“নারী সম-অধিকার, সমসুযোগ—এগিয়ে নিতে হোক বিনিয়োগ” প্রতিপাদ্য সামনে রেখে আজ ৮ মার্চ শুক্রবার বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী আন্তর্জাতিক নারী দিবস-২০২৪ পালিত হচ্ছে।

আজ শুক্রবার বসন্তের রৌদ্র উজ্জ্বল স্নিগ্ধ সকালে খুলনার বয়রায় পুলিশ লাইনস ডাইনিং লাউঞ্জ-০১ এ খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের ব্যাপক আয়োজনের মধ্য দিয়ে “আন্তর্জাতিক নারী দিবস-২০২৪’’ উদযাপিত হয়। এ উপলক্ষে সকাল সাড়ে ৮টায় নগরীর বয়রা বাজার মোড় থেকে এক বর্ণাঢ্য র‌্যালি বের হয়ে সড়ক প্রদক্ষিণ করে বয়রার পুলিশ লাইনসে এসে শেষ হয়। এরপর বেলুন ও ফেস্টুন উড্ডয়ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের শুভ উদ্বোধন করেন খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. মোজাম্মেল হক, বিপিএম (বার), পিপিএম-সেবা মহোদয় ঘোষণা করেন।

আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদযাপন উপলক্ষে নারী অফিসার ও পুলিশ সদস্যদের ফুলেল শুভেচ্ছা প্রদানের মধ্য দিয়ে আয়োজিত বিশেষ আলোচনা সভার কার্যক্রম শুরু হয়। উক্ত আলোচনা সভায় খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. মোজাম্মেল হক, বিপিএম (বার), পিপিএম-সেবা উপস্থিত সকলকে সালাম ও শুভেচ্ছা জানিয়ে বক্তব্য দেন। তিনি বক্তব্যে বলেন,“রাষ্ট্রের যে সামগ্রিক উন্নয়ন, সে উন্নয়নের কোনো কিছুই নারীর অংশগ্রহণ ছাড়া সম্ভব হয় না। প্রকৃতপক্ষে এই পৃথিবীতে সভ্যতার ক্রম-বিকাশের শুরুর দিকে কিন্তু মাতৃতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা ছিল। এই মাতৃতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা পরবর্তীকালে সভ্যতার ক্রমবিকাশে বিলুপ্ত হয়। কিন্তু একটা জাতিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে বা একটি পরিবারকে সুখী হতে হলে এবং সমাজব্যবস্থাকে পরিপূর্ণ শান্তির বাতায়নে আনতে হলে নারী-পুরুষের যৌথ অংশীদারত্ব নিশ্চিত করতে হবে। নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়া নারীদের শিক্ষার জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। তার সমগ্র জীবনে নারীদের ঘর থেকে বের করে এনে মূল স্রোতোধারায় শামিল করার জন্য চেষ্টা করেছেন।

সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই দেশকে নেতৃত্ব দিয়ে সার্বভৌম বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলেছিলেন। এই স্বাধীন বাংলাদেশ গঠন করার পরে সংবিধানে নারী এবং পুরুষের সম-অধিকার নিশ্চিত করেছিলেন। নারীদের কল্যাণ করতে পিছিয়ে থাকা নারীদের সম-অধিকার দেওয়ার সাথে সাথে চাকরিসহ বিভিন্ন সেক্টরে বিভিন্ন কোটার মাধ্যমে এটা নিশ্চিত করেন। আমরা জানি, ১৯৭৪ সালে জাতির পিতার সময় পুলিশ বাহিনীতে ১৪ জন নারী যোগদান করেন এবং ১৯৮৬ সালে ৪ জন বিসিএস নারী অফিসার পুলিশ বাহিনীতে যোগদান করেন। পরবর্তী সময়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে নারীদের পুলিশ বাহিনীতে যোগদানের ব্যবস্থা করেন। বর্তমানে পুলিশ বাহিনীতে এডিশনাল আইজিপি, ডিআইজি, এডিশনাল ডিআইজি, পুলিশ সুপারসহ সকল পদমর্যাদা নিয়ে প্রায় ১৮ হাজারের বেশি নারী পুলিশ সদস্য কর্মরত রয়েছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শুধু পুলিশেই নারীদের পদায়ন করেননি, তিনি অন্যান্য চাকরিতে নারীদের মূল্যায়ন করেছেন। যেমন নৌবাহিনী, সেনাবাহিনীর মতো জায়গায় শুধু অফিসার না নাবিক হিসেবেও কর্মরত রয়েছে। তিনি সর্বস্তরের নারীর যে ক্ষমতায়ন, নারীর যে মূল্যায়ন, এটা নিশ্চিত করতে গিয়ে সরাসরি জাতীয় নির্বাচনে ২৩ জন নারী এমপিকে সরাসরি নির্বাচিত করে সংসদে নিয়ে গেছেন। মহান সংসদে আরও ৫০টি সংরক্ষিত নারী আসন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পরে বৃদ্ধি করেছেন। পাশাপাশি তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে নারীদের নিয়োগ দিয়েছেন। এভাবে গুরুত্বপূর্ণ সব জায়গায় নারীদের মূল্যায়ন করেছেন এবং এমন কোনো ক্ষেত্র নেই, যেখানে নারীদের তিনি সুযোগ দেননি। তাঁরা কিন্তু চাকরির পাশাপাশি স্ত্রী হিসেবে, মা হিসেবে ও বোন হিসেবে দায়িত্ব পালনসহ সংসারের কাজ করে যাচ্ছেন।

