রাজারবাগে বাংলাদেশ পুলিশ অডিটরিয়ামে বক্তব্য দিচ্ছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক বিপিএম (বার), পিপিএম। ছবি : বাংলাদেশ পুলিশ

পুলিশি সেবার মান নিশ্চিত করতে থানা ও ট্রাফিক পুলিশের কাজে স্বচ্ছতা বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক বিপিএম (বার), পিপিএম। তিনি বলেন, ভালো কাজ করলে আপনাদের পাশে থাকব কিন্তু কোনো ধরনের অপকর্মে জড়িত হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নিজের কাজের মাধ্যমেই জনগণের প্রশংসা অর্জন করতে হবে। পেশাদারত্বের সঙ্গে কাজ করে নগরবাসীর জন্য কাঙ্ক্ষিত সেবার মান আরও বাড়াতে হবে।

এক পুলিশ সদস্যের হাতে পুরস্কার তুলে দিচ্ছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক বিপিএম (বার), পিপিএম । ছবি : বাংলাদেশ পুলিশ

রোববার (২০ নভেম্বর) সকালে রাজারবাগে বাংলাদেশ পুলিশ অডিটরিয়ামে অক্টোবর মাসের মাসিক অপরাধ পর্যালোচনাসভায় তিনি এসব কথা বলেন।
এক নারী পুলিশ সদস্যের হাতে পুরস্কার তুলে দিচ্ছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক বিপিএম (বার), পিপিএম । ছবি : বাংলাদেশ পুলিশ

ডিএমপি কমিশনার বলেন, মামলা তদন্তের ক্ষেত্রে ঘটনাস্থল সংরক্ষণ ও আলামত সংগ্রহ করতে হবে। পেশাদার অপরাধীরা যাতে বারবার অপরাধ করতে না পারে, সে জন্য নজরদারি বাড়াতে হবে। সেবাপ্রার্থী কিংবা কোনো নির্দোষ ব্যক্তি যাতে পুলিশি হয়রানির শিকার না হন, সে জন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের তদারকি বাড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।
সভায় উপস্থিত ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ । ছবি : বাংলাদেশ পুলিশ

তিনি আরও বলেন, ঢাকা মহানগরে যাতে কেউ কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটাতে না পারে, সে জন্য আমাদের সবাইকে সর্তক থাকতে হবে। গ্রেপ্তারি পরোয়ানা তামিল, মামলা তদন্ত, চোরাই গাড়ি উদ্ধার, মাদক উদ্ধার ও মূলতবি মামলা নিস্পত্তির ক্ষেত্রে আরও গুরুত্ব দিতে হবে।
সভায় উপস্থিত ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) বিভিন্ন বিভাগের পুলিশ কর্মকর্তাগণ । ছবি : বাংলাদেশ পুলিশ

মাসিক অপরাধ পর্যালোচনাসভার শুরুতেই গত অক্টোবর মাসের অপরাধ বিবরণী পর্যালোচনা করা হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষা তথা অপরাধ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে বিভিন্ন ধরনের গুরুত্বপূর্ণ দিক-নির্দেশনা দেন তিনি। সভায় ঢাকা মহানগরের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও জননিরাপত্তা বিধানসহ ভালো কাজের স্বীকৃতি হিসেবে শ্রেষ্ঠ পুলিশ অফিসারদের পুরস্কৃত করেন ডিএমপি কমিশনার।

অক্টোবর মাসের মাসিক অপরাধ পর্যালোচনাসভায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ৮টি ক্রাইম বিভাগের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হয়েছে মিরপুর বিভাগ। শ্রেষ্ঠ থানা হয়েছে মোহাম্মদপুর থানা। সহকারী পুলিশ কমিশনারদের মধ্যে প্রথম হয়েছেন তেজগাঁও বিভাগের মোহাম্মদপুর জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার মুজিব আহম্মেদ পাটওয়ারী। পুলিশ পরিদর্শক তদন্তদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হয়েছেন পল্লবী থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মুহা. আহাদ আলী। পুলিশ পরিদর্শকদের (অপারেশনস) মধ্যে প্রথম হয়েছেন মোহাম্মদপুর থানার পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশনস) মো. তোফাজ্জল হোসেন।

