কচুক্ষেত রজনীগন্ধা টাওয়ারে রাঙাপরী জুয়েলার্সে চুরির রহস্য উদঘাটন নিয়ে রোববার দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে প্রেস ব্রিফিং অনুষ্ঠিত হয়। ছবি: ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ

কচুক্ষেত রজনীগন্ধা টাওয়ারে রাঙাপরী জুয়েলার্সে চুরির রহস্য উদঘাটন করা হয়েছে। পাশাপাশি ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িত একজনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা মিরপুর বিভাগ।

গ্রেপ্তার ব্যক্তির নাম মো. মঞ্জুরুল হাসান শামীম।

শনিবার গাজীপুরের কড্ডা ও মুন্সিগঞ্জ জেলার বজ্রযোগিনী এলাকায় অভিযান চালিয়ে শামীমকে গ্রেপ্তার করে ডিবির মিরপুর জোনাল টিম। এ সময় তাঁর হেফাজত থেকে চুরি করা সোনা বিক্রির ৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা ও ইমিটেশন গয়না জব্দ করা হয়।

আজ রোববার দুপুর ১২টায় ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানান ডিবির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার, বিপিএম (বার)। এ সময় গোয়েন্দা মিরপুর বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মানস কুমার পোদ্দার, পিপিএম (বার), মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মো. ফারুক হোসেন, অভিযান পরিচালনাকারী ডিবি মিরপুর জোনাল টিমের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মো. সাইফুল ইসলাম, মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের সহকারী পুলিশ কমিশনার আবু তালেবসহ বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিকেরা উপস্থিত ছিলেন।

ডিবির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, ৫ ফেব্রুয়ারি রাত আনুমানিক একটার দিকে ভাষানটেক থানাধীন পুরাতন কচুক্ষেত রজনীগন্ধা টাওয়ারের নিচতলার রাঙাপরী জুয়েলার্সে একটি সংঘবদ্ধ চোর চক্র আনুমানিক ৩০০ ভরি স্বর্ণ, ইমিটেশন গয়না ও টাকা চুরি করে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় গোয়েন্দা মিরপুর বিভাগের মিরপুর জোনাল টিম গোয়েন্দা তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত শামীমকে গ্রেপ্তার করে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্য ও চুরির রহস্য উদঘাটন সম্পর্কে তিনি বলেন, চুরির ঘটনার এক মাস আগে চোর চক্রের ২ জন সদস্য মাসুদ ও ইলিয়াস মিথ্যা নাম-পরিচয় ব্যবহার করে ওই মার্কেটে সিকিউরিটি গার্ড ও সুইপারের চাকরি নেন।চাকরিরত অবস্থায় তাঁরা ওই দোকানে চুরির পরিকল্পনাকে বাস্তবায়ন করার জন্য রেকি করাসহ চক্রের অন্যান্য সদস্যের সঙ্গে তথ্য আদান-প্রদান করতে থাকেন। পরিকল্পনামাফিক ঘটনার আগের দিন চক্রের অন্য এক সদস্য শাহীন মাস্টার ওই মার্কেটে একটি দোকান ভাড়া করে মালামাল তোলার নাম করে কৌশলে তালা ভাঙার সরঞ্জামাদি মার্কেটে প্রবেশ করায়। ঘটনার দিন আনুমানিক রাত একটায় চক্রের আরও ২ সদস্য শ্রীকান্ত ও তালা ভাঙার মিস্ত্রি রাজা মিয়া মার্কেটে ঢোকে। আগে থেকে কাজে থাকা মাসুদ ও ইলিয়াসকে সঙ্গে নিয়ে চুরি সম্পন্ন করে। এরপর ভোর পাঁচটায় মার্কেট থেকে বের হয়ে কেরানীগঞ্জ থানার হাসনাবাদ এলাকার তাদের ভাড়া করা বাসায় চলে যায়।

তিনি আরও বলেন, সেখানে শাহীন মাস্টার ও গ্রেপ্তারকৃত মঞ্জুরুল হাসান শামীম আগে থেকেই চক্রের অন্য সদস্যদের জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন। সেখানে সকল সদস্যের উপস্থিতিতে চুরি করা গয়না ও টাকা আলাদা করা হয়। আনুমানিক সকাল ১০টায় শ্রীকান্ত চুরি করা স্বর্ণ তার পূর্বপরিচিত এক স্বর্ণ ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি টাকা নিয়ে পুনরায় বাসায় ফিরে আসেন। এরপর নিজেদের মধ্যে আনুপাতিক হারে ভাগ করে যে যার মতো ওই বাসা ত্যাগ করে আত্মগোপনে চলে যান।

এই চোর চক্র সম্পর্কে তিনি আরও বলেন, এই চক্রের মূল হোতা ফ্রান্সপ্রবাসী নাসির। সে প্রায় সাত বছর আগে দেশ ত্যাগ করে ফ্রান্সে চলে যান এবং সেখানে বসে চোর চক্র নিয়ন্ত্রণ ও চুরির পরিকল্পনা করেন। নাসির এ চক্রের সদস্যদের থাকার বাসাভাড়া ও প্রাথমিক অর্থের জোগান দিয়ে থাকেন। প্রত্যেক সদস্যের আলাদা দায়িত্ব নির্ধারণ করা থাকে এবং তারা সে অনুযায়ী নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করে থাকে। ইতোপূর্বে তারা ঢাকা মহানগর ও এর আশপাশের এলাকায় একাধিক চুরি করেছে বলে জানা গেছে।

নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে সিকিউরিটি গার্ড নিয়োগের আগে পুলিশ ভেরিফিকেশনের অনুরোধ করেন ডিবির এই কর্মকর্তা।

ডিএমপির গোয়েন্দা মিরপুর বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মানস কুমার পোদ্দারের পিপিএম (বার) সার্বিক তত্ত্বাবধানে মিরপুর জোনাল টিমের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মো. সাইফুল ইসলামের নেতৃত্বে সঙ্গীয় অফিসার, ফোর্সসহ অভিযানটি পরিচালনা করেন।