পুলিশের হেফাজতে গ্রেপ্তার আসামিদের চারজন। ছবি: বাংলাদেশ পুলিশ।

ফরিদপুর জেলার কোতোয়ালি ও নগরকান্দা থানায় দায়ের করা ডাকাতি মামলার মূল রহস্য উদঘাটন ও ডাকাতির সঙ্গে জড়িত সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

জানা গেছে, গত ২৭ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাত ৩টা থেকে সাড়ে ৪টার মধ্যে অজ্ঞাতনামা এক ডাকাত দল ফরিদপুর কোতোয়ালি থানাধীন তাম্বুলখানা এলাকার কাতারপ্রবাসী চাঁন মিয়ার বাড়ির সীমানাপ্রাচীর টপকিয়ে বিল্ডিংয়ের জানালার গ্রিল কেটে ভেতরে ঢুকে স্বর্ণালংকার, টেলিভিশনসহ বিভিন্ন জিনিস ডাকাতি করে নিয়ে যায়।

এর আগে গত ১৪ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাত ৩টা থেকে সোয়া ৪টার মধ্যে অজ্ঞাতনামা ডাকাতেরা ফরিদপুর নগরকান্দা থানাধীন বিল গোবিন্দপুর গ্রামের জনৈক আব্দুল কুদ্দুস সরদারের বসতবাড়ির দোতলা ভবনের নিচতলার বেলকনির গ্রিল কেটে ঘরে ঢুকে স্বর্ণালংকারসহ বিভিন্ন মূল্যবান জিনিস নিয়ে যায়।

পুলিশ সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে কিছু আলামত জব্দ করে। এই ঘটনায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে কোতোয়ালি থানা এবং নগরকান্দা থানায় ভিন্ন ভিন্ন দুটি ডাকাতির মামলা হয়।

মামলার পর জেলা পুলিশ সুপারের দিকনির্দেশনায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, সদর সার্কেল, ফরিদপুর, সহকারী পুলিশ সুপার, নগরকান্দা সার্কেল ও অফিসার ইনচার্জ কোতোয়ালি থানা, ফরিদপুরের নেতৃত্বে গুপ্তচর নিয়োগ ও তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় ঘটনায় জড়িত আসামিদের শনাক্ত, তাঁদের গ্রেপ্তার ও মালপত্র উদ্ধারের জন্য কোতোয়ালি থানার একটা চৌকস টিম অভিযান শুরু করে।

এরই ধারাবাহিকতায় ২১ অক্টোবর রাতে আসামি শহিদুল ইসলাম (৪০), মিনু আক্তার ওরফে শারমিন (৩৮), উভয়কে তাঁদের বর্তমান ঠিকানার বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং তাঁদের দেওয়া তথ্যমতে অপর আসামি আরিফ মাতুব্বরকে (৩০) তাঁর বসতবাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তার আসামিদের ২২ অক্টোবর আদালতে পাঠানো হয়।

আসামিদের দেওয়া তথ্য মোতাবেক অভিযান পরিচালনা করে আসামি রুবেল ফরাজী (৩০), মো. সোহেল রানা (৩৬), সোহাগ শেখ (২৫), মো. আলী হাওলাদারকে (৩০) ৪ নভেম্বর দিবাগত রাত আড়াইটায় ঢাকা মেট্রোপলিটন ক্যান্টনমেন্ট থানাধীন মাস্টারটেক এলাকার গ্রিন ভ্যালি টাওয়ারের ২য় তলা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং তাঁদের হেফাজত থেকে উল্লেখিত মালপত্র জব্দ করা হয়।

গ্রেপ্তার আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ১টি প্রাইভেট কারসহ ডাকাত দলের ৫ সদস্য গত ২৭ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে ৮টার দিকে আসামি শহিদুল ইসলামের বর্তমান ঠিকানার বাসায় আসেন। সেখানে তাঁরা রাতের খাওয়াদাওয়া ও ঘটনার পরিকল্পনা করেন। শহিদুল ও তাঁর স্ত্রী মিনু আক্তার শারমিনের পরিকল্পনামাফিক রাত অনুমান পৌনে দুইটার সময় শহিদুলের বাসা থেকে ডাকাত দলের ৭ সদস্য প্রাইভেট কারে করে ডাকাতি করতে যান। ডাকাতি শেষে আসামি শহিদুল ও আরিফকে একটা স্মার্ট মোবাইল ফোন ও ৬ হাজার ৫০০ টাকা দিয়ে রাজবাড়ী রাস্তার মোড়ে নামিয়ে দেওয়া হয়। আসামিরা পেশাদার ডাকাত দলের সদস্য। তাঁরা কোতোয়ালি থানার তাম্বুলখানা এলাকার ঘটনার কিছুদিন আগে ফরিদপুর নগরকান্দা থানা এলাকায় এক বাড়িতে ডাকাতি করেন। এ ছাড়া এই ডাকাত দল বাগেরহাট জেলার মোল্লাহাট থানা এলাকায় এক বাড়িতে, নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ থানা এলাকার এক বাড়িতে, ডিএমপি খিলগাঁও এলাকায় এক বাড়িতে ডাকাতি করার কথা স্বীকার করেন। তদন্ত ও গ্রেপ্তারের প্রয়োজনে অন্য আসামিদের নাম-ঠিকানা গোপন রাখা হয়েছে।

ঘটনায় জড়িত বাকি আসামিদের গ্রেপ্তার ও ডাকাতি হওয়া অন্য মালপত্র উদ্ধারের জন্য অভিযান অব্যাহত আছে।

গ্রেপ্তার আসামিদেরকে বিধি মোতাবেক আদালতে সোপর্দ করা হবে। মামলার তদন্ত অব্যাহত আছে।