“পুলিশ জনতা ঐক্য করি, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলি” এই মূলমন্ত্রকে সামনে রেখে আজ ৪ নভেম্বর শনিবার দেশব্যাপী কমিউনিটি পুলিশিং ডে-২০২৩ পালিত হচ্ছে।

সকালে কেএমপি, খুলনার বয়রাস্থ পুলিশ লাইন্স মাল্টিপারপাস হলে খুলনা মহানগর কমিউনিটি পুলিশিং ফোরাম এবং খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের ব্যাপক আয়োজনের মধ্যদিয়ে “কমিউনিটি পুলিশিং ডে-২০২৩” উদযাপিত হয়।

এ উপলক্ষ্যে সকাল ৯টায় নগরীর বয়রা বাজার মোড় থেকে এক বর্ণাঢ্য র‍্যালি শুরু হয়ে সড়ক প্রদক্ষিণ করে কেএমপি’র বয়রার পুলিশ লাইন্সে এসে শেষ হয়। এরপর বেলুন ও ফেস্টুন ওড়ানোর মধ্য দিয়ে “কমিউনিটি পুলিশিং ডে-২০২৩” এর শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করা হয়।
অনুষ্ঠানের শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেন প্রধান অতিথি খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক এবং খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. মোজাম্মেল হক, বিপিএম (বার), পিপিএম-সেবা।

পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত এবং ভগবত গীতা পাঠের মধ্য দিয়ে কমিউনিটি পুলিশিং ডে উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত বিশেষ আলোচনা সভার কার্যক্রম শুরু হয়।

আলোচনা সভার শুরুতে অনুষ্ঠানের সভাপতি খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. মোজাম্মেল হক, বিপিএম (বার), পিপিএম-সেবা উপস্থিত সকলকে সালাম ও শুভেচ্ছা জানিয়ে বক্তব্য রাখেন।

বক্তব্যের শুরুতে তিনি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালি ও স্বাধীনতা যুদ্ধের মহান স্থপতি বাঙ্গালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট স্বাধীনতার শত্রু কতিপয় ঘাতকের নির্মম বুলেটের আঘাতে শহীদ বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সকল শহীদের আত্মার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে তাদের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন। একই সাথে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের প্রথম প্রহরে মুক্তিযুদ্ধের প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ যুদ্ধে শহীদ সকল পুলিশ সদস্যসহ ৩০ লক্ষ শহীদ মুক্তিযোদ্ধার আত্মার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে রুহের মাগফিরাত কামনা করেন।

পুলিশ কমিশনার তার বক্তব্যে বলেন, পুলিশের সঙ্গে জনগণের সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি ও অপরাধ দমনের অন্যতম কৌশল হিসেবে কমিউনিটি পুলিশিং বিশেষ ভূমিকা পালন করছে। ২০১৩ সালে স্বল্প পরিসরে পুলিশ সদরদপ্তরের উপ-মহাপরিদর্শক ডিআইজি আপরেশনের অধীনে পৃথক শাখা হিসেবে কাজ শুরু করেছিল কমিউনিটি পুলিশিং। ২০১৪ সালে একজন সহকারী মহাপরিদর্শক এআইজির তত্ত্বাবধানে পাবলিক সেফটি অ্যান্ড প্রিভেনশন শাখার কার্যক্রম শুরু হয়। এটিই এখন কমিউনিটি অ্যান্ড বিট পুলিশিং নামে দেশব্যাপী কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে খুলনা মহানগরী এলাকায় ১০২ টি কমিটিতে মোট ১ হাজার ৮০৫ জন কমিউনিটি পুলিশের সদস্য হিসেবে কাজ করছে। তাদের কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে ওপেন হাউজ ডে’র মাধ্যমে স্থানীয় সমস্যা নিয়ে মতবিনিময় সভা, পুলিশের কাজে সহযোগিতা ও বাল্য বিবাহ রোধ, ইভটিজিং প্রতিরোধ, জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাস দমন, মাদকের কুফল, নারী নির্যাতন, যৌতুক নিরোধ, মোবাইল ফোনের অপব্যবহার এবং সামাজিক মূল্যবোধ সংক্রান্তে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। এ সকল কার্যক্রমের মাধ্যমে সমাজে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, বর্তমান সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শিতায় পুলিশ এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি পেশাদার, স্মার্ট এবং সক্ষম একটি বাহিনী। খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ শান্তিকামী মানুষের নির্বিঘ্নে চলাচল, জীবন জীবিকা পরিচালনা করায় সহায়তা ও নিরাপত্তা দিতে বদ্ধপরিকর। এক্ষেত্রে শান্তি বিনষ্টকারী ও নাশকতা সৃষ্টিকারী কোন অপশক্তিকে বিন্দুমাত্র কোন ছাড় দেওয়া হবে না। জনসাধারণের নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে এবং সকল প্রকার নাশকতা প্রতিহত করতে আমরা সদা প্রস্তুত। যেকোনো ধরনের নাশকতা এবং দুর্ভোগ মোকাবেলায় শতভাগ নিষ্ঠার সাথে পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে। জনগণের জানমালের নিরাপত্তায় সর্বোচ্চ পেশাদারত্বের সাথে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ জনগণের পাশে থাকবে। খুলনা মহানগরী এলাকায় মাদক সংক্রান্তে কোন অভিযোগ শুনতে চাই না। মাদক ব্যবসায়ী ও সন্ত্রাসীদের কঠোর হস্তে দমন করা হবে। এছাড়াও তালিকাভূক্ত মাদক ব্যবসায়ী ও সন্ত্রাসী, জুয়াড়ি, দেহ ব্যবসায়ী এবং ভূমিদস্যু সকলকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। সবশেষে তিনি কেএমপিকে একটি চমৎকার গতিশীল ইউনিটে পরিণত করার প্রত্যয় ব্যক্ত করে একটি ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত, ইভটিজিং মুক্ত, মাদক ও সন্ত্রাসমুক্ত যানজটমুক্ত এবং ফৌজদারি অপরাধমুক্ত দেশ গড়ার প্রত্যাশা জানিয়ে তাঁর বক্তব্য শেষ করেন।