তোমাদেরই কাজ করতে হবে এবং কাজের মাধ্যমে দক্ষতার প্রমাণ করতে হবে যে তোমরা পারো। তোমরা নারী হিসেবে নয়, একজন যোগ্য পুলিশ সদস্য হিসেবে যে সকল নারী ভিকটিম পুলিশে সেবা নেওয়ার জন্য আসেন। তাদের কথা যেভাবে বুঝতে পারবে বা তোমাদের সাথে সে যেভাবে আলোচনা করতে পারবে, সেটি মানুষের সাথে বলতে পারবে না। সে জন্য আমি চাই, তোমরা তাদের সমস্যাটি নিজেদের মধ্যে ধারণ করো শ্রবণ করো এবং সমাধানের চেষ্টা করো। পাশাপাশি অস্ত্র, মাদক, জঙ্গি ও নাশকতাকারী সকলকে আইনের আওতায় আনার জন্য তোমরা ভূমিকা পালন করে প্রমাণ করবা যে আমরা নারী, আমরাও পারি। আমরা ডিসিপ্লিন নিয়ে কোনো কম্প্রোমাইজ করবো না। আমরা কঠোরভাবে ডিসিপ্লিন মেনে চলব এবং আমরা এমন কিছু করব না যাতে নারীরা তোমাদেরকে দেখে এই চাকরিতে আসতে অনিচ্ছা ও অনীহা প্রকাশ করে। আমি আশা করব, তোমরা তোমাদের মেধা, যোগ্যতা ও বুদ্ধিমত্তা কাজে লাগিয়ে কেএমপিকে জঙ্গিমুক্ত, মাদকমুক্ত, ইভ টিজিং ও কিশোর গ্যাংমুক্ত যুগোপযোগী সেবা প্রতিষ্ঠানে গড়ে তুলবে। আমি আবার বিশ্ব নারী দিবসে নারী সদস্যদেরকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।”

এ ছাড়া আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদযাপন উপলক্ষো আলোচনা সভায় উপস্থিত বক্তারা মূল্যবান বক্তব্য প্রদান করেন। বক্তারা সর্বক্ষেত্রে নারীদের পদায়নসহ তাদের মেধা, যোগ্যতা ও বুদ্ধিমত্তা কাজে লাগিয়ে মাদক, সন্ত্রাস, নাশকতা, জুয়া, কিশোর গ্যাং, বাল্যবিবাহ, নারী ও শিশু নির্যাতন, সাম্প্রদায়িকতামুক্ত, জঙ্গিবাদ ও দুর্নীতিমুক্ত এবং উন্নত, সুখী-সমৃদ্ধ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যাশা জানিয়ে সকল নারী পুলিশ সদস্যকে সম্মিলিতভাবে কাজ করার আহ্বান জানান।

অনুষ্ঠানে কেএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক এন্ড প্রটোকল) জনাব মোছা. তাসলিমা খাতুন; ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (সদর) অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন; ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (লজিস্টিকস অ্যান্ড সাপ্লাই) অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতি প্রাপ্ত এম.এম শাকিলুজ্জামান; ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (এফএন্ডবি) শেখ মনিরুজ্জামান মিঠু; ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম; ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মনিরা সুলতানা; ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (আরসিডি) শাহরিয়ার মোহাম্মদ মিয়াজীসহ বিভিন্ন পদমর্যাদার পুলিশ অফিসারবৃন্দ, নারী পুলিশ সদস্যবৃন্দ এবং প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকেরা উপস্থিত ছিলেন।