মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে একটানা গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত আছে বলেই আজকের উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে। ’৭৫ সাল থেকে গণতন্ত্রের ধারা অব্যাহত থাকতে পারেনি। রাজনীতিতে স্থিতিশীলতা থাকতে পারেনি। কাজেই বাংলাদেশ সেভাবে এগোতে পারেনি। যারা ক্ষমতায় ছিল, তারা বাংলাদেশকে নিয়ে কী চিন্তা করে, সেটি নিয়ে প্রশ্ন ছিল। মুক্তিযুদ্ধের সময় অনেক দেশ আমাদের সমর্থন করেনি। তাদের বক্তব্য ছিল, বাংলাদেশ স্বাধীন হয়ে কী হবে?

বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে স্বাধীনতা পুরস্কার-২০২৩ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। খবর জাগো নিউজের।

শেখ হাসিনা বলেন, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের পর করোনার ধাক্কা, এরপর ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে আমাদের দেশের অগ্রযাত্রা কিছুটা ব্যাহত হয়েছে। এরপরও আমরা চেষ্টা করছি অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে। আমরা যা করছি, সব পরিকল্পিতভাবে করছি। আমাদের সরকার সব সময় গবেষণায় জোর দিচ্ছে। বিষয়ভিত্তিক গবেষণায় আমরা জোর দিয়েছি।

করোনার ক্ষতির কথা তুলে ধরে সরকারপ্রধান বলেন, করোনার সময় আমরা মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি। রমজানে এক কোটি পরিবারকে কম মূল্যে পণ্য দিচ্ছি। আমরা ভর্তুকি দিয়ে রমজানের পণ্য তাদের হাতে তুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করছি। আমরা মানুষের কষ্ট যখন দেখি, তখন তা কীভাবে লাঘব করব, সে কাজ আমরা করছি।

নিজেদের টাকায় পদ্মা সেতু করার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, অনেকে তখন বলেছিলেন, বাংলাদেশের টাকায় পদ্মা সেতু নির্মাণ সম্ভব না। কিন্তু আমরা আত্মবিশ্বাস নিয়ে কাজ করেছি। আমরা বলেছিলাম, নিজেদের টাকায় সেতু করব। বঙ্গবন্ধু তাঁর বক্তব্যে বলেছিলেন, কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না। আমরা পদ্মা সেতু করে দেখিয়ে দিয়েছি, বাংলাদেশ পারে। কেউ দাবায়ে রাখতে পারে নাই।

স্বাধীনতা পদক-২০২৩ পেলেন যাঁরা:

এবার ‘স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ’ ক্ষেত্রে স্বাধীনতা পুরস্কার পেলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা কর্নেল (অব.) সামসুল আলম, মরহুম লেফটেন্যান্ট এ জি মোহাম্মদ খুরশীদ, শহীদ খাজা নিজামউদ্দিন ভূইয়া এবং মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া (বীর বিক্রম)। সামসুল আলমের পক্ষে তাঁর স্ত্রী লায়লা বিলকিস এবং খাজা নিজামউদ্দিন ভূইয়ার পক্ষে ছোট ভাই হাসান মঈনুদ্দিন ভূইয়া পুরস্কার নেন।

‘সাহিত্য’ ক্যাটাগরিতে মরহুম ড. মুহাম্মদ মঈনুদ্দিন আহমেদ (সেলিম আল দীন) এবং ‘সংস্কৃতি’তে পবিত্র মোহন দে এবং ‘ক্রীড়া’য় এ এস এম রকিবুল হাসান স্বাধীনতা পুরস্কার পেয়েছেন। সেলিম আল দীনের ভাই বোরহান উদ্দিন আহমেদ পুরস্কার নেন।

‘সমাজসেবা/জনসেবা’ ক্ষেত্রে পুরস্কার পেয়েছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর। অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিনের হাতে পুরস্কার তুলে দেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী।

এ ছাড়া ‘গবেষণা ও প্রশিক্ষণ’ ক্যাটাগরিতে নাদিরা জাহান (সুরমা জাহিদ) এবং ড. ফিরদৌসী কাদরী স্বাধীনতা পুরস্কার পেয়েছেন।

২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে সরকার ১৯৭৭ সাল থেকে প্রতিবছর এ পুরস্কার দিয়ে আসছে। স্বাধীনতা পুরস্কারের ক্ষেত্রে পুরস্কারপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে ৫ লাখ টাকা, ১৮ ক্যারেট মানের ৫০ গ্রাম স্বর্ণের পদক, পদকের একটি রেপ্লিকা ও একটি সম্মাননাপত্র দেওয়া হয়।

অনুষ্ঠানে পদকপ্রাপ্ত সুধীজনের নাম ঘোষণা ও পরিচিতি পাঠ করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন। ‘গবেষণা ও প্রশিক্ষণ’-এ পুরস্কার পাওয়া ফিরদৌসী কাদরী প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।

অনুষ্ঠানে মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, বিচারপতি, জাতীয় সংসদ সদস্য, বিদেশি কূটনীতিক, সরকারের পদস্থ সামরিক এবং বেসামরিক কর্মকর্তা, মুক্তিযোদ্ধা, রাজনীতিবিদ, কবি-সাহিত্যিক-বুদ্ধিজীবী, দেশবরেণ্য ব্যক্তিত্বসহ আমন্ত্রিত অতিথিরা উপস্থিত ছিলেন।