মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ পুলিশ দেশের অভ্যন্তরীণ শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষা, অপরাধ দমন এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় নিরলসভাবে কাজ করে চলেছে। তিনি বলেন, ‘জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ দমন, মাদক নির্মূল এবং চোরাচালান দমনে পুলিশের ভূমিকা বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল করেছে। এ ছাড়া জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে বাংলাদেশ পুলিশের সাহসী সদস্যগণ উল্লেখযোগ্য প্রশংসনীয় অবদান রেখে চলেছে।’

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পুলিশ সপ্তাহ ২০২২ উপলক্ষে গতকাল শনিবার দেওয়া এক বাণীতে এসব কথা বলেন। তিনি এ উপলক্ষে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর সব সদস্যকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান। তথ্য বিবরণীর বরাত দিয়ে বাসসের খবরে এ কথা জানানো হয়।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘সরকার গঠনের পর বাংলাদেশ পুলিশের জনবল ধাপে ধাপে ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। পেশাগত উৎকর্ষ সাধনে পুলিশের পদোন্নতি ও পদমর্যাদা বৃদ্ধিতে আমাদের সরকার কাজ করে যাচ্ছে। আমরা বাংলাদেশ পুলিশে নতুন পদ সৃষ্টির মাধ্যমে পুলিশ কর্মকর্তাদের পদোন্নতি প্রাপ্তির জটিলতা নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। একই সাথে গ্রেড-১ ও গ্রেড-২ পদের সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়েছে। তা ছাড়া শিল্পাঞ্চলের জন্য ২০১০ সালে শিল্প পুলিশ ইউনিট ও পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য ২০১৩ সালে ট্যুরিস্ট পুলিশ ইউনিট গঠন করি।’
সরকার থানা, ফাঁড়ি তদন্ত কেন্দ্র, ব্যারাক, আবাসিক ভবন নির্মাণের জন্য জমি বরাদ্দসহ কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করছে উল্লেখ করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেন, পুলিশ সদস্যদের চিকিৎসাসেবার লক্ষ্যে ১০ তলা বিল্ডিং করে রাজারবাগে পুলিশ হাসপাতাল নির্মাণ করা হয়েছে। সেখানে পুলিশ সদস্যরা চিকিৎসাসেবা পাচ্ছেন। প্রতি বিভাগে একটা করে হাসপাতাল নির্মাণ করা হবে। আকাশপথে সক্ষমতা অর্জনের মাধ্যমে পুলিশের গতিশীলতা ত্রিমাত্রিক পর্যায়ে উন্নীতকরণের জন্য ইতিমধ্যে রাশিয়া থেকে দুটি হেলিকপ্টার ক্রয়ের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। পুলিশ বাহিনীকে একটি আধুনিক, যুগোপযোগী, দক্ষ ও জনবান্ধব বাহিনীতে রূপান্তর করার লক্ষ্যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। ফলে পুলিশ সদস্যদের কার্যক্রমে এসেছে গতিশীলতা এবং কর্মচাঞ্চল্য।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণের সেবা করাই পুলিশ বাহিনীর প্রত্যেক সদস্যের পবিত্র দায়িত্ব। সেখানে কোনো ধরনের অনুরাগ বা বিরাগের সুযোগ নেই। দায়িত্ব অবহেলা বা নৈতিক পদস্খলন অমার্জনীয় অপরাধ। তিনি আশা করেন, বাংলাদেশ পুলিশের সদস্যগণ মানবিক মূল্যবোধ সমুন্নত রেখে দক্ষতা, পেশাদারত্ব ও নিরপেক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করবেন এবং জাতির পিতার স্বপ্নের ‘সোনার বাংলাদেশ’বিনির্মাণে সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করবেন।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে সাড়া দিয়ে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাজারবাগ পুলিশ লাইনসের সদস্যরা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। এর ফলে সূচিত হয়েছিল মহান স্বাধীনতাযুদ্ধের প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধযুদ্ধ। অকুতোভয় পুলিশ সদস্যদের মধ্যে বেশ কয়েকজন সেদিন দেশমাতৃকার জন্য আত্মাহুতি দিয়েছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পুলিশ বাহিনীর প্রায় ১৪ হাজার বাঙালি পুলিশ সদস্য কর্মস্থল ত্যাগ করে সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। এদের মধ্যে ১ হাজার ১০০ জনের বেশি পুলিশ সদস্য শহীদ হন।

সাম্প্রতিক সময়ে কোভিড-১৯ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে জনগণের সেবায় ১০৬ জন নির্ভীক পুলিশ সদস্য জীবন উৎসর্গ করেছেন উল্লেখ করে তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধে ও বিভিন্ন সময়ে দেশের জন্য আত্মোৎসর্গকারী পুলিশ সদস্য ও তাদের পরিবারবর্গের প্রতি গভীর সমবেদনা ও শ্রদ্ধা জানান। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ‘পুলিশ সপ্তাহ ২০২২’-র সকল কর্মসূচির সার্বিক সাফল্য কামনা করেন।