মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তাঁর সরকার দেশের সার্বিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ২৫ জুন বহুল প্রতীক্ষিত পদ্মা সেতু চালু হলে দেশের দক্ষিণের জনপদের মানুষ আর অবহেলিত থাকবে না। খবর বাসসের।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ১৬ জুন (বৃহস্পতিবার) পল্লী জনপদ, রংপুর এবং বঙ্গবন্ধু দারিদ্র বিমোচন ও পল্লী উন্নয়ন একাডেমী (বাপার্ড), কোটালিপাড়া, গোপালগঞ্জের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে এ উপলক্ষে পল্লী জনপদ, রংপুর এবং বাপার্ড, কোটালীপাড়া, গোপালগঞ্জ প্রান্তে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রনালয় আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন।

স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন। মন্ত্রণালয়ের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। সমবায় বিভাগের সচিব মো. মশিউর রহমান স্বাগত বক্তৃতা করেন। অনুষ্ঠানে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট একটি ভিডিও চিত্রও প্রর্দশন করা হয়।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দক্ষিণাঞ্চল বা পদ্মা পারের মানুষ বরাবরই অবহেলিত ছিলো। দারিদ্র্য আমাদের নিত্যসঙ্গী। আল্লাহর অশেষ রহমতে, সেই পরিস্থিতি আর থাকবে না। কারণ, আমরা একটি বিশাল চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে পদ্মা সেতুর কাজ শেষ করেছি, যা আগামী ২৫ জুন উদ্বোধন হতে যাচ্ছে।’ তিনি বলেন, যে দক্ষিণাঞ্চলের জনগণ সারাজীবন অবহেলিত ছিল, এখন আর অবহেলিত থাকবে না। কারণ, একটা জায়গায় যদি যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হয় তাহলে সেখানকার অর্থনৈতিক অবস্থা এমনিতেই উন্নত হয়। এটাই হলো বাস্তবতা।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন, পদ্মা সেতু জাতীয় অর্থনীতি জোরদারে বিশেষ করে দক্ষিণাঞ্চলের জনগনের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনে অবদান রাখবে। তিনি আরও বলেন, দক্ষিণাঞ্চলের জনগণকে উন্নত জীবন উপহার দিতে আমরা চাই।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশের জনগণের সার্বিক উন্নয়নের লক্ষে কাজ করছি। আমরা উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি লাভ করেছি এবং আমাদেরকে আরো সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। দেশের একজন লোকও গৃহহীন ও ক্ষুধার্ত থাকবেনা।’ আগামী ২৫ জুন পদ্মা সেতু উদ্বোধনের প্রসঙ্গে তিনি সকলকে ধৈর্য ধারণের আহবান জানিয়ে বলেন, সেতু উদ্বোধনের পর সেখানে গাড়ি নিয়ে অসুস্থ প্রতিযোগিতা কেউ যেন না করেন, যাতে কোন ধরণের দুর্ঘটনা না ঘটতে পারে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই উৎসব কেবল পদ্মা পারেই হবে না, সারা দেশের প্রত্যেক জেলায় এই সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মহোৎসব হবে। কারণ, এটা ছিল আমাদের জন্য একটা বিরাট চ্যালেঞ্জ। তিনি বলেন, বিশ্বের সবচেয়ে খরস্রোতা নদীগুলোর অন্যতম এই পদ্মায় বাংলাদেশ যে সেতু নির্মাণ করতে পারে সেটা অনেকেরই ধারণায় ছিল না। তারপর আবার সেতুটি একটি দ্বিতল সেতু, নীচ দিয়ে ট্রেন এবং ওপর দিয়ে গাড়ি চলাচল করবে। যেটা অত্যন্ত কঠিন একটি কাজ এবং পৃথিবীতে এ ধরনের কাজ বোধ হয় এটাই প্রথম। এখানে যে ধরণের মেশিনারিজ ব্যবহৃত হয়েছে, সেটাও বোধ হয় আর কোথাও হয়নি। আর এই সেতু নির্মাণে যে বাধা-বিপত্তি ছিল সেটাও আপনারা জানেন।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই সেতু করতে গিয়ে তাঁর ও তাঁর পরিবার এবং সরকারের বিরুদ্ধে মিথ্যা দুর্নীতির অভিযোগ আনা হলে তিনি চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে সেই অভিযোগ প্রমাণের আহবান জানান। কারণ, আমরা এখানে (রাষ্ট্র পরিচালনায়) দুর্নীতি করতে আসিনি, দেশের মানুষের ভাগ্য গড়তে এসেছি, বলেন তিনি।

