গৃহকর্মীকে হত্যার অভিযোগে করা মামলায় গ্ৰেপ্তার হওয়া দম্পতি। ছবি: বাংলাদেশ পুলিশ

২ ডিসেম্বর সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় তুরাগ দিয়াবাড়ীর ঝাউবন এলাকা থেকে উদ্ধার করা অজ্ঞাতনামা এক তরুণীর (৩০) লাশের পরিচয় ও খুনের রহস্য ৭২ ঘণ্টার মধ্যে উদঘাটন করেছে পুলিশ।

ওই লাশ উদ্ধারের পর পিবিআইয়ের প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার, বিপিএম (বার), পিপিএমের নির্দেশনায় ঢাকা মেট্রোর (উত্তর) বিশেষ পুলিশ সুপার মো. জাহাঙ্গীর আলমের তত্ত্বাবধানে পুলিশ পরিদর্শক মোহাম্মাদ তরিকুল ইসলামের নেতৃত্বে লাশ শনাক্তের জন্য একটি জরুরি টিম পাঠানো হয়।

পিবিআইয়ের চৌকস দল তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে জানতে পারে, ওই নারীর নাম পারভীন ফেন্সি আরা। তিনি দিনাজপুরের চিরির বন্দরের আলোকডিহি ইউনিয়নের রমজান আলীর মেয়ে। লাশ শনাক্তের সঙ্গে সঙ্গে পিবিআইয়ের চৌকস তদন্ত দল তাৎক্ষণিকভাবে তদন্ত শুরু করে। ওই নারীর গ্রামের বাড়িতে তাঁর স্বামী মোমিনুলসহ অন্য আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে পারে, ফেন্সি এক-দেড় বছর আগে অভাবের কারণে স্বামী-সন্তানসহ ঢাকা শহরে চলে আসেন। ঢাকায় এসে তিনি গুলশান ১-এর নিকেতনের সৈয়দ জসীমুল হাসান (৬৩) নামের এক ব্যক্তির বাসায় গৃহকর্মীর কাজ করতেন।

প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, ১ ডিসেম্বর সকাল আনুমানিক ৯টার দিকে ঝগড়াঝাঁটির একপর্যায়ে গৃহকর্ত্রী সৈয়দা সামিনা হাসান (৬০) ফেন্সীকে লাঠি দিয়ে বেদম মারধর করেন। এতে ফেন্সী তাৎক্ষণিকভাবে জ্ঞান হারান এবং মারা যান। এরপর গৃহকর্তা ও গৃহকর্ত্রী সলাপরামর্শ করে লাশ গোপন করার উদ্দেশ্যে ড্রাইভার রমজান আলীর (৪১) সহায়তায় প্রাইভেট কারে করে তুরাগ দিয়াবাড়ী এলাকায় ঝাউবনে ফেলে আসেন।

ঘটনা তদন্তকালে আরও জানা যায়, ভিকটিম ফেন্সি আরার স্বামী মোমিনুল ঢাকা শহরে রিকশা চালাতেন। ফেন্সি ওই বাসায় কাজ নেওয়ার পর থেকে তিনি তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করতে পারতেন না। একদিন তাঁর স্ত্রী ফোনে জানান, তাঁকে ওই গৃহকর্ত্রী মারধর করে আটকে রাখেন। এ খবর পেয়ে তিনি গুলশান থানায় একটি সাধারণ ডায়েরিও করেন। এরপর তিনি একদিন ওই বাসায় গিয়ে তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে আসেন। কিন্তু এরপর আর কোনো দিন দেখা করতে পারেননি। পরে গত অক্টোবরে মোমিনুল তাঁর গ্রামের বাড়ি চলে যান।

জিজ্ঞাসাবাদে মোমিনুল আরও জানান, ওই বাসায় তাঁর স্ত্রী কাজ নেওয়ার পর থেকে গৃহকর্তা জসীমুল হাসান প্রতি মাসে তাঁর মোবাইলে বিকাশের মাধ্যমে এক হাজার টাকা করে পাঠাতেন। মোমিনুলের একমাত্র সন্তান তার দাদির কাছে থাকে।

এ ঘটনায় ফেন্সির স্বামী মোমিনুল ইসলাম বাদী হয়ে তুরাগ থানায় হত্যা মামলা করেছেন। ওই মামলা স্ব-উদ্যেগে পিবিআই ঢাকা মেট্রো (উত্তর) তদন্তভার গ্রহণপূর্বক পুলিশ পরিদর্শক মোহাম্মদ তরিকুল ইসলামকে তদন্তকারী কর্মকর্তা নিয়োগ করা হলে তিনি তাৎক্ষণিকভাবে তদন্ত কার্যক্রম শুরু করে এজাহারনামীয় দুই আসামিকে গ্ৰেপ্তার করেন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা হত্যার দায় স্বীকার করেছেন। আসামিদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী মামলার সংশ্লিষ্ট আলামত প্রাইভেট কার, একটি লাঠি ও একটি বিছানার চাদর ঘটনাস্থল থেকে জব্দ করেন।