বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস এসোসিয়েশনের লোগো। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর বিরুদ্ধে আপত্তিকর বক্তব্যের প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার বিবৃতি দিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস এসোসিয়েশন।

বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন বাংলাদেশ পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের অতিরিক্ত আইজিপি ও বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস এসোসিয়েশনের সভাপতি মো. মনিরুল ইসলাম বিপিএম (বার), পিপিএম (বার) এবং ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গুলশান বিভাগের উপকমিশনার মো. আসাদুজ্জামান পিপিএম (বার)।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘গত ০৩ ডিসেম্বর ২০২২ খ্রি. রাজশাহী নগরীর একটি রেস্তোরাঁয় সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় একটি রাজনৈতিক দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য জনাব ইকবাল হাসান মাহমুদ ওরফে টুকু পুলিশের বিরুদ্ধে যে ভিত্তিহীন ও অনাকাঙ্ক্ষিত অভিযোগ উত্থাপন করেছেন, সে বিষয়ে বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস এসোসিয়েশনের দৃষ্টি আকর্ষিত হয়েছে। তাঁর মন্তব্যে বাংলাদেশ পুলিশের প্রতিটি সদস্য অত্যন্ত বিব্রত ও মর্মাহত হয়েছে। বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস এসোসিয়েশন তাঁর এহেন বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছে।’

এতে বলা হয়, “মহান বিজয়ের গৌরবময় মাসে উল্লিখিত মতবিনিময় সভায় জনাব ইকবাল হাসান মাহমুদ ওরফে টুকু বলেন, ‘আজকে প্রশাসন দলীয়করণ হয়েছে। এই সরকার প্রতিটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য জনগণের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। পাকিস্তান আর্মি দেশ শাসন করার জন্য কিছু অক্সিলিয়ারি (সহযোগী) ফোর্স তৈরি করেছিল। রাজাকার, আলবদর এদের তৈরি করেছিল। এখন সেই অক্সিলিয়ারি ফোর্স হয়ে গেছে এই পুলিশ, র্যাব, বিজিবি। সহজ ভাষায়, তারা রাজাকার হয়ে গেছে। বর্তমানের বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে নব্য রাজাকার হচ্ছে প্রশাসনের এই লাঠিয়াল বাহিনী।’ তাঁর এই বক্তব্য বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। অতীতের বিভিন্ন সময়ে সরকার পরিচালনার দায়িত্ব পালনকারী একটি দলের একজন দায়িত্বশীল নেতার কাছ থেকে পুলিশের মতো দেশপ্রেমিক ও পেশাদার বাহিনী সম্পর্কে এই ধরনের মন্তব্য অনাকাঙ্ক্ষিত, অপ্রত্যাশিত ও অনভিপ্রেত। তিনি বাংলাদেশ পুলিশকে ‘নব্য রাজাকার’ বলায় দুই লক্ষাধিক পুলিশ সদস্য অত্যন্ত মর্মাহত হয়েছে।”

পুলিশের অবদান তুলে ধরে বিবৃতিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশ পুলিশের অকুতোভয় বীর সদস্যরা ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। প্রায় চৌদ্দ হাজার পুলিশ সদস্যের সম্মুখ সমরে অংশগ্রহণ ও প্রায় সহস্রাধিক পুলিশ সদস্যের আত্মত্যাগ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে আছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত ও গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসের উত্তরাধিকারী বাংলাদেশ পুলিশ সেবার সুমহান ব্রত নিয়ে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে।’

প্রতিটি সংকটে পুলিশের ভূমিকা তুলে ধরে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, ‘দেশের প্রতিটি সংকটে মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিতে নির্ভীক পুলিশ সদস্যরা দেশপ্রেমের দৃপ্ত শপথে বলীয়ান হয়ে কাজ করছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রেখে দেশের চলমান উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে বাংলাদেশ পুলিশ গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। দেশে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ ও উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে পুলিশ সদস্যরা সর্বোচ্চ পেশাদারত্ব ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছে। অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বাংলাদেশ আজ যেকোনো বিবেচনায় নিরাপদ। ফলে বিদেশি বিনিয়োগসহ সকল বিনিয়োগকারী বাংলাদেশকে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আদর্শ স্থান হিসেবে বিবেচনা করছে। অতিমারি করোনার সময়েও বাংলাদেশ পুলিশের সদস্যরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে করোনা আক্রান্ত ও অসুস্থ ব্যক্তির সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা, করোনায় মৃত্যুবরণকারী ব্যক্তির সৎকার করা, দুস্থ ও অসহায়দের খাদ্য সামগ্রী বিতরণসহ মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে প্রচলিত পেশাগত দায়িত্বের পাশাপাশি মানবতার অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।’

জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পুলিশের ভূমিকা তুলে ধরে বিবৃতিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশ পুলিশ বিশ্বের যুদ্ধবিধ্বস্ত ও সংঘাতপূর্ণ বিভিন্ন দেশে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে আন্তরিকতা, নিষ্ঠা ও পেশাদারত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে বিশ্ব শান্তিরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। বর্তমানে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ পুলিশ মোট পুলিশ সদস্য প্রেরণে ৪র্থ অবস্থানে এবং নারী পুলিশ সদস্য প্রেরণে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে। জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক ঘোষিত শূন্য সহনশীলতা নীতির কঠোর প্রয়োগ ও সফল বাস্তবায়নেও বাংলাদেশ পুলিশের ঈর্ষণীয় সাফল্য রয়েছে। জঙ্গিবাদ দমনে বাংলাদেশ পুলিশ সারা বিশ্বেই ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছে এবং বিশ্বের কাছে রোল মডেল হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।’

এতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধকারী এবং গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসের উত্তরাধিকারী বাংলাদেশ পুলিশ সম্পর্কে এহেন আপত্তিকর মন্তব্যে দেশবাসী হতবাক ও বিস্মিত হয়েছে। ভবিষ্যতে তিনি এ ধরনের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বক্তব্য প্রদান হতে বিরত থাকবেন বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস এসোসিয়েশন এটাই প্রত্যাশা করে।’

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘বাংলাদেশ পুলিশ সর্বদা রাষ্ট্রের কল্যাণে ও জনগণের জান-মালের নিরাপত্তা বিধানে স্থিতিশীল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বজায় রাখতে পেশাদারত্বের সঙ্গে কাজ করে। দেশের শান্তিপ্রিয় ও উন্নয়নকামী মানুষ সবসময় পুলিশের পাশে ছিল, আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। শান্তিপ্রিয় সাধারণ মানুষ এ ধরনের বিভ্রান্তিকর বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে আইনসংগত সকল কাজে পুলিশের প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন বজায় রাখবে বলে বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস এসোসিয়েশন দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে।’