হারিয়ে যাওয়া মোবাইল ফোন মালিকের কাছে হস্তান্তর করছে রাঙামাটি জেলা পুলিশ। ছবি: সংগৃহীত

মানুষের প্রত্যহ ব্যবহৃত জিনিসের মধ্যে হাতের ইলেকট্রনিক ডিভাইস বা মোবাইল ফোন অন্যতম। রাস্তাঘাটে চলাফেরার সময় হারিয়ে ফেলা, ছিনতাইকারীর কবলে পড়ে ছিনতাই হওয়া কিংবা বাসাবাড়ি থেকেও চুরি হয়ে যায় মোবাইল। চুরি কিংবা হারিয়ে যাওয়া মোবাইল উদ্ধার করে রাঙামাটিতে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে প্রশংসা কুড়াচ্ছে জেলা পুলিশের সাইবার ক্রাইম মনিটরিং সেল। খবর সারাবাংলার।

বিশিষ্টজনেরা বলছেন, অপরাধ দমন ছাড়াও পুলিশের যেসব সেবামূলক কার্যক্রম রয়েছে, সেগুলো জনগণকে অবগত করতে প্রচার জরুরি। অনেকের মধ্যে এখনো থানা কিংবা পুলিশভীতি থাকার কারণে সহজে আইনের আশ্রয় কিংবা সেবা নিতে আগ্রহী হন না। পুলিশের সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে মানুষের মধ্যে ভীতি কমাতে অ্যাডভোকেসি গুরুত্বপূর্ণ।

রাঙামাটি জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলায় সাইবার ক্রাইম মনিটরিং সেল গঠনের পর থেকে বিগত ছয় মাসে মোট ১৫১টি মোবাইল উদ্ধার করে হস্তান্তর করেছে সেল। উদ্ধার করা ফোনের বাজারমূল্য প্রায় ৩০ লাখ ২০ হাজার টাকা। তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সর্বশেষ ধাপে উদ্ধার করা ১৫টি মোবাইল গত ২০ জুন হস্তান্তর করা হয়। মূলত মোবাইল চুরি হলে কিংবা হারিয়ে গেলে সংশ্লিষ্ট থানায় বিনা মূল্যে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করার পর জিডির ভিত্তিতে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে মোবাইলের লোকেশন ট্র্যাক করে ব্যবহারকারীর কাছ থেকে ফোনগুলো উদ্ধার করা হয়।

সাইবার ক্রাইম মনিটরিং সেল জেলার বিভিন্ন থানা থেকে পাঠানো জিডির ডিভাইস উদ্ধার করে আসছে। এ ক্ষেত্রে যদি ফোনের সঠিক লোকেশন পাওয়া না যায় কিংবা ফোনটি অনিয়মিতভাবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে, সে ক্ষেত্রে ডিভাইস উদ্ধারেও সময় লেগে থাকে। ভিভাইস ব্যবহৃত না হলে উদ্ধার করাও সম্ভব হয়ে ওঠে না।

মোবাইল হাতে পেয়ে নিহার বিন্দু চাকমা নামের এক কলেজ শিক্ষার্থী বলেন, ‘গত বছরের ১৪ জুন আমার জেঠিমার মোবাইলটি বাসা থেকে চুরি হয়ে যায়। পরে দুজনে থানায় গিয়ে জিডি করি। এরপর বছর শেষেও উদ্ধার না হওয়ায় মনে করেছিলাম ফোনটা আর পাব না। পরে ফোনটা পেয়ে জেঠিমা খুশি হয়েছেন।’

আরেকজন জানান, আগে কোনো ইলেকট্রনিক ডিভাইস হারিয়ে গেলে কিংবা কোনোভাবে খোয়া গেলে ফিরে পাওয়ার সুযোগ ছিল কম। এখন বিশেষ করে মোবাইল ফোন হারিয়ে গেলেও দেশের বিভিন্ন স্থান উদ্ধার করা হচ্ছে। তথ্যপ্রযুক্তির কল্যাণে মানুষ সে সব সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন।

