পুলিশি হেফাজতে আসামি। ছবি : বাংলাদেশ পুলিশ

নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলার ব্রাহ্মণদী ইউনিয়নের উজান গোবিন্দি এলাকায় রাজিয়া সুলতানা কাকলি এবং তাঁর ছেলে তালহা (৮) হত্যা মামলার রহস্য ২৪ ঘণ্টার মধ্য উদঘাটন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) নারায়ণগঞ্জ শাখা।

গতকাল রোববার (১০ জুলাই) নারায়ণগঞ্জের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কাওসার আলমের আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন আসামি
সাদিকুর সাদি (২৪)। এর আগে গত শনিবার (৯ জুলাই) তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।

পিবিআই জানায়, এ সময় হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত একটি লোহার হাতলযুক্ত বটি, একটি ইলেকট্রিক ইস্ত্রি মেশিন ও একটি রক্তমাখা ওড়না জব্দ করা হয়। এ ছাড়া আসামির বাড়ি থেকে একটি স্বর্ণের আংটি, একটি স্বর্ণের চেইন, এক জোড়া কানের দুল উদ্ধার করা হয়। পাশাপাশি বিক্রি করা একটি চেইন ও আংটি আড়াইহাজার থানাধীন একটি স্বর্ণের দোকান থেকে উদ্ধার করা হয়। মায়ের অসুস্থতার কথা বলে ১৭ হাজার টাকায় এগুলো বন্ধক রেখেছিলেন আসামি।

পুলিশ জানায়, গত ৩ জুলাই ভোরে ভুক্তভোগী নারীর বাবা জানতে পারেন, তাঁর মেয়ে ও নাতিকে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি গলা কেটে হত্যা করেছেন। পরে গত ৫ জুলাই আড়াইহাজার থানায় হত্যা মামলা করেন তিনি। পরে গত ৯ জুলাই মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পেয়ে ছায়াতদন্ত শুরু করে পিবিআই নারায়ণগঞ্জ শাখা। ঘটনাস্থল পরিদর্শনের এক পর্যায়ে ভুক্তভোগীর বাড়ির পেছনের একটি সুপারি গাছে কাঁচা মাটি দেখতে পায় পুলিশ।

স্থানীয় সোর্সের সঙ্গে আলাপ করে পুলিশ জানতে পারে, বাড়ির পেছনে ফ্রি ওয়াইফাই সংযোগ থাকায় ভুক্তভোগীর ভাসুরের ছেলেসহ (১৬) কয়েক জন ফ্রি ওয়াইফাই দিয়ে মোবাইলে ইন্টারনেট চালাতেন। তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে জানা যায়, গত ২ জুলাই রাতে ঘটনাস্থলে বসে মোবাইল ফোনে গেম খেলছিল ওই কিশোর। হঠাৎ ভুক্তভোগীর ছেলের চিৎকার শুনতে পায় সে। এরপর ভুক্তভোগীর বাথরুমে হাত ধোয়ার শব্দ শুনতে পায়। তখন বাড়ির পেছনের সুপারি গাছ বেয়ে বাথরুমের ভেনটিলেটরে উকি মেরে আসামি সাদিকুর সাদিকে দেখতে পায় ওই কিশোর। ঘর থেকে বের হওয়ার সময় ওই কিশোরকে দেখতে পায় আসামি। এক পর্যায়ে ওই কিশোরকে মুখ বন্ধ রাখতে হুমকি দেন। এ কারণে কাউকে কিছু জানায়নি ওই কিশোর।

পরে অভিযান চালিয়ে আসামি সাদিকুরকে গ্রেপ্তার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি জানান, আইপিএল জুয়া খেলে তিনি ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে জানতে পারেন, ভুক্তভোগী নারীর কাছে অনেক টাকা ও স্বর্ণালংকার আছে। তাই গত ২ জুলাই রাতে ভুক্তভোগীর বাড়িতে টাকা ধার করতে যান তিনি। কিন্তু টাকা দিতে রাজি হননি ভুক্তভোগী। এ সময় আলমারিতে রাখা স্বর্ণের দিকে চোখ যায় আসামির। পরে ভুক্তভোগীর গলায় উড়না পেচিয়ে ফাঁস দেন আসামি। ইস্ত্রি দিয়ে মাথায় আঘাত করলে পুরোপুরি অচেতন হয়ে পড়েন ভুক্তভোগী। পরে রান্নাঘর থেকে বটি এনে গলা কেটে মৃত্যু নিশ্চিত করেন সাদিকুর। এক পর্যায়ে ভুক্তভোগীর সন্তানকে গলা কেটে হত্যা করেন তিনি। পরে স্বর্ণালংকার নিয়ে পালিয়ে যান। তখন ওই কিশোরের সঙ্গে দেখা হয় সাদিকুরের।

পুলিশ জানায়, আসামির দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত সরঞ্জাম এবং চুরি করা স্বর্ণালংকার উদ্ধার করে পুলিশ। আসামির বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।