চাটখিল থানায় নির্মিত এই বাড়ি পাচ্ছেন দিনমজুর জসিম উদ্দিন। ছবি: বাংলাদেশ পুলিশ

চার দশক আগে নিজ গ্রামেরই আব্দুল খালেকের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল আশ্ববীর নেছার (৫৮)। কিন্তু সন্তান না হওয়ায় ১২-১৪ বছর সংসারের পর স্বামী তাঁকে ছেড়ে চলে যান। নিরুপায় আশ্ববীর বাবার বাড়িতে বড় ভাইয়ের কাছে আশ্রয় নেন। নিঃসন্তান, স্বামী পরিত্যক্ত ও সহায়-সম্বলহীন হওয়ায় জীবন চলার পথে তাঁকে সহ্য করতে হয়েছে নানা ঘাত-প্রতিঘাত, কটূক্তি। তবে আশ্ববীর আর সহায়-সম্বলহীন নন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় ও বাংলাদেশ পুলিশের উদ্যোগে তিনি পাচ্ছেন জমি ও ঘর।

আশ্ববীরের বাড়ি নোয়াখালীর সেনবাগ থানায়। পুলিশের উদ্যোগে তাঁর মতো নোয়াখালী জেলার ৯ থানার ৯টি হতদরিদ্র পরিবার পাচ্ছে জমি ও বাড়ি। শুধু নোয়াখালীতেই নয়, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা ‘মুজিব শতবর্ষে বাংলাদেশে একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না’ বাস্তবায়নে দেশজুড়েই বাংলাদেশ পুলিশ গৃহহীনদের জমি ও ঘর দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে। ১০ এপ্রিল মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপকারভোগীদের কাছে এসব জমি ও বাড়ি হস্তান্তরের কথা রয়েছে।

সুধারাম থানায় নির্মিত এই বাড়ি পাবেন বিবি আয়েশা। ছবি: বাংলাদেশ পুলিশ

নোয়াখালীর পুলিশ সুপার মো. শহীদুল ইসলাম পিপিএম ৭ এপ্রিল এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়নে নোয়াখালীর ৯ থানার ৯টি হতদরিদ্র পরিবারের জন্য বাড়ি নির্মাণে প্রতিটি থানায় ন্যূনতম এক কাঠা জমি কিনে আনুমানিক ৪১৫ বর্গফুট আয়তনের দুটি ঘর, রান্নাঘর ও টয়লেটবিশিষ্ট একটি করে বাড়ি নির্মাণের উদ্যোগে নিয়েছে নোয়াখালী পুলিশ। বাড়িগুলো নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। এখন উপকারভোগীদের কাছে হস্তান্তরের অপেক্ষায় রয়েছে।
বেগমগঞ্জ মডেল থানায় নির্মিত বাড়িটি পাবেন আমানতপুর গ্রামের বুলবুল পেয়ারা। ছবি: বাংলাদেশ পুলিশ

নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী থানার দিনমজুর শহিদুলের একটি বাড়ির স্বপ্ন ছিল। ২৮ বছর বয়সী এই তরুণ ছোটবেলাতেই মা-বাবাকে হারান। এরপর জীবনের তাগিদে শ্রমিকের কাজ করতেন। কিন্তু দুর্ঘটনাবশত তাঁর হাতের আঙুল কেটে যায়। হারিয়ে ফেলেন স্বাভাবিক কাজ করার ক্ষমতা। পরে তিনি লেপের দোকানে সেলাইয়ের কাজ শুরু করেন। সন্তানসম্ভবা স্ত্রীকে নিয়ে পবিত্র কোরআন শরিফ হাফেজ এই তরুণের পরিবার। কিন্তু তাঁদের কোনো স্থায়ী আবাস ছিল না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়নে পুলিশের উদ্যোগে শহিদুল পাচ্ছেন একটি বাড়ি, স্বপ্নপূরণ হচ্ছে তাঁর। শহিদুলের মতো চাটখিলের দিনমজুর জসিম উদ্দিনও পাচ্ছেন বাড়ি।

বেগমগঞ্জ মডেল থানার আমানতপুর গ্রামের বুলবুল পেয়ারা (৫৭) স্বামীকে হারিয়েছেন কয়েক বছর হলো। তাঁর দুই মেয়ে থাকলেও তাঁরা বিবাহিত এবং স্বামীর সঙ্গে থাকেন। সহায়-সম্বলহীন বুলবুলের ঠিকানা হয়েছিল বাবার বাড়ি। তিনিও এবার ঘর পাচ্ছেন। একইভাবে ঘর পাচ্ছেন সুধারাম মডেল থানার বিবি আয়েশাও (৪৯)। প্রায় ১০ বছর আগে স্বামী মারা গেছে তাঁর। পাঁচ সন্তান ও শাশুড়িকে নিয়ে পরিবার টেকাতে মানুষের দরজায় দরজায় ঘুরে বেড়াতেন আয়েশা। তবে এখন আর তিনি ও তাঁর পরিবার ঠিকানাহীন থাকছেন না। কোম্পানীগঞ্জ থানার চরপার্বতী এলাকার নূর জাহান বেগমের গল্পটাও অনেকটা একই রকম। তিনিও ঘর পাচ্ছেন।

চরজব্বর থানায় নির্মিত এই বাড়ি পাবেন সখিনা খাতুন। ছবি: বাংলাদেশ পুলিশ

ঘর পাচ্ছেন চরজব্বর থানার সখিনা খাতুনও (৪৩)। তাঁর স্বামী দীর্ঘদিন ধরে নিখোঁজ। দুই সন্তানের মধ্যে মেয়েটি কলেজের শিক্ষার্থী। ছেলেটি দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ ও শয্যাশায়ী। মেয়ের লেখাপড়া ও ছেলের চিকিৎসার খরচ মেটাতে হিমশিম খাচ্ছিলেন অন্যের বাড়িতে কাজ করা সখিনা। তবে এখন অন্তত তিনি
হাতিয়া থানায় নির্মিত এই বাড়ি পাবেন অন্ধ ভিক্ষুক জামাল উদ্দিন। ছবি: বাংলাদেশ পুলিশ
সন্তানদের নিয়ে মাথা গোঁজার ঠাঁই পাচ্ছেন। তিনি আর গৃহহীন থাকছেন না।

হাতিয়া থানার তালতলার অন্ধ ভিক্ষুক জামাল উদ্দিন (৬০) কোনো দিন স্বপ্নেও ভাবেননি, তাঁর একটি বাড়ি হবে। সারা দিন বিভিন্ন স্থানে ভিক্ষা করে যা আয় হয়, তা দিয়েই খেয়ে না খেয়ে দিনযাপন করে তাঁর চার সদস্যের পরিবার। পুলিশের উদ্যোগে তিনিও পাচ্ছেন বাড়ি। কবিরহাট থানার চর বৈশাখী এলাকার ভিক্ষুক কমলা খাতুনের (৫৪) বাড়ি পাওয়াও অনেকটা জামাল উদ্দিনের মতোই। কমলার চোখের আলো থাকলেও সহায়-সম্বল কিছুই নেই। বাধ্য হয়ে মানুষের কাছে হাত পাততে হয়। তবে এখন তিনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা ও পুলিশের উদ্যোগে জমি ও বাড়ি পাচ্ছেন।

কবিরহাট থানায় নির্মিত এই বাড়ি পাবেন ভিক্ষুক কমলা খাতুন। ছবি: বাংলাদেশ পুলিশ