আলোচনা সভার শেষ দিকে কেএমপিতে কমিউনিটি পুলিশিং কার্যক্রমে অনবদ্য অবদানের জন্য কমিউনিটি পুলিশিং ডে-২০২৩ উদযাপন অনুষ্ঠানে শ্রেষ্ঠ কমিউনিটি পুলিশিং অফিসার এবং কমিউনিটি পুলিশিং সদস্য দের সম্মাননা স্মারক ও সনদ বিতরণ করা হয়েছে। পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স, ঢাকার পক্ষ থেকে ৪ জন এবং খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মহোদয়ের পক্ষ থেকে ৪ জন কমিউনিটি পুলিশিং অফিসার ও কমিউনিটি পুলিশিং সদস্যকে বিশেষ সম্মাননা স্মারক ও সনদ দেওয়া হয়েছে।

এছাড়াও, কমিউনিটি পুলিশিং ডে-২০২৩ উদযাপন উপলক্ষে আলোচনা সভায় আমন্ত্রিত বক্তারা মূল্যবান বক্তব্য প্রদান করেন।

বক্তারা মাদক, সন্ত্রাস, নাশকতা, অগ্নি সন্ত্রাস, জুয়া, কিশোর গ্যাং, বাল্যবিবাহ, নারী ও শিশু নির্যাতন, সাম্প্রদায়িকতা মুক্ত, জঙ্গিবাদ ও দুর্নীতি মুক্ত এবং উন্নত, সুখী-সমৃদ্ধ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যাশা জানিয়ে সকলকে সম্মিলিতভাবে কাজ করার আহ্বান জানান।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসাবে আরো উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মো. তবিবুর রহমান; খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি মঈনুল হক, বিপিএম (বার), পিপিএম; কেএমপি’র অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (এএন্ডও) সরদার রকিবুল ইসলাম, বিপিএম; পিটিসি, খুলনা রেঞ্জের অ্যাডিশনাল ডিআইজি (ক্রাইম ম্যানেজমেন্ট) জয়দেব চৌধুরী, বিপিএম-সেবা; খুলনা রেঞ্জের অ্যাডিশনাল ডিআইজি (অপারেশনস্) মো. হাসানুজ্জামান, পিপিএম; খুলনা মহানগর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক মো. আলমগীর কবির; খুলনা জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা সরদার মাহবুবার রহমান; খুলনা প্রেস ক্লাবের সভাপতি এস.এম নজরুল ইসলাম; খুলনা মহানগর কমিউনিটি পুলিশিং ফোরাম, খুলনার সভাপতি ডা এ.কে.এম কামরুল ইসলাম; খুলনা মহানগর কমিউনিটি পুলিশিং ফোরাম, খুলনার সাধারণ সম্পাদক জনাব শেখ সৈয়দ আলী; সংরক্ষিত কাউন্সিলর ১৬, ১৭ ও ১৮ নং ওয়ার্ড কেসিসি জনাব রোজি ইসলাম নদী; ১৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর জনাব এস.এম খুরশিদ আহম্মেদ টোনা; সভাপতি কমিউনিটি পুলিশিং ফোরাম, দৌলতপুর থানা জনাব শেখ ওহিদুল ইসলাম এবং কেএমপি’র ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাবৃন্দ, কেসিসি’র কাউন্সিলরবৃন্দ; কমিউনিটি পুলিশিং ফোরামের মহানগর, থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পরিষদের কমিউনিটি পুলিশিং কমিটির সভাপতি, সেক্রেটারি ও সদস্যবৃন্দ এবং প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ।