সাম্প্রতিক সময়ে আত্মহত্যা একটি সামাজিক ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘোষণা দিয়ে বা লাইভে এসে আত্মহত্যা করার প্রবণতা বেড়েই চলছে। তবে এ ধরনের কর্মকাণ্ড ঠেকাতে তৎপর বাংলাদেশ পুলিশ। গত তিন মাসে সারা দেশের ৩০ জনের আত্মহত্যার চেষ্টা ঠেকিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

সিআইডি বলছে, বাংলাদেশের নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে ফেসবুক কিংবা টিকটকে লাইভে এসে কেউ আত্মহত্যার চেষ্টা করলে, আত্মহত্যা করতে পারে এমন কোনো শব্দ লিখলে এবং এসব সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে কেউ এমন ভাবভঙ্গি ও আচরণ প্রকাশ করলে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ স্বয়ংক্রিয়ভাবে ওই ব্যবহারকারীদের শনাক্ত করে সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টারকে তাৎক্ষণিকভাবে জানায়। ফেসবুক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স) ব্যবহার করে এই কাজগুলো করে থাকে।

প্রেমে ব্যর্থ হয়ে, পারিবারিক কলহের জেরে, ব্যবসায় লোকসানসহ নানা কারণে দেশে বছরে ১০ হাজার মানুষ আত্মহত্যা করেন। আগে চিরকুট লিখে আত্মহত্যা করতেন, এখন অনেকে আত্মত্যার আগে ফেসবুক লাইভে এসে কথা বলেন বা হতাশা নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট দিয়ে যান। বিষয়টি জানতে পারলে এবং সাড়া দেওয়ার মতো পর্যাপ্ত সময় পেলে এমন আত্মহত্যা সহজেই ঠেকানো যায় বলে মনে করছে সিআইডি।

সিআইডির একটি সূত্র বলছে, কয়েক মাস আগে সিআইডিতে আত্মহত্যা প্রতিরোধবিষয়ক একটি সেমিনার হয়। সেখানে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন ও দেশের মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা আত্মহত্যা প্রতিরোধে নানা মতামত তুলে ধরেন। সেখানে অনেকগুলো আইডিয়া বা ধারণা তুলে ধরেন আলোচকরা। আত্মহত্যা প্রতিরোধে একটি ‘সুইসাইড প্রিভেনশন কল সেন্টার’ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়। এ ধরনের একটি কল সেন্টার থাকলে আত্মহত্যা থেকে অনেককেই রক্ষা করা যাবে বলে মনে করেন তাঁরা।

সিআইডি জানায়, তিন বছরের প্রেমের পর বিয়ে। কিন্তু সাত মাসও টেকেনি সেই সংসার। পরে হতাশায় আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেন নাটোরের এক ব্যবসায়ী। বিষের বোতল হাতে নিয়ে ফেসবুক লাইভে আসেন তিনি। বিষয়টি ফেসবুকের সিঙ্গাপুর অফিস থেকে তাৎক্ষণিকভাবে জানানো হয়, পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি)। ফেসবুকের বার্তা পেয়ে ১৫ মিনিটের মধ্যে ওই তরুণের বাড়িতে গিয়ে তাঁকে উদ্ধার করে পুলিশ।

ভুয়া ফেসবুক আইডি খুলে সেখানে প্রেমিকার ব্যক্তিগত ছবি ছেড়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে ব্ল্যাকমেল করে আসছিলেন প্রেমিক। বিষয়টি জানাজানির পর বরিশালের ওই তরুণী আত্মত্যার চেষ্টা করেন। ফেসবুকের তথ্য পেয়ে তাঁকে উদ্ধার করা হয়। গ্রেপ্তার করা হয় অপরাধীকে।

সিআইডি বলছে, ফেসবুকের প্রতিটি তথ্যই আমলে নিয়ে ব্যবস্থা নেয় তারা। আত্মহত্যা থেকে বাঁচানোর পর ওই ব্যক্তি যাতে স্বাভাবিকভাবে জীবন যাপন করতে পারেন, সে জন্য মানসিক সহায়তা এবং আত্মহত্যা নিয়ে কাজ করে এমন এনজিওগুলোকে যুক্ত করা হয়। এনজিওগুলো পরিবারগুলোর সঙ্গে মতবিনিময় করে নিয়মিত খোঁজ রাখে, যাতে তারা আর পরবর্তী সময়ে আত্মঘাতী না হয়।

সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টারের অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক কামরুল আহসান বলেন, ফেসবুক যে প্রক্রিয়ার তথ্য সরবরাহ করে, তাতে ওই ব্যক্তির পরিচয় গোপন রাখা হয়। স্বাভাবিক জীবনে ফিরে তাঁরা যেন এ ঘটনার জন্য বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখোমুখি না হন, সে জন্য এটা করা হয়।