ফুকুশিমা পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। ছবি: রয়টার্স।

ভূমিকম্প ও সুনামিতে ধ্বংস হয়ে যাওয়া ফুকুশিমা পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের তেজস্ক্রিয় পানি শোধন করে সমুদ্রে নিষ্কাশন করা হচ্ছে।

এ বছর প্রায় ১০ লাখ টন তেজস্ক্রিয় পানি সাগরে ছাড়বে জাপান সরকার। ভূমিকম্প ও সুনামিতে ধ্বংস হয়ে যাওয়া ফুকুশিমা পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের তেজস্ক্রিয় পানিই শোধন করে সমুদ্রে নিষ্কাশন করা হচ্ছে।

ফুকুশিমা কেন্দ্র পরিচালনা কর্তৃপক্ষ বলছে, পানি শোধনের পর তাতে তেজস্ক্রিয় কণার মাত্রা জাতীয় মানদণ্ড অনুযায়ী ঠিক আছে।

আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থাও (আইএইএ) শোধিত এই পানি সাগরে ছাড়া নিরাপদ উল্লেখ করে প্রস্তাবটি অনুমোদন করেছে। তবে প্রতিবেশী দেশগুলো বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

বিবিসি জানায়, পানি সাগরে ছাড়তে প্রায় চার দশক লাগবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

শুক্রবার জাপানের মন্ত্রী হিরোকাজু মাতসুনো বলেছেন, “আমরা এবছরের বসন্ত কিংবা গ্রীষ্মেই পানি সমুদ্রে ফেলব বলে আশা করছি। তবে তার আগে আইএইএ থেকে চূড়ান্ত একটি রিপোর্ট আসার অপেক্ষায় থাকবে সরকার।”

প্রতিবেশী দেশগুলোসহ স্থানীয় জেলে সম্প্রদায় তেজস্ক্রিয় পানি সাগরে ছাড়ার বিরোধিতা করছে। জেলেদের আশঙ্কা, এতে ওই অঞ্চলের সামুদ্রিক খাবারের ওপর আস্থা হারাবে মানুষ।

২০১১ সালের ১১ মার্চ ভয়াবহ এক ভূমিকম্প এবং এ থেকে সৃষ্ট সুনামির বিশাল জলোচ্ছ্বাসে জাপানের ফুকুশিমায় অবস্থিত বিদ্যুৎকেন্দ্রটির চারটি পারমাণবিক চুল্লি প্লাবিত হয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।

ফুকুশিমার ওই বিপর্যয়কে তুলনা করা হয় ইউক্রেনের চেরনোবিল পারমাণবিক দুর্ঘটনার সঙ্গে। দুটি বিপর্যয়েই প্রকৃতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জীবন বিপন্ন হওয়ায় আশেপাশের এলাকা থেকে লাখো মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়।

ফুকুশিমার তেজস্ক্রিয় পানি সাগরে ছাড়ার বিষয়টি প্রথম ২০২১ সালের অনুমোদন করে জাপান সরকার। ওই সময় জাপান সরকার বলেছিল, তেজস্ক্রিয় ১০ লাখ টন পানি শোধন করে পর্যায়ক্রমে সাগরে ফেলা হবে।

পারমাণবিক চুল্লি ঠান্ডা রাখতে ব্যবহৃত তেজস্ক্রিয় পানি প্রতিদিনই ফিল্টার হয়ে ট্যাংকে সঞ্চিত হচ্ছে। সাগরে ফেলার আগে এই পানিতে থাকা তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ বেশির ভাগই দূর করা হয়েছে। তবে ট্রিটিয়ামের মাত্রা এখনও নিরাপত্তার জাতীয় মানদণ্ডের ওপরে আছে বলে জানিয়েছে বিদ্যুৎকেন্দ্রটির পরিচালনা কোম্পানি টেপকো।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রিটিয়াম পানি থেকে আলাদা করা খুব কঠিন এবং এর মাত্রা বেশি থাকলেই কেবল তা মানুষের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। ফলে সাগরে পানি ছাড়ার আগে এই ট্রিটিয়ামকে পাতলা করে বিপজ্জনক মাত্রার নিচে নামাতে হবে। সূত্র: বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।