রাজধানীর মিরপুরে পুলিশ স্টাফ কলেজ বাংলাদেশ চত্বরে স্থাপিত পুলিশ মেমোরিয়ালে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে জীবন উৎসর্গকারী বীর পুলিশ সদস্যগণের প্রতি সম্মান জানাচ্ছেন মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খান, ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ (আইজিপি), বাংলাদেশ চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বিপিএম (বার), পিপিএম। ছবি : বাংলাদেশ পুলিশ

প্রতি বছরের মতো এবারও কর্তব্যরত অবস্থায় জীবন উৎসর্গকারী বীর পুলিশ সদস্যগণকে বিনম্র শ্রদ্ধায় স্মরণের মধ্য দিয়ে পালিত হলো পুলিশ মেমোরিয়াল ডে-২০২৩। গত বছর কর্তব্যরত অবস্থায় জীবন উৎসর্গকারী ১২১ জন পুলিশ সদস্যের পরিবারকে স্বীকৃতি স্মারক প্রদান করা হয়।

জীবন উৎসর্গকারী বীর পুলিশ সদস্যগণের প্রতি সম্মান জানাতে স্যালুট দিচ্ছেন পুলিশ কর্মকর্তাবৃন্দ। ছবি : বাংলাদেশ পুলিশ

পুলিশ মেমোরিয়াল ডে-২০২৩ এর কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে বুধবার (১ মার্চ) সকাল ১০টায় রাজধানীর মিরপুরে পুলিশ স্টাফ কলেজ বাংলাদেশ চত্বরে স্থাপিত পুলিশ মেমোরিয়ালে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে বীর পুলিশ সদস্যগণের প্রতি সম্মান জানানো হয়।
পুলিশ স্টাফ কলেজ কনভেনশন হলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে উপস্থিত অতিথিবৃন্দ। ছবি : বাংলাদেশ পুলিশ

এ সময় মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খান, ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ (আইজিপি), বাংলাদেশ চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বিপিএম (বার), পিপিএম এবং জীবন উৎসর্গকারী পুলিশ সদস্যগণের পরিবারের সদস্যরা শ্রদ্ধা জানান। এ সময় একটি সুসজ্জিত পুলিশ দল সশস্ত্র সালাম প্রদান করে। বিউগলে বেজে উঠে করুণ সুর।
জীবন উৎসর্গকারী পুলিশ সদস্যগণের প্রতি সম্মান জানাতে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। ছবি : বাংলাদেশ পুলিশ

পরে পুলিশ স্টাফ কলেজ কনভেনশন হলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে কর্তব্যরত অবস্থায় জীবন উৎসর্গকারী পুলিশ সদস্যগণের পরিবারকে স্বীকৃতি স্মারক প্রদান করা হয়।

ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ (আইজিপি), বাংলাদেশ চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বিপিএম (বার), পিপিএম-এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। বিশেষ অতিথি ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খান। স্বাগত বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত আইজিপি মো. মাজহারুল ইসলাম।

জীবন উৎসর্গকারী এক পুলিশ সদস্যের পরিবারের সদস্যের হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দিচ্ছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। ছবি : বাংলাদেশ পুলিশ

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, দেশ সেবার মূলমন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা জনগণের জানমাল রক্ষায় সর্বদা সচেষ্ট ও নিবেদিত রয়েছেন। করোনাকালে আমাদের পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা যে চরম ধৈর্য্য ও নিষ্ঠার পরিচয় দিয়েছেন, তা সব মহলের প্রশংসা অর্জন করেছে। স্বাধীনতাবিরোধী অশুভ শক্তি যখনই দেশের গণতন্ত্র নস্যাৎ করার জন্য বিশৃঙ্খলা ও নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টির অপচেষ্টা চালিয়েছিল, তা নির্মূল করে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে বাংলাদেশ পুলিশের সক্ষমতা প্রশংসার দাবিদার।
জীবন উৎসর্গকারী কয়েকজন পুলিশ সদস্যের পরিবারের সদস্যগণের সঙ্গে কথা বলছেন ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ (আইজিপি), বাংলাদেশ চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বিপিএম (বার), পিপিএম। ছবি : বাংলাদেশ পুলিশ

তিনি বলেন, সরকারের রূপকল্প-২০৪১ বাস্তবায়নের অন্যতম নিয়ামক শক্তি হিসেবে বাংলাদেশ পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে। তিনি এ লক্ষ্য অর্জনে পুলিশের সব সদস্যকে সততা ও আন্তরিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, দেশের জন্মলগ্ন থেকে স্বাধীনতার চেতনা যে বাহিনীর হৃদয়ে প্রোথিত, সে পুলিশ বাহিনী গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রায় সহযাত্রী হবে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বিনির্মাণে ভূমিকা রাখবে।
কর্তব্যরত অবস্থায় জীবন উৎসর্গকারী পুলিশ সদস্যগণের রুহের মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। ছবি : বাংলাদেশ পুলিশ

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জীবন উৎসর্গকারী পুলিশ সদস্যগণের আত্মার শান্তি কামনা করেন এবং তাঁদের পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানান।

