বাংলাদেশ পুলিশ উইমেন নেটওয়ার্কের (বিপিডব্লিউএন) দুই দিনব্যাপী বার্ষিক প্রশিক্ষণ সম্মেলনে অংশ নেওয়া প্রশিক্ষণার্থীদের সঙ্গে সম্মানিত অতিথিবৃন্দ। ছবি : বাংলাদেশ পুলিশ

মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, বাংলাদেশ পুলিশের নারী সদস্যরা অত্যন্ত দক্ষতা ও যোগ্যতার সঙ্গে দেশে-বিদেশে দায়িত্ব পালন করছেন। পারিবারিক সহিংসতা, সাইবার বুলিং, বাল্যবিয়ে রোধে তাঁদের কৃতিত্ব দেখাতে সক্ষম হয়েছেন। দেশের বাইরে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে পেশাদারত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে আমাদের নারী পুলিশ সদস্যরা সবার প্রশংসা অর্জন করেছেন।

বৃহস্পতিবার (১ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজধানীর মিরপুরে পুলিশ স্টাফ কলেজ বাংলাদেশের কনফারেন্স রুমে বাংলাদেশ পুলিশ উইমেন নেটওয়ার্কের (বিপিডব্লিউএন) দুই দিনব্যাপী বার্ষিক প্রশিক্ষণ সম্মেলনের সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এসব কথা বলেন। এবারের প্রশিক্ষণ সম্মেলনের প্রতিপাদ্য ছিল ’নারী পুলিশের গৌরবময় যাত্রা ও অর্জন ১৯৭৪-২০২২’।

ক্যাপশন২ : সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। ছবি : বাংলাদেশ পুলিশ

বিশেষ অতিথি ছিলেন ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ (আইজিপি), বাংলাদেশ চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বিপিএম (বার), পিপিএম এবং বাংলাদেশ পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতির (পুনাক) সভানেত্রী ডা. তৈয়বা মুসাররাত জাঁহা চৌধুরী।

এতে সভাপতিত্ব করেন পুলিশ স্টাফ কলেজের ভারপ্রাপ্ত রেক্টর ড. এ এফ এম মাসুম রব্বানী। বিপিডব্লিউএনের সভাপতি ও স্পেশাল ব্রাঞ্চের ডিআইজি আমেনা বেগম স্বাগত বক্তব্য রাখেন। প্রশিক্ষণের অনুভূতি ব্যক্ত করেন গাজীপুর জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ডা. নন্দিতা মালাকার।

সমাপনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ (আইজিপি), বাংলাদেশ চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বিপিএম (বার), পিপিএম। ছবি : বাংলাদেশ পুলিশ

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাগণ, ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাসের প্রতিনিধি, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের প্রতিনিধি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন স্টাডিজ বিভাগের প্রতিনিধিগণ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের নারী সদস্যগণ অনলাইনে অংশ নেন।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমাদের সব আন্দোলন-সংগ্রামে নারীরা সামনে ছিলেন। মহান মুক্তিযুদ্ধে নারীরা অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেছেন, যুদ্ধক্ষেত্রে সেবা দিয়েছেন, তথ্য আদান-প্রদান করেছেন। মহান মুক্তিযুদ্ধে নারীদের অসামান্য অবদান রয়েছে।

সমাপনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতির (পুনাক) সভানেত্রী ডা. তৈয়বা মুসাররাত জাঁহা চৌধুরী। ছবি : বাংলাদেশ পুলিশ

তিনি আরও বলেন, দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীর দৃশ্যমান অগ্রযাত্রার কৃতিত্ব মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। আমাদের মেয়েরা জাগছে। তাঁরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখছে। কৃষিতে সাফল্যের ষাট ভাগ অবদান নারীর, পোশাক শিল্পে এক-চতুর্থাংশ নারী কাজ করছেন। সমাজে মেয়েদের দৃশ্যমানতা অনেক পাল্টেছে, আরও পাল্টাতে হবে। নারী যত বেশি এগিয়ে যাবে, তত বেশি সমাজ ও দেশ এগিয়ে যাবে।

