নোয়াখালীর সুধারামে জোড়া খুনের ঘটনায় আটক হত্যাকারী এবং এ বিষয়ে এসপির ব্রিফিং। কোলাজ: পুলিশ নিউজ

নোয়াখালীর সুধারামে বুধবার জোড়া খুনের ছয় ঘণ্টার মধ্যে রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ।

এ ঘটনায় হত্যাকারীকে আটক করা হয়েছে।

পুলিশ জানায়, হত্যাকারী আলতাফ হোসেনের (২৮) বাড়ি লক্ষ্মীপুরের রামগতি থানার চর মেহের এলাকায়। তিনি ওমানে থাকা অবস্থায় ভুল নম্বরের সূত্র ধরে খুন হওয়া নুর নাহার বেগমের (৪০) সঙ্গে পরিচিত হন। পরিচয়ের একপর্যায়ে উভয়ের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সম্পর্কের একপর্যায়ে নুর নাহার বেগম আলতাফকে ওমান থেকে দেশে এসে ব্যবসা করার জন্য বলেন। ব্যবসার সম্পূর্ণ মূলধন এবং আলতাফের দেনার প্রায় ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা বহন করবেন বলেও আশ্বাস দেন নুর নাহার।

ওই নারীর আশ্বাসে ১ সপ্তাহ আগে আলতাফ ওমান থেকে ভিসা বাতিল করিয়ে সব ছেড়ে দেশে চলে আসেন। দেশে এসে নুর নাহার বেগমের বাসায় চার থেকে পাঁচবার এসে ব্যবসার টাকা দেওয়ার জন্য বলেন আলতাফ। নুর নাহার বেগম ব্যবসার টাকা দেবেন বলে কালক্ষেপণ করতে থাকেন। এতে আলতাফ ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন এবং টাকা না দিলে নুর নাহারের ক্ষতি করার জন্য ভেতরে ভেতরে মানসিক প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন।

পুলিশ আরও জানায়, আলতাফ ব্যবসার টাকা চাওয়ার জন্য বুধবার সকাল ১০টার দিকে নুর নাহারের বাসা বার্লিংটন মোড়ের হক মঞ্জিলে আসেন। তিনি ব্যবসার টাকা চাইলে নুরনাহার তা দিতে অস্বীকৃতি জানান। এ বিষয়ে উভয়ের মধ্যে কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে টাকা নিয়ে বেশি বাড়াবাড়ি করলে আলতাফকে পুলিশে ধরিয়ে দেবেন বলে নুর নাহার হুমকি দেন এবং তাঁকে ধাক্কা দিয়ে ঘর থেকে বের করে দিতে উদ্যত হন। ওই সময় আলতাফ ক্ষিপ্ত হয়ে তাঁর সঙ্গে থাকা ছুরি দিয়ে নুর নাহারকে বাসার দক্ষিণ-পূর্ব পাশের কক্ষের ভেতরে উপর্যুপরি আঘাত করেন। ওই সময় নুর নাহারের মেয়ে ফাতেহা আজিম প্রিয়ন্তী (১৭) মাকে রক্ষা করার জন্য এগিয়ে এলে আলতাফ তাকেও উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করেন।

ছুরিকাঘাতে আহত হয়ে প্রিয়ন্তী দৌড়ে নিচে নেমে নিচতলার ভাড়াটের বাসার দরজায় ধাক্কা দিলে ভাড়াটে দরজা খুলে দেন। দরজা খোলার সঙ্গে সঙ্গে প্রিয়ন্তী ডাইনিং রুমের মেঝেতে অজ্ঞান হয়ে লুটিয়ে পড়ে। প্রিয়ন্তীর পিছু পিছু আলতাফ হোসেন দৌড়ে পালানোর চেষ্টাকালে স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় পুলিশ তাঁকে আটক করে।

পুলিশের ভাষ্য, উপর্যুপরি ছুরিকাঘাতে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের ফলে নুর নাহার বেগমের মৃত্যু হয় ঘটনাস্থলেই। স্থানীয় লোকজন গুরুতর জখম প্রিয়ন্তীকে দ্রুত চিকিৎসার জন্য ২৫০ শয্যার নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

পুলিশ আলতাফ হোসেনকে আটকের পাশাপাশি ঘটনাস্থল থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরি উদ্ধার করে।

আলতাফ হোসেনকে থানা হেফাজতে নিয়ে এসে পুলিশ বিভিন্নভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করে। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে তিনি পুলিশের কাছে ঘটনার বিষয়ে বিস্তারিত জানান।

এ বিষয়ে মামলা প্রক্রিয়াধীন।