কর্তব্যরত অবস্থায় জীবন উৎসর্গকারী পুলিশ সদস্যগণের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে সিনিয়র সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খান বলেন, ২০২২ সালে ১২১ জন পুলিশ সদস্য আত্মোৎসর্গ করেছেন, এটা অনেক বড় সংখ্যা। পুলিশকে প্রতিনিয়ত ঝুঁকির মধ্যে কাজ করতে হয়। আপনাদেরকে মানুষের প্রতি, দেশের প্রতি ভালোবাসা অটুট রাখতে হবে, যাতে আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারি।

আইজিপি বলেন, বাংলাদেশ পুলিশ দেশমাতৃকার সেবায় আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছে। পুলিশ সদস্যরা দেশ ও জনগণের কল্যাণে নিজের জীবন বিলিয়ে দিতেও কুণ্ঠাবোধ করেন না। দেশের শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষায় দায়িত্ব পালনকালে গত বছর ১২১ জন পুলিশ সদস্য জীবন উৎসর্গ করেছেন। তাঁদের এই আত্মত্যাগ আমাদেরকে আগামী দিনে আরও পেশাদারত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালনে উজ্জীবিত করবে, আমাদের কর্মস্পৃহাকে আরও শানিত করবে।

কর্তব্যরত অবস্থায় জীবন উৎসর্গকারী পুলিশ সদস্যগণের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে আইজিপি বলেন, আমরা অতীতেও আপনাদের পাশে ছিলাম, আগামীতেও থাকবো। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ৫ কোটি টাকা সিড মানি দিয়ে পুলিশ কল্যাণ ট্রাস্ট স্থাপন করে দিয়েছেন। পুলিশ কল্যাণ ট্রাস্টের আয় থেকেও জীবন উৎসর্গকারী পুলিশ সদস্যদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, কর্তব্যরত অবস্থায় জীবন উৎসর্গকারী পুলিশ সদস্যদের স্মৃতিকে স্মরণীয় করে রাখতে বাংলাদেশ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের স্থাপনা ও রাস্তার নামকরণ তাঁদের নামে করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

আইজিপি জীবন উৎসর্গকারী পুলিশ সদস্যগণের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন এবং তাঁদের শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।

অনুষ্ঠানের শুরুতে কর্তব্যরত অবস্থায় জীবন উৎসর্গকারী পুলিশ সদস্যগণের রুহের মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। তাঁদের প্রতি সম্মান জানিয়ে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

অনুষ্ঠানে অতিরিক্ত আইজিপি (প্রশাসন) মো. কামরুল আহসান বিপিএম (বার), র‍্যাবের মহাপরিচালক এম খুরশীদ হোসেন বিপিএম (বার), পিপিএম, স্পেশাল ব্রাঞ্চের অতিরিক্ত আইজিপি মো. মনিরুল ইসলাম বিপিএম (বার), পিপিএম (বার), অতিরিক্ত আইজিপিগণ, ঢাকাস্থ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের প্রধানগণ, ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাগণ এবং জীবন উৎসর্গকারী পুলিশ সদস্যগণের পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

পরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, সিনিয়র সচিব এবং আইজিপি মঞ্চ থেকে নেমে দর্শক সারিতে এসে কর্তব্যরত অবস্থায় জীবন উৎসর্গকারী ১০ জন পুলিশ সদস্যের পরিবারের হাতে সম্মাননা স্মারক ও উপহার তুলে দেন। এ সময় প্রিয়জন হারানো পরিবারের সদস্যগণ তাঁদের আবেগ ধরে রাখতে পারেননি। তখন আবেগঘন এক দৃশ্যের অবতারণা হয়। আইজিপি ব্যক্তিগতভাবে তাঁদের খোঁজখবর নেন এবং বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেন।

২০২২ সালে জীবন উৎসর্গকারী বাকি পুলিশ সদস্যগণের পরিবারকে মেট্রোপলিটন, রেঞ্জ এবং জেলায় সম্মাননা স্মারক প্রদান করা হয়েছে।

বাংলাদেশ পুলিশের সব মেট্রোপলিটন, রেঞ্জ এবং জেলা ইউনিটেও যথাযোগ্য মর্যাদায় পুলিশ মেমোরিয়াল ডে-২০২৩ পালিত হয়েছে।

২০২২ সালে কর্তব্যরত অবস্থায় জীবন উৎসর্গকারী ১২১ জন পুলিশ সদস্যদের মধ্যে ইন্সপেক্টর/টিআই সাত জন, সাব-ইন্সপেক্টর/টিএসআই ২২ জন, এএসআই/এটিএসআই ১৬ জন, নায়েক পাঁচ জন ও ৭১ জন কনস্টেবল রয়েছেন।

উল্লেখ্য, ২০১৭ সাল থেকে কর্তব্যরত অবস্থায় জীবন উৎসর্গকারী পুলিশ সদস্যগণের স্মরণে ‘পুলিশ মেমোরিয়াল ডে’ পালিত হচ্ছে।