মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আজ সোমবার পায়রায় দেশের সর্ববৃহৎ বিদ্যুৎকেন্দ্রের উদ্বোধন করেন। ছবি: বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

পটুয়াখালীর পায়রায় দেশের সবচেয়ে বড় ও সর্বাধুনিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের উদ্বোধন করা হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ সোমবার এর উদ্বোধন করেন। এই বিদ্যুৎকেন্দ্র ঘিরে বিদ্যুৎ উৎপাদনের একটি ‘হাব’ গড়ে তোলার লক্ষ্য রয়েছে সরকারের।

পায়রায় কয়লাভিত্তিক এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণার পাশাপাশি দেশে শতভাগ বিদ্যুতায়নেরও ঘোষণা দেওয়ার কথা রয়েছে সরকারপ্রধানের।

ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারে করে সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে পটুয়াখালী পৌঁছান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। কোভিড মহামারি শুরুর পর গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ার বাইরে দেশের অন্য কোথাও এটিই তাঁর প্রথম সফর।

কলাপাড়ায় পৌঁছালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পুলিশ সদস্যরা গার্ড অব অনার দেন। এরপর তিনি পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের কোল জেটিতে যান। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।

পায়রায় পৌঁছানোর পর রাবনাবাদ নদীর কয়লা জেটিতে রঙিন পাল তোলা ২০০ নৌকা থেকে পতাকা উড়িয়ে এবং গানের সুরে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে অভিবাদন জানানো হয়।

এরপর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণকক্ষসহ বিদ্যুৎকেন্দ্রটি পরিদর্শন করেন এবং মঞ্চে এসে বিদ্যুৎকেন্দ্রের নামফলক উন্মোচন করেন।

বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদনক্ষমতার স্মারক হিসেবে ১৩২০টি পায়রা এবং বেলুন ওড়ানো হয় এ সময়।

বিদ্যুৎকেন্দ্রের উদ্বোধনের পর সেখানে সংক্ষিপ্ত সুধী সমাবেশে অংশ নেন আওয়ামী লীগ সভাপতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর এ সফর ঘিরে পুরো এলাকা সাজানো হয়েছে বর্ণিল সাজে।

পায়রা নদীর তীরে এক হাজার একর জমিতে গড়ে তোলা আলট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তির এ বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনক্ষমতার দিক দিয়ে বর্তমানে দেশের সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র।

কর্মকর্তারা বলছেন, এ তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে খরচ হয়েছে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা। আলট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে এ ধরনের বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে বাংলাদেশ বিশ্বের ত্রয়োদশ এবং এশিয়ায় সপ্তম দেশ। দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ ছাড়া শুধু ভারতে এ ধরনের একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে।

আলট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তির কেন্দ্রগুলোতে চীন ও বাংলাদেশ ছাড়া অন্য দেশগুলো ঢাকনাযুক্ত কোল ইয়ার্ড ব্যবহার করে না। ঢাকনাযুক্ত কোল ইয়ার্ড ব্যবহারের ফলে বাতাসের মাধ্যমে খোলা কয়লা থেকে কয়লার গুঁড়া ছড়ানোর সুযোগ কমে যায়।
২০১৪ সালে শেখ হাসিনার চীন সফরের সময় বাংলাদেশের নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার কোম্পানি ও চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট করপোরেশনের (সিএমসি) মধ্যে যৌথ উদ্যোগে এ কেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি হয়। পরে গঠিত হয় বাংলাদেশ চায়না পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড।

ওই কোম্পানির ব্যবস্থাপনায় পায়রার এ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এনইপিসি ও সিইসিসি কনসোর্টিয়াম। নির্মাণ ব্যয়ের প্রায় ৮০ শতাংশ ঋণ হিসেবে দিয়েছে চীনের এক্সিম ব্যাংক ও চায়না ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক।

২০২০ সালের মে থেকেই কেন্দ্রটির ৬৬০ মেগাওয়াট ক্ষমতার প্রথম ইউনিট পরীক্ষামূলকভাবে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ দেওয়া শুরু করে। ওই বছরের শেষ দিকে উৎপাদনের জন্য প্রস্তুত হয় দ্বিতীয় ইউনিটও।

ইতিমধ্যে সঞ্চালন লাইনের সক্ষমতা অনুযায়ী মোট ৫৫০ থেকে ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যোগ হচ্ছে। ইন্দোনেশিয়া ও অস্ট্রেলিয়া থেকে আমদানি করা কয়লা দিয়ে এখানে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে।

বিদ্যুৎ বিভাগ জানায়, ২০০৯ সালে দেশে বিদ্যুৎ সুবিধাপ্রাপ্ত জনগোষ্ঠী ছিল ৪৭ শতাংশ। গত ১৩ বছরে ৫৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে এখন শতভাগ মানুষ বিদ্যুৎ পাচ্ছেন। সম্ভাব্য সব এলাকায় সঞ্চালন লাইন স্থাপনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে সরকার। একেবারে দুর্গম এলাকাগুলোতে সোলার প্যানেল স্থাপনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়েছে।

২০০৯ সালে বিদ্যুতের গ্রাহকসংখ্যা ছিল ১ কোটি ৮ লাখ। গত ১৩ বছরে ৩ কোটি ১৩ লাখ বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে গ্রাহকসংখ্যা ৪ কোটি ২১ লাখ। ২০০৯ সালে দেশে মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ছিল ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট, বর্তমানে এ ক্ষমতা ২৫ হাজার ৫১৪ মেগাওয়াট (ক্যাপটিভ, নবায়নযোগ্যসহ)।

২০০৯ সালে দেশে বিদ্যুৎকেন্দ্র ছিল ২৭টি, বর্তমানে ১৫০টি। ১৩ হাজার ২১৯ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরও ৩৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন রয়েছে।

২০০৯ সালে বিদ্যুতের বিতরণ লাইন ছিল ২ লাখ ৬০ হাজার কিলোমিটার, বর্তমানে ৬ লাখ ২১ হাজার কিলোমিটার সঞ্চালন লাইনের মাধ্যমে মানুষের কাছে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। দুর্গম এলাকার মানুষকে বিদ্যুতের আওতায় আনতে ৬০ লাখের বেশি সোলার প্যানেল স্থাপন করা হয়েছে।