কুড়িগ্রামে ‘ছিটমহল বিনিময়: ঐতিহাসিক মানবিক অর্জন’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। ছবি: সংগৃহীত

‘ছিটমহল বিনিময়: ঐতিহাসিক মানবিক অর্জন’ শীর্ষক আলোচনা সভা মঙ্গলবার (১ আগস্ট) সকালে কুড়িগ্রাম কলেজ মোড়ে শেখ রাসেল অডিটরিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়েছে। বেসরকারি সংগঠন উদ্দীপন, বাংলাদেশ সোসাইটি ফর কালচারাল অ্যান্ড সোশ্যাল স্টাডিজ ও উত্তরবঙ্গ জাদুঘর এ সভার আয়োজন করে।

উত্তরবঙ্গ জাদুঘর ট্রাস্ট্রি বোর্ডের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট এস এম আব্রাহাম লিংকনের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ। আরও বক্তব্য দেন পুলিশ সুপার আল আসাদ মো. মাহফুজুল ইসলাম, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. জাফর আলী, বিলুপ্ত বাংলাদেশ-ভারত ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির সাবেক সভাপতি মইনুল হক, সেক্রেটারি গোলাম মোস্তফা, উদ্দীপনের নির্বাহী পরিচালক বিদ্যুৎ কুমার বসু প্রমুখ।

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. তুহিন ওয়াদুদ জানান, ছিটমহল বিনিময়ের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নোবেল পুরস্কার পাওয়া উচিত। দুটি দেশের মধ্যে দীর্ঘদিনের লাঞ্ছনা-বঞ্চনার অবসান ঘটিয়ে একটি রক্তপাতবিহীন ভূখণ্ড বিনিময় ও মানুষ বিনিময়ের ঘটনাটি বিরল হলেও সেভাবে প্রচার করা হয়নি। এই ল্যান্ড চুক্তির মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাড়তি আরও ১০ হাজার হেক্টর ভূখণ্ড বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্ত করতে পেরেছেন।

বিলুপ্ত বাংলাদেশ-ভারত ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির সাবেক সেক্রেটারি গোলাম মোস্তফা দাবি তোলেন, ১ আগস্টকে রাষ্ট্রীয়ভাবে ছিটমহলমুক্ত দিবস হিসেবে পালন করা হোক। এ ছাড়া তিনি ছিটমহল আন্দোলনের সাথে প্রত্যক্ষভাবে যারা জড়িত ছিলেন, তাদের তালিকা রাষ্ট্রীয়ভাবে গেজেট আকারে প্রকাশ করার দাবি জানান।

সভাপতির বক্তব্যে এস এম আব্রাহাম লিংকন বলেন, আগে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ছিল না। এখন ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ জ্বলছে, আলপথ এখন রাজপথ হয়েছে। আজকের ছিটমহল এবং ৮ বছর আগের ছিটমহলের মধ্যে বিশাল পার্থক্য হয়েছে। একসময় স্বাধীনতাবিরোধীরা গোলামি চুক্তি বলেছিল। অথচ এই চুক্তি ৫১ হাজার মানুষকে বন্দিদশা থেকে মুক্তি দিয়েছে। শোকাবহ আগস্টে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছিটমহলবাসীদের জীবনে আলোকবর্তিতা নিয়ে এসেছেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ বলেন, আগামী বছর থেকে এই ঐতিহাসিক দিনকে রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন করা হবে বলে আমি কথা দিচ্ছি। এ ছাড়া তিনি বলেন, জনসংখ্যা বিষয়ে যেসব বিরোধ রয়েছে, সেটি মিটিয়ে ফেলা হবে।

জেলা পুলিশ সুপার আল আসাদ মো. মাহফুজুল ইসলাম বলেন, ছিটমহলের মানুষের ভেতরের যে কথা, তা ডকুমেন্টশন করা দরকার। কারণ, এই মানুষগুলো সারা জীবন থাকবেন না। ভারত-বাংলাদেশ চুক্তির ফলে যে বিশাল অর্জন হয়েছে, তার জন্য বিভিন্ন মহলের কাজ করা দরকার। এটি শেখ হাসিনা সরকারের বিশাল সাফল্য অথচ তিনি আন্তর্জাতিকভাবে সম্মানিত হননি। এটি নিয়েও কাজ করা দরকার।

আলোচনায় অংশ নিয়ে সাবেক সচিব ড. মিহির কান্তি মজুমদার বলেন, ছিটমহলগুলোর জন্য বাংলাদেশ সরকার অনেক কিছু করছে। তাদের জন্য আরও কাজ করার সুযোগ রয়েছে। সেই কাজগুলো সকলে মিলে করা দরকার।

২০১৫ সালের ১ আগস্ট বাংলাদেশ ও ভারতের ১৬২টি ছিটমহল দুই দিনের মধ্যে বিনিময় হয়। এতে ৫১ হাজার ছিটমহলবাসী বন্দিদশা থেকে মুক্তি লাভ করেন। দীর্ঘদিন ধরে অমানবিক জীবনযাপনকারী ছিটবাসীর উন্নয়নের পথ সুগম হয়। আর কয়েক বছরে বাংলাদেশি ছিটমহলগুলো অভূতপূর্ব উন্নয়ন ঘটে। সভায় বক্তারা ছিটমহল বিনিময়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবদানের কথা স্বীকার করে ছিটমহলের ইতিহাস সংরক্ষণের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। সূত্র: দিনাজপুর দর্পণ