নর্ডস্ট্রিম ওয়ান পাইপলাইনের মাধ্যমে রাশিয়া থেকে গ্যাস আসে জার্মানিতে। ছবি: সংগৃহীত

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে বিশ্বজুড়ে দেখা দিয়েছে মন্দা। খাদ্যপণ্য ও জ্বালানি সরবরাহ ব্যবস্থা খেয়েছে চরম ধাক্কা। এতে সারা বিশ্বেই সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়ছে। এর মধ্যেই খবর এসেছে, প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণে গ্যাস পুড়িয়ে ফেলছে রাশিয়া, যার আর্থিক মূল্য প্রায় এক কোটি মার্কিন ডলার। খবর বিবিসি বাংলার।

বিবিসি বাংলা জানায়, কৃত্রিম উপগ্রহ থেকে তোলা ছবিতে দেখা গেছে, রাশিয়া তাদের একটি গ্যাস স্থাপনায় প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণে প্রাকৃতিক গ্যাস পুড়িয়ে ফেলছে। রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় জ্বালানি প্রতিষ্ঠান গ্যাজপ্রমের নতুন এই স্থাপনা ফিনল্যান্ড সীমান্তের কাছে, সেন্ট পিটার্সবার্গের উত্তর-পশ্চিমে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই গ্যাস এর আগে নর্ডস্ট্রিম ওয়ান পাইপলাইন দিয়ে জার্মানিতে রপ্তানি করা হতো।

জুলাই মাসের মাঝামাঝির পর থেকে রাশিয়া এই পাইপলাইন দিয়ে গ্যাস সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে। মস্কো বলছে, কারিগরি ত্রুটির কারণে গ্যাসের সরবরাহ কমে গেছে। কিন্তু জার্মানি বলছে, ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর পর পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়ার কাছ থেকে তেল ও গ্যাস আমদানি কমিয়ে দেওয়ায় রাজনৈতিক কারণেই মস্কো গ্যাসের সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে। এর জের ধরে ইউরোপজুড়ে জ্বালানির মূল্য নজিরবিহীন হারে বেড়ে গেছে।

যুক্তরাজ্যে জার্মানির রাষ্ট্রদূত বিবিসিকে বলেন, কোথাও গ্যাস বিক্রি করতে না পারায় রাশিয়া এখন এই গ্যাস পুড়িয়ে ফেলছে।

জ্বালানিসংক্রান্ত একটি কোম্পানি রাইস্টাড এনার্জি বলছে, পোর্তোভায়ার ওই এলএনজি স্থাপনায় প্রতিদিন ৪০ লাখ ঘনমিটারের বেশি গ্যাস পোড়ানো হচ্ছে। নর্ডস্ট্রিম ওয়ান পাইপলাইন যেখান থেকে শুরু হয়েছে, পোর্তোভায়ার এই স্থাপনা তার খুব কাছে।

জুন মাসের পর গবেষকেরা দেখতে পান, ওই স্থাপনা থেকে বেরিয়ে আসা তাপ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়ে গেছে। ধারণা করা হয়, ওই স্থাপনায় প্রাকৃতিক গ্যাস পুড়িয়ে ফেলার কারণে সেখানে এই তাপ উৎপন্ন হচ্ছে।

যেসব কেন্দ্রে গ্যাস পরিশোধন করা হয়, সেখানে গ্যাস পুড়িয়ে ফেলা একটি স্বাভাবিক ঘটনা। সাধারণত কারিগরি ও নিরাপত্তার কারণেই তা করা হয়ে থাকে। কিন্তু এই স্থাপনায় যে পরিমাণে গ্যাস পোড়ানো হচ্ছে, তা বিশেষজ্ঞদের বিস্মিত করেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের মায়ামি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞ ড. জেসিকা ম্যাকার্টি বলেন, ‘কোনো এলএনজি কারখানায় এত গ্যাস কখনো পুড়তে দেখিনি। জুন মাসের শুরুতে আমরা প্রচুর গ্যাস জ্বলতে দেখলাম। কিন্তু সেটা আর বন্ধ হলো না।’

জ্বলে ওঠা গ্যাস সামলাতে কাজ করে এ রকম একটি কোম্পানি ক্যাপটেরিওর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মার্ক ড্যাভিস বলেছেন, রাশিয়ার ওই স্থাপনায় যে গ্যাস জ্বলছে, সেটা কোনো দুর্ঘটনার কারণে ঘটেনি। তিনি মনে করেন, ইচ্ছা করেই এই গ্যাস পোড়ানো হচ্ছে। পরিচালনাকারীরা সহজেই কোনো স্থাপনা বন্ধ করে দিতে চান না। তাঁরা মনে করেন, এটি পুনরায় চালু করা কারিগরি দিক থেকে কঠিন কিংবা ব্যয়বহুল হতে পারে। সম্ভবত এখানেও তাই হয়েছে।’

এ বিষয়ে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় জ্বালানি প্রতিষ্ঠান গ্যাজপ্রমের পক্ষ থেকে কোনো মন্তব্য করা হয়নি।