প্রশিক্ষণের গুরুত্ব তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, প্রশিক্ষণের মূল্য অনেক। তিনি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষতাকে আরও শাণিত করে পেশাদারত্ব বাড়ানোর আহ্বান জানান।

ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ (আইজিপি), বাংলাদেশ চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বিপিএম (বার), পিপিএম বলেন, বাংলাদেশ পুলিশে নারী সদস্যদের দৃঢ় অবস্থান রয়েছে। তাঁরা যথেষ্ট সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে মানুষের আস্থা অর্জনে সক্ষম হয়েছেন।

তিনি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে থানায় নারীবান্ধব পরিবেশে নারীরা সেবা পাচ্ছেন। দেশের সব থানায় নারী ও শিশু ডেস্ক রয়েছে। এখানে নারীরা তাঁদের যেকোনো সমস্যার কথা নারী পুলিশ সদস্যদের কাছে বলতে পারেন।

সমাপনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত সম্মানিত অতিথিবৃন্দ। ছবি : বাংলাদেশ পুলিশ

পুলিশপ্রধান বলেন, আমাদের নারী পুলিশ দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সফলতা দেখিয়েছে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনেও তাঁরা প্রশংসনীয় ভূমিকা রাখছে।

আইজিপি আরও বলেন, করোনাকালে মানবিকতার চরম বিপর্যয়ের সময়ও আমাদের নারী সদস্যরা জনগণকে সেবা দিয়ে সেবার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।

পুনাক সভানেত্রী ডা. তৈয়বা মুসাররাত জাঁহা চৌধুরী বলেন, নারীকে পেছনে ফেলে সমাজ এগিয়ে যেতে পারে না। সমাজে নারী-পুরুষের সমান সুযোগ সৃষ্টি করার জন্য তিনি সবার প্রতি আহ্বান জানান।

এ সময় প্রধান অতিথি অন্য অতিথিদের সঙ্গে নিয়ে প্রশিক্ষণার্থীদের মাঝে সনদপত্র বিতরণ করেন।

দুই দিনের প্রশিক্ষণ সম্মেলনে মাঠ পর্যায়ের পুলিশিং চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় করণীয়, নারীর ক্ষমতায়ন ও জেন্ডার সমতা : টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ও রূপকল্প-২০৪১, নারীর ক্ষমতায়নে প্রাইভেট-পাবলিক পার্টনারশিপ, স্বাস্থ্য সচেতনতা ও স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে নারী পুলিশের অবদান ও সাফল্যের ধারাবাহিকতা রক্ষায় করণীয়, বাংলাদেশ পুলিশের পেশাদারত্ব, নেতৃত্ব, শৃঙ্খলা, ড্রেস রুলস ও ক্যারিয়ার প্ল্যান এবং সাইবার অপরাধ : কেস এ্যানালাইসিস, নারীর জন্য সচেতনতা সৃষ্টি, সংবেদনশীল সেবা প্রদান ও প্রযুক্তিগত দক্ষতার উন্নয়ন ইত্যাদি বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাগণ বিশেষ করে নারী পুলিশ কর্মকর্তাগণ প্রশিক্ষণে রিসোর্স পার্সন এবং মডারেটরের দায়িত্ব পালন করেন।

বাংলাদেশ পুলিশের বিভিন্ন পদমর্যাদার নারী পুলিশ কর্মকর্তাগণ, এশিয়া রিজিওনের নারী পুলিশ কর্মকর্তাগণ, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের নারী কর্মকর্তাগণ, ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব উইমেন পুলিশের বোর্ড সদস্যগণ সরাসরি ও ভার্চুয়ালি প্রশিক্ষণে অংশ নেন।