যৌথভাবে শ্রেষ্ঠ এসআই নির্বাচিত হয়েছেন চকবাজার মডেল থানার এসআই মো. মামুন হোসেন ও পল্লবী থানার এসআই মো. সাইফুল ইসলাম। বিস্ফোরক উদ্ধার করে প্রথম হয়েছেন চকবাজার মডেল থানার এসআই মাসুদুর রহমান। মাদকদ্রব্য উদ্ধার করে শ্রেষ্ঠ হয়েছেন পল্টন মডেল থানার এসআই সুজন কুমার তালুকদার এবং চোরাই গাড়ি উদ্ধার করে প্রথম হয়েছেন মোহাম্মদপুর থানার এসআই মো. শরিফুল ইসলাম। অস্ত্র উদ্ধার করে প্রথম হয়েছেন তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার এসআই জুলহাস মিয়া। আর ওয়ারেন্ট তামিলকারী অফিসার হিসেবে শ্রেষ্ঠ নির্বাচিত হয়েছেন পল্লবী থানার এসআই মো. সাইফুল ইসলাম। এএসআইদের মধ্যে যৌথভাবে শ্রেষ্ঠ হয়েছেন মতিঝিল থানার এএসআই মো. হেলাল উদ্দিন ও মোহাম্মদপুর থানার এএসআই রামফল রবি দাস।

৯টি গোয়েন্দা বিভাগের মধ্যে প্রথম হয়েছে গোয়েন্দা উত্তরা বিভাগ। শ্রেষ্ঠ টিম লিডার নির্বাচিত হয়েছেন গোয়েন্দা উত্তরা বিভাগের উত্তরা জোনাল টিমের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার বদরুজ্জামান জিল্লু বিপিএম। তিনি মাদকদ্র্রব্য উদ্ধার করেও শ্রেষ্ঠ টিম লিডার নির্বাচিত হয়েছেন। চোরাই গাড়ি উদ্ধারে শ্রেষ্ঠ টিম লিডার হয়েছেন একই বিভাগের সংঘবদ্ধ অপরাধ ও গাড়ি চুরি প্রতিরোধ টিমের সহকারী পুলিশ কমিশনার হাবিুবর রহমান। অজ্ঞান/মলম পার্টি গ্রেপ্তারে শ্রেষ্ঠ টিম লিডার নির্বাচিত হয়েছেন গোয়েন্দা রমনা বিভাগের ধানমন্ডি জোনাল টিমের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ ফজলে এলাহী বিপিএম।

৮টি ট্রাফিক বিভাগের মধ্যে প্রথম হয়েছে ট্রাফিক উত্তরা বিভাগ। ট্রাফিকের শ্রেষ্ঠ সহকারী পুলিশ কমিশনার হয়েছেন ট্রাফিক লালবাগ বিভাগের কোতোয়ালি ট্রাফিক জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ রাইসুল ইসলাম। শ্রেষ্ঠ ট্রাফিক ইন্সপেক্টর হয়েছেন ট্রাফিক রমনা বিভাগের ধানমন্ডি ট্রাফিক জোনের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর মুহা. আশ্রাফ উদ্দিন। যৌথভাবে শ্রেষ্ঠ ট্রাফিক সার্জেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন একই বিভাগের ট্রাফিক রমনা জোনের সার্জেন্ট মফিজুর রহমান ও ট্রাফিক তেজগাঁও বিভাগের মোহাম্মদপুর ট্রাফিক জোনের আব্দুল কাদের।

এ ছাড়া ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগসহ ১৩টি বিভাগ ও বিভিন্ন পদমর্যাদার অফিসার এবং ফোর্সকে বিশেষ পুরস্কার দেওয়া হয়।

প্রতি মাসে ঘটে যাওয়া অপরাধ বিশ্লেষণ, অপরাধ নিয়ন্ত্রণে পরবর্তী কর্মপন্থা ও কর্মকৌশল সম্পর্কিত নির্দেশনার পাশাপাশি মাঠপর্যায়ের পুলিশ সদস্য ও কর্মকর্তাদের কর্ম উদ্দীপনা বাড়াতে প্রতি মাসের কার্যক্রম পয়েন্ট আকারে যোগ করে পরবর্তী মাসের মাসিক অপরাধ পর্যালোচনাসভায় পুরস্কৃত করে থাকেন ডিএমপি কমিশনার।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের যুগ্ম পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম) বিপ্লব বিজয় তালুকদারের সঞ্চালনায় মাসিক অপরাধ পর্যালোচনাসভায় অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (অ্যাডমিন) মীর রেজাউল আলম বিপিএম (বার); অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) এ কে এম হাফিজ আক্তার বিপিএম (বার); অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মো. মুনিবুর রহমান; অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (সিটিটিসি) মো. আসাদুজ্জামান বিপিএম (বার); অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বিপিএম (বার), পিপিএম (বার); যুগ্ম পুলিশ কমিশনারগণ, উপপুলিশ কমিশনারগণসহ বিভিন্ন পদমর্যাদার কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।