গোলাবর্ষণে ধসে পড়েছে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের বহুতল ভবনের একাংশ। ছবি: এএফপি

ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে প্রবেশ করেছে রুশ সেনারা। সেখানে সংঘাত চলার প্রেক্ষাপটে শুক্রবার ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির আলোচনায় বসার আহ্বানে সাড়া দিয়েছে রাশিয়া। তবে একই সঙ্গে ইউক্রেনের সেনাবাহিনীকে জেলেনস্কির সরকার উত্খাতের আহ্বান জানিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।

পাশাপাশি বৃহৎ শক্তিরা কেউ তার পাশে নেই বলে জেলেনস্কির আক্ষেপের পর গতকাল তাঁর সঙ্গে ৪০ মিনিট কথা বলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।

এ আলাপচারিতায় তাঁরা ‘প্রতিরক্ষা সহায়তা’ ও রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা নিয়ে কথা বলেন। আলোচনার পর টুইট করে জেলেনস্কি বলেছেন, তাঁরা নিষেধাজ্ঞা জোরদার, সুনির্দিষ্ট প্রতিরক্ষা সহযোগিতা ও যুদ্ধবিরোধী জোট গঠন নিয়ে কথা বলেন। খবর এএফপি, রয়টার্স, বিবিসির।

আলোচনার বিষয়ে দুই পক্ষের ঘোষিত আগ্রহের পাশাপাশি আগ্রাসন করা রুশ সেনাকে মোকাবেলায় নাগরিকদের মধ্যে মেশিনগানসহ ১৮ হাজার অস্ত্র বিতরণ করছে ইউক্রেন সরকার। তাদের আহ্বান জানানো হয়েছে, মলোটভ ককটেল বানিয়ে রুশ সেনাদের প্রতিহত করার জন্যও।

এর আগে মিত্র যুক্তরাষ্ট্রকে ইঙ্গিত করে ইউক্রেনের এমন পরিস্থিতি ‘বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী দেশ কেবল দূর থেকে চেয়ে দেখছে’ এমন আক্ষেপ করে সহায়তা চেয়েছিলেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি।

ইউক্রেনে গত বৃহস্পতিবার ভোরে সর্বাত্মক হামলা শুরু করে রাশিয়া। রাজধানী কিয়েভসহ বড় শহরগুলোয় প্রায় একযোগে শুরু করা হয় হামলা। ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির মুখে ইউক্রেনও প্রতিরোধ যুদ্ধ চালাতে থাকে। যুদ্ধের প্রথম দিনই উভয় পক্ষের মিলিয়ে শতাধিক প্রাণহানির খবর মেলে।

পরদিন শুক্রবারই ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে ঢুকে পড়ে রুশ বাহিনী। দুই বাহিনীর গতকালের লড়াইয়ে প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতির বিশদ চিত্র তাত্ক্ষণিকভাবে পাওয়া যায়নি। কাল রাতেও (বাংলাদেশ সময় রাত ১টার কিছু আগে) নতুন করে গোলা ও বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া যায়।

ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় রাজধানী কিয়েভের উত্তর অংশে রুশ সেনাদের ট্যাংক দেখা যাওয়ার পর মলোটভ ককটেল (পেট্রল বোমা জাতীয় অস্ত্র) তৈরি করে তাদের ‘ঘায়েল করার’ জন্য ওই এলাকাবাসীর প্রতি আহ্বান জানানো হয়। এমনকি রাশিয়াকে মোকাবেলা করতে দেশের হ্যাকারদেরও সাহায্য চেয়েছে সরকার।

যুদ্ধের দুই দিনে রাশিয়ার ৪৫০ ও ইউক্রেনের ১৩৭ সেনা নিহতের তথ্য দিয়েছে সংবাদমাধ্যম বিবিসি। আর আলজাজিরা জানায়, এক হাজার রুশ সেনা নিহত হয়েছে বলে দাবি করেছে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।

দুই বাহিনীর লড়াইয়ের মধ্যে কিয়েভ পতনের আশঙ্কা নিয়ে মন্তব্য করছেন পর্যবেক্ষক ও বিশ্লেষকরা। মার্কিন গোয়েন্দাদের বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যম সিএনএন বলেছে, যুদ্ধ শুরুর সর্বোচ্চ চার দিনের মধ্যে কিয়েভের পতন হতে পারে। মূলত রুশ হামলা শুরুর আগেই মার্কিন গোয়েন্দারা সার্বিক বিষয়ে ধারণা নেন। এর ভিত্তিতে তাঁরা কিয়েভের পতনের সম্ভাব্য সময় সম্পর্কে জানান।

পশ্চিমা দেশগুলোর গোয়েন্দাদের ধারণা, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির পতন ঘটিয়ে মস্কোপন্থী কোনো সরকারকে বসিয়ে হামলার ইতি টানবেন পুতিন।

ব্রিটিশ সরকারি সূত্রে বলা হয়েছে, রুশ সেনারা কিয়েভে ঢুকে পড়লেও গতকাল পর্যন্ত বাহিনীর বেশির ভাগ সেনাই ছিলেন কিয়েভ থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরে।

রাশিয়া অবশ্য বলছে, ইউক্রেন দখল করা তার উদ্দেশ্য নয়। ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে বছরের পর বছর ধরে সাধারণ মানুষের ওপর যে ‘নিপীড়ন ও গণহত্যা চালানো হয়েছে’ তা ঠেকাতেই এই অভিযান। সেই অবস্থান ধরে রেখে গতকালের এক সংবাদ সম্মেলনে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ বলেন, পুরো ইউক্রেনের দখল নেওয়ার অভিপ্রায় রাশিয়ার নেই। রাশিয়া কেবল ইউক্রেনকে সামরিকভাবে নিরস্ত্র করতে চায়। তার বক্তব্যের আগেও একবার ক্রেমলিন জানায়, ইউক্রেনের সেনারা আত্মসমর্পণ করলে সঙ্গে সঙ্গে তারা আলোচনায় বসতে প্রস্তুত।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কিও আলোচনায় বসতে চান। গতকাল জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি সরাসরি রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে আলোচনায় বসার আগ্রহ প্রকাশ করেন। রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউক্রেনকে একাই লড়তে হচ্ছে এবং ইউক্রেনের সেনারা অসাধারণ লড়াই করছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
এর মধ্যে সর্বশেষ ভাষণে রুশ রাষ্ট্রপ্রধান বলছেন অন্য কথা। গতকাল ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর উদ্দেশে টেলিভিশনে দেওয়া ভাষণে তিনি বলেন, ‘ক্ষমতা নিজেদের হাতে তুলে নিন। ’ কিয়েভের বর্তমান সরকারকে ‘মাদকাসক্ত’ আখ্যা দিয়ে সেখানকার সেনাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘মনে হচ্ছে, এই মাদকাসক্ত আর নব্য নাৎসি গ্যাংয়ের পরিবর্তে আপনাদের সঙ্গে ঐকমত্যে পৌঁছানো তুলনামূলক সহজ হবে।

এর মধ্যে জেলেনস্কির আহ্বানে সাড়া দিয়ে পুতিন আলোচনায় রাজি হয়েছেন বলে জানিয়েছেন ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ। এ মুখপাত্র জানান, আলোচনা হতে পারে বেলারুশের রাজধানী মিনস্কে এবং সেখানে পাঠানো হতে পারে রাশিয়ার উচ্চ পর্যায়ের এক প্রতিনিধি দল। এ দলে থাকতে পারেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের দপ্তর এবং প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্র দপ্তরের কর্মকর্তারা।