর থানায় মামলা হওয়ার পরপরই কাজ শুরু করে জেলা পুলিশ। ছায়া তদন্ত শুরু করে বগুড়া জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) শাখা।

পরে ডিবি ও সদর থানার যৌথ টিম গোয়েন্দা তথ্য এবং ডিজিটাল ফুটপ্রিন্টের ৩ মে (বুধবার) নওগাঁ সদর ও সাপাহার থানায় ভারতীয় সীমান্তবর্তী এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে চাঞ্চল্যকর এ মামলার একমাত্র আসামী শফিকুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করেছে।

গ্রেপ্তার আসামির কাছ থেকে জব্দ করা ডাকাতির সরঞ্জাম। ছবি: বাংলাদেশ পুলিশ

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামি জানিয়েছেন, তিনি দীর্ঘদিন ধরে দেশে-বিদেশে বিভিন্ন ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, দোকনপাটে চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতি করে আসছিলেন। তারই ধারাবাহিকতায় গত ১২ মার্চ তিনি বগুড়ার প্রধান ডাকঘরে ডাকাতির পরিকল্পনা করেন। এরপর গত ১৫ মার্চ বগুড়া নিউমার্কেট এলাকা থেকে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম নওগাঁর সাপাহার থানা এলাকায় নিজ গ্রামে চলে যান। পরে ঈদের ছুটির মধ্যে ২০ এপ্রিল রাত ১০টার দিকে তিনি বগুড়া যান। ভোররাত ৩টার ডাকঘরের উত্তর পূর্ব কোনার চায়ের দোকানের পাশ দিয়ে দেয়াল টপকে ভেতরে ঢোকেন তিনি। সেখানে ডাকঘরের মসজিদ ও গ্যারেজের পেছনে এক কোণায় অপেক্ষা করতে থাকেন। সকাল ৬টা-৭টার দিকে ডাকঘরের প্রহরী প্রসাব করতে গেলে আসামি শফিকুল চুপিসারে কেঁচিগেট দিয়ে ভেতরে ঢুকে সিঁড়ি বেয়ে দোতলায় গিয়ে ছাদের গেটের কোনায় সিঁড়ি ঘরে লুকিয়ে থাকেন। বেলা ১টার সুযোগ বুঝে নিচে নামার চেষ্টা করেন তিনি। কিন্তু কর্তব্যরত প্রহরী ভেতরে থাকায় আবার ওপরে উঠে লুকিয়ে থাকেন আসামি শফিকুল। পরে প্রহরী মসজিদের অজুখানায় হাতমুখ ধুতে গেলে বেলা সোয়া ১টার দিকে ভোল্ট রুমে ঢোকেন শফিকুল। সেখানে সিসিটিভি ক্যামেরার লাইন কেটে ভোল্ট কাটেন। তবে টাকার বাক্স দুরে থাকায় টাকা নিতে পারেননি তিনি। পরে সবকিছু ওইখানে রেখে সন্ধ্যা ৬টা-৭ টার দিকে মূলগেট টপকে বাইরে বের হয়ে নওগাঁর ভাড়া বাসায় চলে যান আসামি শফিকুল।
আসামির কাছ থেকে উদ্ধার মামলার আলামত। ছবি: বাংলাদেশ পুলিশ

ঈদের পরদিন ২৩ এপ্রিল আসামি শফিকুল আবার ডাকঘরে ডাকাতির উদ্দেশ্যে বগুড়া আসেন। ওই দিন দিবাগত রাত ২টার দিকে ডাকঘরের পাশের চায়ের দোকানের পাশ দিয়ে দেয়াল টপকে ভেতরে প্রবেশ করেন তিনি। তবে এদিন কলাপসেবল গেট লাগানো থাকায় ডাকঘরের বারান্দার গ্রিল ভেঙে ভেতরে ঢোকেন তিনি। পরে সুযোগ বুঝে সোজা ভোল্ট রুমে চলে যান আসামি শফিকুল। কিন্তু এবারও কিছু নিতে ব্যর্থ হয়ে অন্য ২-৩টা কক্ষের তালা ভাঙেন তিনি। এ সময় তালা ভাঙার শব্দে প্রহরী জেগে যান এবং তাদের মধ্যে ধস্তাধস্তি হয়। এক পর্যায়ে পাইপ দিয়ে প্রহরীর মাথায় আঘাত করে এবং গলাটিপে শ্বাসরোধ করে প্রহরীকে হত্যা করেন শফিকুল। এরপর ভোল্ট রুমে গিয়ে সেখানে র‍্যাকে রক্ষিত ১০০ টাকার ৭০টি বান্ডিল ও ৫০ টাকার ২০টি বান্ডিলসহ মোট ৮ লাখ টাকা লুট করেন শফিকুল। সকাল ৭টার দিকে নিহত প্রহরীর পকেট থেকে চাবি নিয়ে কলাপসেবল গেট ও মূল গেট খুলে আবার বাইরে থেকে তালা দিয়ে চলে যান তিনি।

বগুড়া জেলা পুলিশ জানায়, গ্রেপ্তার আসামি পেশাদার চোর, ডাকাত, ছিনতাইকারী। এর আগে ২০১৯ সালে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের বনানী থানায় জনতা ব্যাংকের ভল্ট কেটে টাকা লুটের সময় গ্রেপ্তার হয়েছিলেন তিনি।