হারিয়ে যাওয়া মোবাইল ফোন হস্তান্তর করছে রাঙামাটি জেলা পুলিশ। ছবি: সংগৃহীত

মোবাইল ফোন উদ্ধার প্রসঙ্গে জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখার উপপরিদর্শক (এসআই) মাসুদ রানা বলেন, ‘নিয়মিত কাজের পাশাপাশি আমরা মানুষের হারিয়ে যাওয়া মোবাইল উদ্ধার করে থাকি। সাইবার ক্রাইম মনিটরিং সেল দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে এ পর্যন্ত ১৫১টি মোবাইল উদ্ধার করে আমরা প্রকৃত মালিকদের কাছে বুঝিয়ে দিতে পেরেছি।’

এসআই মাসুদ বলেন, ‘অনেক সময় ফোন হারানোর কয়েক দিনের মধ্যে উদ্ধার করা যায়, আবার অনেক সময় উদ্ধার হয় না। মূলত মোবাইল ফোন যদি ব্যবহৃত হয়, তাহলে উদ্ধার করা সহজ হয়। ফোন ব্যবহার না হলে সঠিক লোকেশন পাওয়া যায় না। যে কারণে দীর্ঘ সময় লেগে যায়।’

জেলার পুলিশ সুপার মীর আবু তৌহিদ বলেন, ‘আমাদের জেলা পুলিশের সাইবার ক্রাইম মনিটরিং সেল গঠন হয়েছে ছয় মাস আগে। এর মধ্যে আমরা ১৫১টি মোবাইল ফোন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে উদ্ধার করে প্রকৃত মালিকদের কাছে হস্তান্তর করতে পেরেছি। এ ক্ষেত্রে দেখা গেছে, যাদের কাছ থেকে ফোনগুলো উদ্ধার করা হয়ে থাকে, তাদের বেশির ভাগই কারও না কারও থেকে ফোনগুলো কিনে নিয়ে ব্যবহার করে থাকেন।’

চোর চক্রের জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া প্রসঙ্গে এসপি বলেন, ‘থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করার পর মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে কেউ যদি সুনির্দিষ্টভাবে কারও বিরুদ্ধে চুরির অভিযোগ করে থাকেন, সে ক্ষেত্রে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ রয়েছে।’

সাইবার ক্রাইম মনিটরিং সেলের অন্যান্য কার্যক্রম প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মীর আবু তৌহিদ বলেন, ‘কেবল মোবাইল ফোন উদ্ধারের বিষয়টিই নয়, আমরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন গুজব প্রতিরোধ, সাইবার বুলিংসহ অন্যান্য যেসব অপরাধ সংঘটিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে; সেই সব বিষয়ে ভার্চুয়াল মনিটরিং করে থাকি। এছাড়া জেলার বিভিন্ন ইস্যুতেও মনিটরিং করি।’

সাইবার ক্রাইমে জড়িত অপরাধীরা শনাক্ত হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এমন অপরাধগুলো ট্রাডিশনাল অপরাধের মতো হয়ে থাকে না। বিশেষ করে নারীরা অনেকেই সাইবার বুলিংয়ের শিকার হয়ে থাকেন। আবার এ ক্ষেত্রে দেখি অনেকেই ঘটনা নিয়ে থানায় অভিযোগ দিতে চান না।’

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) রাঙামাটির সাধারণ সম্পাদক এম জিসান বখতেয়ার বলেন, ‘পুলিশের সাইবার ক্রাইম মনিটরিং সেল গঠন খুবই প্রশংসনীয়, এটি অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার। সাইবার ক্রাইম সেল রাঙামাটিতে মোবাইল উদ্ধার করে পুলিশের সেবাকে আরও ত্বরান্বিত করেছে। এ ছাড়া ফেসবুকসহ বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে ফেক আইডির মাধ্যমে যারা মানুষের মানসম্মান হানি করছে, তাদের বিষয়েও এগিয়ে আসা দরকার।’