সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দিচ্ছেন ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বিপিএম (বার), পিপিএম (বার)। ছবি : ডিএমপি

রাজধানীতে বিশেষ অভিযান চালিয়ে ১ কোটি ২০ লাখ টাকার জাল রেভিনিউ স্ট্যাম্প, ২৭ লাখ টাকার জাল নোট, বিদেশি মুদ্রা এবং জাল নোট ও স্ট্যাম্প তৈরির সরঞ্জামসহ জালিয়াতি চক্রের চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা (ডিবি) তেজগাঁও বিভাগের একটি দল।

শনিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১টার দিকে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বিপিএম (বার), পিপিএম (বার) জানান, গত বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর দারুস সালাম এলাকা থেকে আসামিদের গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা তেজগাঁও বিভাগের সংঘবদ্ধ অপরাধ, গাড়ি চুরি প্রতিরোধ ও উদ্ধার টিম।

আসামিরা হলেন উজ্জ্বল দাস, আব্দুর রশিদ, মো. মমিনুল ইসলাম ও শাহ মো. তুহিন আহমেদ ওরফে জামাল।

গ্রেপ্তারের সময় তাঁদের কাছ থেকে ১ কোটি ২০ লাখ টাকার জাল রেভিনিউ স্ট্যাম্প; ২৭ লাখ টাকার জাল নোট, জাল টাকা বানানোর দুটি তামার প্লেট, ১৩টি স্ক্রিন ফ্রেম ও সিকিউরিটি সুতা; দুটি জাল রেভিনিউ স্ট্যাম্প তৈরির পজিটিভ (ফর্মা), ৯টি ফয়েল পেপার, জাল টাকা কাটার কাজে ব্যবহৃত দুটি গ্লাস, ১০টি ট্রেচিং পেপার, ২৫টি রঙের কৌটা, একটি হটগান, একটি লেমিনেটিং মেশিন, একটি ল্যাপটপ, একটি প্রিন্টার, দুটি ডাইস, ১০টি স্ক্রিন তৈরির কাপড়, সিকিউরিটি সুতাযুক্ত ১ হাজার পাতা সাদা কাগজ এবং রেভিনিউ স্ট্যাম্প ও বিদেশি জাল মুদ্রা তৈরির বিভিন্ন উপকরণ জব্দ করা হয়।

অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বিপিএম (বার), পিপিএম (বার) বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রাজধানীর দারুস সালাম এলাকায় অভিযান চালিয়ে জাল নোট ও জাল রেভিনিউ স্ট্যাম্প তৈরির জালিয়াতি চক্রের হোতা উজ্জ্বল দাসকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে দারুস সালাম এলাকার একটি বহুতল ভবনের ফ্ল্যাট বাসায় অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন দেশের জাল মুদ্রা, রেভিনিউ স্ট্যাম্প তৈরির সরঞ্জামসহ রশিদ, মমিনুল ও তুহিনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা জানান, মতিঝিল থেকে প্রয়োজনীয় কাগজ, নয়াবাজার ও মিটফোর্ট থেকে রং, ফয়েল ও পজিটিভ সংগ্রহ করে জাল নোট ও জাল রেভিনিউ স্ট্যাম্প তৈরি করতেন। বর্তমান বিশ্ববাজারে ডলার সংকটের সুযোগ নিয়ে ভারতীয় জাল রুপি ও মার্কিন জাল ডলার বিদেশে পাচার করতেন। ১০০ ও ২০০ টাকার জাল নোটও বানাতেন, যা খালি চোখে শনাক্ত করা প্রায় অসম্ভব।

জব্দ করা জাল নোট, রেভিনিউ স্ট্যাম্প, ল্যাপটপ ও সরঞ্জাম। ছবি : ডিএমপি

অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) বলেন, আসামিরা দীর্ঘদিন ধরে সংঘবদ্ধভাবে ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকায় স্বল্প মেয়াদে বাসা ভাড়া নিয়ে সিন্ডিকেট তৈরি করেন। এরপর বাংলাদেশি বিভিন্ন মূল্যমানের জাল নোট, ভারতীয় রুপি, মার্কিন ডলার, বিভিন্ন মূল্যমানের জাল রেভিনিউ স্ট্যাম্প তৈরি করে দেশের বিভিন্ন এলাকায় পাইকারি ও খুচরা বিক্রি করতেন। তাঁদের কাছ থেকে যে পরিমাণ জাল নোট ও সরঞ্জাম জব্দ করা হয়েছে, তা দিয়ে আগামী ঈদের আগে প্রায় ২০০ কোটি টাকার দেশি-বিদেশি জাল নোট ও রেভিনিউ স্ট্যাম্প বাজারজাত করা সম্ভব। তাঁদের বিরুদ্ধে দারুস সালাম থানায় সংশ্লিষ্ট আইনে মামলা করা হয়েছে।