পদ্মা সেতুর অর্থায়ন বন্ধ এবং বিশ্বব্যাংকের ভুয়া দুর্নীতির অভিযোগের পেছনে নোবেল বিজয়ী ড. ইউনুসের যোগসাজসের অভিযোগ পুনরায় উত্থাপন করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুর্ভাগ্যের বিষয় হচ্ছে, সবচেয়ে বেশি সুযোগ-সুবিধা আমিই তাকে দিয়েছি। যেমন গ্রামীণ ফোন, এই ব্যবসাটা আমার আমলে আমি তাকে দিয়েছিলাম এবং তাকে অনেক সুযোগ সুবিধা দেয়া হয়েছিল। তারই বেইমানির কারণে এই পদ্মা সেতুর টাকা বিশ্ব ব্যাংক বন্ধ করে দেয়।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার যখন পদ্মা সেতু নিজস্ব অর্থায়নে করার ঘোষনা দেয় তখন দেশবাসী সে সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানিয়ে এগিয়ে এসেছিল। তিনি দেশবাসীর প্রতি ও কৃতজ্ঞতা জানান এবং বলেন, সেই সময় দেশবাসীর থেকে অভূতপূর্ব সাড়া যদি আমি না পেতাম তাহলে এটা আমি করতে পারতাম না। এটাই আমাকে সাহস জুগিয়েছিল, শক্তি জুগিয়েছিল। কারণ মানুষের শক্তিতেই আমি বিশ্বাস করি।

পল্লী জনপদ রংপুর প্রসঙ্গে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেন, রংপুর, রাজশাহী ও ঢাকা বিভাগে ২৪৭ কোটি টাকা ব্যয়ে তিনটি পল্লী জনপদ প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। এর মধ্যে পল্লী জনপদ রংপুর প্রকল্পের কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে।

মোট ২৭২ জন সুবিধাভোগী পল্লী জনপদ রংপুর প্রকল্পের আওতায় সমবায় সমিতির ভিত্তিতে কম মূল্যে মোট খরচের ৩০ শতাংশ পরিশোধ করে আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত ফ্ল্যাট পেয়েছেন এবং বাকি টাকা আগামী ১৫ বছরে পরিশোধ যোগ্য।

দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম জেলা গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় বাপার্ড উদ্বোধনের পর তিনি বলেন, পদ্মা সেতু প্রতিষ্ঠানটি দারিদ্র্য বিমোচন, গবেষণা ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি সংক্রান্ত কার্যক্রমকে এগিয়ে নিতে সাহায্য করবে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাপার্ড এর পাশাপাশি পল্লী জনপদ প্রকল্প যা সমবায়ের ভিত্তিতে গঠিত, তাঁর মস্তিস্ক প্রসূত হলেও এটি জাতির পিতার ‘বাধ্যতামূলক গ্রাম সমবায় নীতি’র পদাংক অনুসরণ করেই করা। তিনি বলেন, গ্রাম সমবায় ধারণার আওতায় জনগণকে কর্মসংস্থানের পাশাপাশি বাসস্থানের ব্যবস্থা করে উন্নত ও সমৃদ্ধ জীবন দেয়ার পরিকল্পনা ছিল বঙ্গবন্ধুর।

‘বাধ্যতামূলক গ্রাম সমবায়’র খসড়া তাঁর কাছে রয়েছে উল্লেখ করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু দেশের সব আবাদি জমিকে সমবায়ের আওতায় আনার কথা ভেবেছিলেন, তবে প্রকৃত মালিকদের নামে জমির মালিকানা বজায় থাকবে। তিনি বলেন, খসড়া অনুযায়ী সমবায়ের অধীনে জমি চাষ করা হবে এবং উৎপাদিত খাদ্যশস্য তিনটি ভাগে ভাগ করে বন্টন করা হবে।

বঙ্গবন্ধু সমবায়ের আওতায় কৃষিকে যান্ত্রিকীকরণ করতে চেয়েছিলেন কারণ, তিনি বলতেন পরিবার বিভাজনের কারণে আবাদি জমির পরিমান দিনকে দিন কমে আসছে। এক্ষেত্রে জমির ‘আইল’ (সীমানা প্রাচীর) গুলো একত্রিত করলে সেটা বৃহত্তর ফরিদপুর জেলার চেয়েও বড় হবে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশকে একটি দারিদ্র্য ও ক্ষুধামুক্ত দেশে পরিণত করে জনগণকে একটি সুন্দর ও উন্নত জীবন দেয়ার স্বপ্ন দেখতেন জাতির পিতা। তাঁর সমগ্র জীবন দেশ ও দেশবাসীর কল্যাণে উৎসর্গ করেছিলেন তিনি। তিনি বলেন, এ কথা মাথায় রেখে বঙ্গবন্ধু একটি কর্মসূচি গ্রহণ করেছিলেন যাকে তিনি দ্বিতীয় বিপ্লব হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন। যার মূল লক্ষ্য ছিল অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু সব মহাকুমাকে জেলায় রুপান্তরিত করেন এবং জেলাগুলোর সার্বিক উন্নয়ন সংক্রান্ত কার্যক্রম তদারকির জন্য জেলা গভর্ণর নিয়োগ দিয়েছিলেন। যেখানে কেন্দ্রীয় সরকার তাদের প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহায়তা দেবে এবং এভাবে ক্ষমতা তৃণমূলের মানুষের কাছে বিকেন্দ্রীকরণ করা হবে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেন, এর মাধ্যমে একটি বিশাল পরিবর্তন সাধিত হতে পারতো এবং ’৭৫ এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতা সপরিবারে নির্মম হত্যাকান্ডের শিকার না হলে স্বাধীন হবার ১০ বছরের মধ্যেই বাংলাদেশ একটি উন্নত দেশে পরিণত হতে পারতো।