পুলিশের উদ্যোগে মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যেই যানজটমুক্ত হয়েছে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের গাজীপুর এলাকায় যানজট যেন প্রতিদিনের চিত্র ছিল। মহাসড়কের ওই অংশটুকু পাড়ি দিতেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা চলে যেত। তবে পুলিশের সপ্তাহব্যাপী অভিযানে বদলে গেছে এই মহাসড়কের চিত্র। সড়কে নেই কোনো ইজিবাইক, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। যত্রযত্র থামছে না মহাসড়কে চলাচলকারী যানবাহন। বদলে গেছে সড়কের ফুটপাতের দৃশ্যও। সেখান দিয়ে নির্বিঘ্নে হেঁটে যেত পারছেন পথচারীরা।

পুলিশের মাত্র এক সপ্তাহের অভিযানে সম্ভব হয়েছে পরিস্থিতির এই আমূল পরিবর্তন। এ বিষয়ে অনেকের কাছেই জানতে চাওয়া হয়। তাঁদের মন্তব্য ছিল, পুলিশ চাইলে অনেক কিছুই পারে। যেমনটা এখন পারছে।

গত বৃহস্পতিবার ময়মনসিংহ থেকে ঢাকার মহাখালী বাসস্ট্যান্ডে আসা শাহীনুর রহমান বলেন, ‘সকাল সাড়ে ১০টায় ময়মনসিংহ থেকে রওনা দিয়ে ঢাকায় এসেছি মাত্র ৩ ঘণ্টায়। অথচ কয়েক দিন আগেও কেবল গাজীপুর চৌরাস্তা থেকে আবদুল্লাহপুর পর্যন্ত আসতে প্রায় ৩ ঘণ্টা সময় লাগত।’

গাজীপুরের মাওনা থেকে এয়ারপোর্টে আসা পল্লব আহমেদ বলেন, গাজীপুর চৌরাস্তা থেকে আবদুল্লাহপুর পর্যন্ত এসেছি মাত্র ৩০ মিনিটে। এটা অনেকটাই স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে।

জানা গেছে, গাজীপুর মহানগরের মোট আয়তন ৩৩০ বর্গকিলোমিটার, জনসংখ্যা প্রায় ৬৫ লাখ। প্রতিদিন সিএনজিচালিত অটোরিকশা, মোটরসাইকেল, বাস, ট্রাকসহ ৫০ থেকে ৬০ হাজার বিভিন্ন ধরনের যানবাহন চলাচল করে। এর মধ্যে রয়েছে ৫১টি জেলার পরিবহন। বিশেষ করে গাজীপুর এলাকায় ২ হাজার ৫০০টি শিল্প-কারখানার অবস্থান। এসব কারখানায় নিয়মিত শ্রমিক পরিবহন এবং মালামাল পরিবহনের জন্য যানবাহনের বড় একটি অংশ চলাচল করে। মহাসড়ক-সংলগ্ন কারখানাগুলোর পণ্য সড়কের ওপরই লোড-আনলোড এবং ট্রাক-কাভার্ড পার্কিং যানজটের অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (জিএমপি)।

১৩ জুলাই যোগদানের পর থেকে গাজীপুর মহানগর পুলিশ (জিএমপি) কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলাম দফায় দফায় যানজট নিরসনের বিষয়ে পরিবহনশ্রমিক নেতা, সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র, কাউন্সিলরদের সঙ্গে বৈঠক করেন। তাঁদের মতামত নেন। সর্বশেষ পুলিশকে সর্বাত্মক সহায়তার আশ্বাস দিয়েই বৈঠক শেষ হয়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে জিএমপির কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলাম বলেন, সিটি করপোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেছি, তাদের সহযোগিতা চেয়েছি। ইতিমধ্যে নগরবাসী এবং জিএমপি স্পর্শ করে চলাচলকারী যানবাহনের যাত্রীরা সড়ক-মহাসড়কের পরিবর্তন দেখেছে। আমাদের চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।

গাজীপুর জজকোর্ট-সংলগ্ন আবাসিক এলাকার কয়েকজন বলছিলেন, গাজীপুরের আঞ্চলিক সড়ক থেকে মহাসড়ক, সর্বত্রই দাপিয়ে বেড়াচ্ছিল অর্ধলক্ষাধিক অবৈধ অটোরিকশা ও ইজিবাইক। ট্রাফিক আইন মেনে না চলা এসব যানবাহনের কারণে প্রতিদিনই দুর্ঘটনা ঘটছে। এসব অবৈধ যানের বিরুদ্ধে এত দিন কেউ ব্যবস্থা নেয়নি। তবে পুলিশি ভূমিকার কারণেই এখন মহাসড়ক এসব যানমুক্ত হয়েছে।

জিএমপির উপকমিশনার (ট্রাফিক) আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, জিএমপি কমিশনারের সুস্পষ্ট নির্দেশনা হলো, মহাসড়কে অবৈধ যানবাহন চলতে পারবে না। প্রাথমিকভাবে টঙ্গী ব্রিজ থেকে চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত সাঁড়াশি অভিযান শুরু হয়েছে। ১৪ থেকে ২০ জুলাই পর্যন্ত ১ হাজার ১০০ ইজিবাইক জব্দ করা হয়েছে। হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী নিষিদ্ধ কোনো যান আমরা মহাসড়কে চলতে দেব না। সড়ক পরিবহন আইন অমান্য করা ২৫৪টি যানবাহনে এবং প্রয়োজনীয় কাগজ দেখাতে না পারা ৩৩টি গাড়ির বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। পাশাপাশি ফুটপাত দখল করে দোকানপাট, দোকানের সামনে ভাড়া দেওয়া এবং মালামাল রাখলে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।