পারভেজ মোশাররফ। ছবি: এএফপি

দীর্ঘদিন অসুস্থতার পর পাকিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট পারভেজ মোশাররফ আজ রোববার মারা গেছেন। দুবাইয়ের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৯ বছর। পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যমগুলোর বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।

মোশাররফ অবিভক্ত ভারতের দিল্লিতে ১৯৪৩ সালের ১১ আগস্ট জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৬১ সালের ১৯ এপ্রিল পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমি কাকুল থেকে কমিশন পান। পরে ১৯৯৮ সালে জেনারেল পদে উন্নীত হন এবং সেনাবাহিনীর প্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পারভেজ মোশাররফ চার তারকাবিশিষ্ট জেনারেল ছিলেন। তিনি ১৯৯৯ সালে একটি রক্তপাতহীন অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের পর প্রায় এক দশক পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ছিলেন। তাঁর শাসনামলে পাকিস্তান দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছিল। একটি রক্ষণশীল মুসলিম দেশ পাকিস্তানে তিনি উদার মূল্যবোধের সূচনা করার চেষ্টা করেছিলেন।

দুবাইয়ে স্বেচ্ছা নির্বাসনে ছিলেন পারভেজ মোশাররফ। তাঁর সময়ে সবচেয়ে বড় হুমকি ছিল আল-কায়েদা এবং অন্য জঙ্গি ইসলামপন্থীরা। তাঁকে অন্তত তিনবার হত্যার চেষ্টা করেছিল এসব জঙ্গিগোষ্ঠী।

ভিন্নমত দমনে তিনি তাঁর সামরিক বাহিনীকে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করেছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া আল-কায়েদা ও আফগান তালেবানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে তিনি অব্যাহতভাবে সমর্থন দিয়েছিলেন। এসব কারণে শেষ পর্যন্ত তাঁর পতন ত্বরান্বিত হয়।

মাত্র ১৮ বছর বয়সে তিনি সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন।

পাকিস্তানের গণমাধ্যম ডন জানিয়েছে, এর আগে গত বছরের জুনে পারভেজ মোশাররফ গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। সে সময় তিনি ভেন্টিলেটরে ছিলেন বলেও গুজব ছড়িয়ে পড়েছিল। এমনকি তাঁর মৃত্যুর গুজবও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছিল। তবে তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে সে সময় তা নাকচ করা হয়।

মোশাররফের অফিশিয়াল টুইটার অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে তাঁর পরিবার তখন একটি বিবৃতি দিয়েছিল। বিবৃতিতে বলা হয়েছিল, তিনি ভেন্টিলেটরে নেই। অসুস্থতাজনিত (অ্যামাইলয়েডোসিস) জটিলতার কারণে তিনি তিন সপ্তাহ ধরে হাসপাতালে ভর্তি আছেন। তাঁর অবস্থা সংকটাপন্ন। শারীরিক অবস্থা ক্রমশ জটিলতর হচ্ছে এবং বিভিন্ন অঙ্গ অকার্যকর হয়ে যাচ্ছে। সেই সব অঙ্গ আর কার্যকর করে তোলা সম্ভব নয়। আপনারা সবাই তাঁর জন্য দোয়া করবেন।

২০১৮ সালে প্রথমবারের মতো পারভেজ মোশাররফের অসুস্থতার কথা জনসমক্ষে প্রকাশিত হয়। তখন এপিএমএল জানিয়েছিল, তিনি বিরল রোগ অ্যামাইলয়েডোসিসে ভুগছেন।

মানব শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ ও টিস্যুতে অ্যামাইলয়েড নামক একটি অস্বাভাবিক প্রোটিন তৈরির কারণে অ্যামাইলয়েডোসিস রোগ হয়। এই রোগ হলে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ও টিস্যুগুলো সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না।

অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা নেওয়া মোশাররফ ২০০৭ সালের ৩ নভেম্বর সংবিধান স্থগিত করেছিলেন। এর জন্য ২০১৪ সালের ৩০ মার্চ তাঁকে অভিযুক্ত করা হয়। ২০১৯ সালের ১৭ ডিসেম্বর রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেন পাকিস্তানের একটি বিশেষ আদালত।

২০১৬ সালের মার্চে চিকিৎসার জন্য দুবাই যান সাবেক সেনাশাসক পারভেজ মোশাররফ। এরপর আর তিনি পাকিস্তানে ফিরে আসেননি। সূত্র: আজকের পত্রিকা।