কাটাখালী থানা-পুলিশের হেফাজতে গ্রেপ্তার ছিনতাইকারী চক্রের ৮ সদস্য। ছবি: বাংলাদেশ পুলিশ

রাজশাহী মহানগরীতে অটোরিকশা ছিনতাইয়ের অভিযোগে ছিনতাইকারী চক্রের ৮ জন সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) কাটাখালী থানা-পুলিশ। সোমবার (৮ মে) দিনব্যাপী অভিযান পরিচালনা করে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। খবর আরএমপি নিউজের।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন মুকুল হোসেন (৩৫), রাব্বী আলী (২৮), শিহাব আলী (২১), নাজমুল ইসলাম (২৪), নাজিউর রহমান মৃদুল (২২), রকি (২৮), সুমাইয়া আক্তার রিমা (২৪) ও আশরাফ আলী (৫৪)।

মুকুল রাজশাহী মহানগরীর পবা থানার মারিয়া এলাকার আসলাম আলীর ছেলে, বর্তমানে সে কাটাখালী থানার শ্যামপুর থান্দারপাড়ার বাসিন্দা। রাব্বী কাটাখালী থানার শ্যামপুর থান্দারপাড়ার মৃত নাসের আলীর ছেলে এবং একই এলাকার মৃত পালানের ছেলে শিহাব। নাজমুল মতিহার থানার চরশ্যামপুর এলাকার শুকচাঁদের ছেলে এবং ডাসমারী পূর্বপাড়ার মুনছুর রহমানের ছেলে নাজিউর। রকি শ্যামপুর থান্দারপাড়ার আশরাফ আলীর ছেলে ও রকির স্ত্রী সুমাইয়া আক্তার রিমা এবং সমসাদীপুর এলাকার মৃত মোতালেব আলীর ছেলে আশরাফ।

জানা যায়, রাজশাহী মহানগরীর মতিহার থানাধীন পশ্চিম বুধপাড়া এলাকার অটোরিকশাচালক শাহাজ উদ্দিন (৪৫) গত শনিবার (৬ মে) রাত ৭টা ৪৫ মিনিটে শহরের সাহেববাজারের রহমানিয়া হোটেলের সামনে ভাড়ার জন্য অপেক্ষা করছিলেন। এ সময় তিন ছিনতাইকারী যাত্রীবেশে তাঁকে কাটাখালী থানার মাহেন্দ্রা পুলিশ ফাঁড়ি এলাকায় ভাড়ায় যাওয়ার কথা বললে তিনি ওই তিনজনকে নিয়ে রওনা হন। রাত ৯টায় মাহেন্দ্রা বাইপাস মহাসড়ক এলাকায় পৌঁছালে ছিনতাইকারীরা তাঁকে থামতে বলেন। সেখানে তাঁরা অটোরিকশা থেকে নেমে একটি দোকান থেকে সিগারেট নিয়ে আবার ফিরে আসেন। হঠাৎ যাত্রীবেশে অটোরিকশার পেছনে বসে থাকা দুজন ছিনতাইকারী চালক শাহাজ উদ্দিনকে গামছা দিয়ে দুই হাত বেঁধে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় কিলঘুষি মারতে থাকেন।

তাঁরা তাঁকে খুন করার ভয় দেখিয়ে টাকা ও মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে দৌড়ে হরিয়ানের দিকে চলে যান। অটোরিকশার সামনে যাত্রীবেশে বসে থাকা তাঁদের অপর সহযোগী অটোরিকশা নিয়ে বেলপুকুরের দিকে চলে যান। এ-সংক্রান্ত ভুক্তভোগী শাহাজ উদ্দিন কাটাখালী থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।

এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে উপ-পুলিশ কমিশনার (মতিহার) মধুসুদন রায়ের নির্দেশনায় অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার একরামুল হকের (পিপিএম) তত্ত্বাবধানে কাটাখালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জাহাঙ্গীর আলমের নেতৃত্বে উপপরিদর্শক (এসআই) আকতার আলী ও তাঁর টিম আসামিদের গ্রেপ্তার ও অটোরিকশা উদ্ধার অভিযানে নামেন।

কাটাখালী থানার ওই টিম আরএমপির সাইবার ক্রাইম ইউনিটের সহায়তায় আসামিদের শনাক্ত করে। এরপর ৮ মে বিকেল ৪টার দিকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মহানগরীর কাটাখালী থানার শ্যামপুর থান্দারপাড়া এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে আসামি শিহাব আলীকে গ্রেপ্তার করে। এ সময় শিহাবের কাছ থেকে ছিনতাই হওয়া মোবাইল ফোনটি উদ্ধার হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে শিহাব জানান, তাঁর অপর দুজন সহযোগী মুকুল ও রাব্বী। তাঁরা তিনজন একত্রে এই ছিনতাইয়ের ঘটনাটি ঘটায়। শিহাবের দেওয়া তথ্যমতে কাটাখালী থানার ওই টিম বিকেল ৫টার দিকে শ্যামপুর থান্দারপাড়া এলাকা থেকে মুকুল ও রাব্বীকে গ্রেপ্তার করে।

জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা তিনজন ছিনতাইয়ের ঘটনা স্বীকার করেন। তাঁরা আরও জানান, ছিনতাই করা অটোরিকশা বিক্রয়ের জন্য তাঁদের সংঘবদ্ধ চক্রের সহযোগী নাজমুল হোসেন, নাজিউর রহমান মৃদুল, রকি ও সুমাইয়া আক্তার রিমাকে দিয়েছেন। আসামিরা অটোরিকশাটি খুলে ছোট ছোট অংশে বিভক্ত করার জন্য সুমাইয়া আক্তার রিমার বাড়িতে রেখেছে বলেও জানান।

তাঁদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে কাটাখালী থানা-পুলিশ শ্যামপুর থান্দারপাড়ায় অভিযান পরিচালনা করে সুমাইয়া আক্তার রিমা ও তাঁর স্বামী রকি এবং ভাই নাজমুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে। এ সময় সেখান থেকে অটোরিকশার ব্যাটারিছাড়া বিভিন্ন অংশ উদ্ধার হয়। এরপর সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে অপর সহযোগী নাজিউরকে গ্রেপ্তার করা হয়।

জিজ্ঞাসাবাদে আসামি সুমাইয়া আক্তার রিমা জানান, ছিনতাই করা অটোরিকশার ব্যাটারিটি তাঁদের সহযোগী আশরাফ আলীর মোটর পার্টসের দোকানে বিক্রয়ের জন্য আশরাফ আলীকে দিয়েছেন। এরপর কাটাখালী থানা-পুলিশের ওই টিম অভিযান পরিচালনা করে আসামি আশরাফ আলীকে গ্রেপ্তার করে এবং চারটি ব্যাটারি উদ্ধার করে।

গ্রেপ্তার আসামিরা সংঘবদ্ধ ছিনতাই চক্রের সদস্য। তাঁদের বিরুদ্ধে কাটাখালী থানায় একটি ছিনতাই মামলা দায়ের করা হয়েছে।