পুলিশি হেফাজতে তিন আসামি। ছবি: বাংলাদেশ পুলিশ

পাবনার চাটমোহরে এক প্রবাসীর স্ত্রী ও ১০ বছর বয়সী সন্তানকে হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন করেছে জেলা গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। এ ঘটনায় জড়িত তিন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে স্বর্ণের চেইন, বালা, কানের দুল ও কানের রিং, রুপার নূপুর ও পায়েল, ৩০ হাজার টাকা এবং হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত কেঁচি, ওড়না ও মাফলার।

বৃহস্পতিবার (১ ফেব্রুয়ারি) এক সংবাদ সম্মেলনে পাবনার পুলিশ সুপার মো. আকবর আলী মুনসী জানান, ফরিদপুর ও গোপালগঞ্জ জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে আসামিদের গ্রেপ্তার করা হয়। হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন তাঁরা।

আসামিরা হলেন পাবনার চাটমোহর থানা এলাকার মো. সাদ্দাম হোসেন (২৬) ও তাঁর ভাই মো. হোসেন আলী (৩৭) এবং রাজবাড়ী সদর থানা এলাকার মো. হুমায়ন মিজী ওরফে হৃদয় (২৮)। তাঁদের মধ্যে সাদ্দামের বিরুদ্ধে হত্যাসহ একাধিক এবং হৃদয়ের বিরুদ্ধে চুরিসহ একাধিক মামলা রয়েছে।

পুলিশ সুপার জানান, পাবনার চাটমোহর থানাধীন দিঘলিয়া গ্রামের বাসিন্দা মো. আব্দুর রশিদ ৭ বছর ধরে মালয়েশিয়ায় থাকেন। তাঁর স্ত্রী লাবণী খাতুন ও ১০ বছর বয়সী সন্তান রিয়াদ বাড়িতে থাকেন। গত ২৬ জানুয়ারি সকালে বাড়ির গোয়ালঘর থেকে লাবণীর লাশ এবং বাড়ির পার্শ্ববর্তী গাছ থেকে ছেলে রিয়াদের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় চাটমোহর থানায় মামলা করা হয়। তদন্তের একপর্যায়ে তথ্য ও প্রযুক্তির সহায়তায় আসামিদের শনাক্ত করে ডিবি। পরে অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়।

আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে পুলিশ সুপার জানান, সম্প্রতি বাড়ি করার জন্য ২৫ হাজার ইট কেনেন এবং ব্যাংক থেকে টাকা তোলেন লাবণী। বিষয়টি লক্ষ করেন একই গ্রামের বাসিন্দা আসামি হোসেন আলী। তাই হোসেন ধারণা করেন, লাবণীর কাছে টাকা ও স্বর্ণালংকার থাকতে পারে। পরে ছোট ভাই সাদ্দামকে এই খবর জানান হোসেন। সাদ্দাম ফরিদপুরে শ্বশুরবাড়িতে থাকেন এবং পেশায় একজন দুর্ধর্ষ ছিনতাইকারী। খবর পেয়ে সহযোগী হৃদয়কে নিয়ে গত ২৫ জানুয়ারি পাবনায় আসেন সাদ্দাম।

সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন পাবনার পুলিশ সুপার মো. আকবর আলী মুনসী। ছবি: বাংলাদেশ পুলিশ

তিনি আরও জানান, সাদ্দাম ও হৃদয় পাবনায় পৌঁছার পর ভুক্তভোগীর অবস্থান সম্পর্কে খোঁজ নিতে থাকেন আসামি হোসেন। ২৫ জানুয়ারি দিবাগত রাতে টিন কেটে লাবণীর ঘরে ঢোকার চেষ্টা করেন সাদ্দাম ও হৃদয়। শব্দ পেয়ে ছুটে আসেন লাবণী। কিন্তু দরজা খোলার সঙ্গে সঙ্গে লাবণীর গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করেন তাঁরা। এদিকে লাবণীর ১০ বছর বয়সী ছেলে রিয়াদ ঘুম থেকে উঠে চিৎকার শুরু করে। এ সময় রিয়াদের গলায় মাফলার পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করে লাশ গাছে ঝুলিয়া রাখেন আসামিরা। এরপর স্বর্ণ ও রূপার অলংকার নিয়ে সেখান থেকে চলে আসেন। গোপালগঞ্জ যাওয়ার আগে আসামি হোসেন আলীকে কিছু স্বর্ণালংকার দিয়ে যান সাদ্দাম ও হৃদয়।

পুলিশ সুপার জানান, গ্রেপ্তার আসামিদের বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।