সাতক্ষীরার শ্যামনগর থেকে গ্রেপ্তার হওয়া ঝিকরগাছার সুমাইয়া হত্যা মামলার প্রধান আসামি বাপ্পি। ছবি: যশোর জেলা পুলিশ

যশোরের ঝিকরগাছায় সুমাইয়া হত্যা মামলার প্রধান আসামি বাপ্পিসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত ২৫ মার্চ সকালে ঝিকরগাছা থানাধীন চাঁপাতলা গ্রামে ঝিনুকদাহ মাঠে অজ্ঞাতনামা এক নারীর লাশ উদ্ধার করা হয়। পরে জানা যায়, ওই নারীর নাম সুমাইয়া আক্তার (২৭)। তিনি যশোরের শার্শার রেজাউলের মেয়ে। তাঁর স্বামীর নাম আইয়ুব হোসেন। আইয়ুবের বাড়ি শার্শার বুরুজবাগান গ্রামে। এ ঘটনায় সুমাইয়ার বাবা রেজাউল বাদী হয়ে সুমাইয়ার ‌’বয়ফ্রেন্ড’ বাপ্পিকে আসামি করে মামলা করেন। পরে জেলার পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জেয়ারদার, বিপিএম (বার), পিপিএম ঘটনার রহস্য উদঘাটনের জন্য থানা-পুলিশ ও ডিবিকে কঠোর দিক-নির্দেশনা প্রদান করেন।
পুলিশ সুপারের দিক-নির্দেশনায় ঝিকরগাছা থানার ওসি ও জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের ওসির তত্ত্বাবধানে ডিবি ও থানা পুলিশ যৌথ অভিযান চালিয়ে এ ঘটনায় জড়িত আসামী আঞ্জুয়ারা বেগমকে গত ১ এপ্রিল গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করলে তিনি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। তাঁর দেওয়া তথ্য ও গোপন তথ্যের ভিত্তিতে ডিবির এসআই শামীমের নেতৃত্বে একটি একটি চৌকশ দল গতকাল ভোরে সাতক্ষীরার শ্যামনগর থানাধীন বংশীপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে চোরাই পথে সীমান্তবর্তী ভারতে পালানোর সময় প্রধান আসামী আলামিন- বাপ্পিকে গ্রেপ্তার করা হয়। পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বাপ্পি হত্যার দায় স্বীকার করেন এবং তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী হত্যায় ব্যবহৃত মটরসাইকেলটি লুকিয়ে রাখার দায়ে তাঁর চাচা জুয়েলকে আটক করে মটরসাইকেলটি উদ্ধার করা হয়। এ ছাড়াও হত্যায় ব্যবহৃত চাকুটি (ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধারকৃত) যে দোকান থেকে কেনা হয়েছিল, সেই দোকান থেকে চাকুর বক্স উদ্ধারসহ ঘটনার সত্যতা যাচাই করা হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ২০১২ সাল থেকে সুমাইয়ার সঙ্গে বাপ্পির প্রেমের সম্পর্ক ছিল। ২০১৫ সালে বাপ্পি বিদেশে চলে গেলে সুমাইয়ার বিয়ে হয় আইয়ুব হেসেনের সঙ্গে। সেই ঘরে তাদের একটি পুত্র সন্তান হয়। ২০১৮ সালে বাপ্পি দেশে ফিরে সুমাইয়ার মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে সুমাইয়ার সঙ্গে পুনরায় যোগাযোগ স্থাপন করে। এক পর্যায়ে এক বছর আগে সুমাইয়া ঘর সংসার ছেড়ে বাপ্পির কাছে চলে আসে। তাঁরা যশোর শহরে ভাড়া বাসায় বাস করতে থাকেন।
বাপ্পির দাবি, বাপ্পির সঙ্গে সুমাইয়াও মাদকাসক্ত হয়ে একাধিক ছেলের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করে। যে কারনে রাগে ক্ষোভে সুমাইয়াকে হত্যার পরিকল্পনা করেন তিনি। গত ২৪ মার্চ সুমাইয়াকে ডেকে নিয়ে বেনাপোল পুটখালী এলাকায় গিয়ে ফেনসিডিল সেবন করিয়ে বিভিন্ন এলাকায় ঘোরাফেরা করেন। রাত ১০টার দিকে চাঁপাতলা ঝিনুকদাহ মাঠে নিয়ে হাতের রগ কেটে ও জবাই করে হত্যা করেন সুমাইয়াকে।