নাটোরের লালপুরে খোরশেদ আলমকে হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের তিনজন। ছবি: নাটোর জেলা পুলিশ

নাটোরের লালপুরে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা (ইজিবাইক) চালক খোরশেদ আলম মিলনকে (৩২) হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। ছিনতাইকারীরা তাঁর অটোরিকশাটি ছিনিয়ে নেওয়ার জন্য তাঁকে হত্যা করে‌।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, খোরশেদের বাবা বড়াইগ্রাম থানাধীন মহিষঙ্গা গ্ৰামের মো. ফখরুল ইসলাম (৬৩) সোমবার লালপুর থানায় হাজির হয়ে লিখিতভাবে দাখিল করা এজাহারে উল্লেখ করেন, তাঁর ছেলে খোরশেদ আলম মিলন (৩২) একজন ইজিবাইকচালক। তিনি বড়াইগ্রাম ও লালপুর থানা এলাকার বিভিন্ন স্থানে ইজিবাইক চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। প্রতিদিনের মতো ১৪ মে সন্ধ্যা সাতটার দিকে ইজিবাইক নিয়ে বাড়ি থেকে বনপাড়া বাইপাসের উদ্দেশে রওনা হন। এরপর তিনি আর বাড়ি ফেরেননি। তাঁর মোবাইল ফোনের সংযোগটি বন্ধ পাওয়া যায় ‌। পরিবারের লোকজন অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তাঁর সন্ধান পাননি। পরের দিন সন্ধ্যায় মিলনের নিকটাত্মীয় মো. আবদুল খালেক (৩২) লালপুর থানাধীন ঘাটচিলান গ্রামের কদিমচিলান-ঈশ্বরদী রাস্তার পাশে এক জোড়া স্যান্ডেল ও রাবারের মতো ফিতা পড়ে থাকতে দেখে মিলনের বাবাকে খবর দেন। মিলনের বাবাসহ নিকটাত্মীয়রা সেখানে গিয়ে আশপাশে খোঁজাখুঁজি করতে থাকেন। খোঁজাখুজির একপর্যায়ে লালপুর থানাধীন ঘাটচিলান গ্রামের মো. আবদুস সামাদের (সাবেক মেম্বার) মালিকানাধীন আখখেতের মাঝামাঝি উত্তর দিকের আইলের দক্ষিণে খোরশেদ আলমের (৩২) মুখের মধ্যে মাটিভরা অবস্থায় মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখেন। লালপুর থানার পুলিশ খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য লাশ নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। এই এজাহারের পরিপ্রেক্ষিতে মামলাটি দায়ের করা হয়।


এই ইজিবাইক ছিনতাইয়ের জন্য হত্যা করা হয় খোরশেদ আলমকে। পুলিশ এটি জব্দ করেছে। ছবি: নাটোর জেলা পুলিশ

পরে নাটোরের পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহার (বিপিএম পিপিএম-বার) ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বড়াইগ্রাম সার্কেল) মো. শরীফ আল রাজীবের নেতৃত্বে একটি দল লালপুর থানার অফিসার ইনচার্জের নেতৃত্বে ১টি দল, ওয়ালিয়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জের নেতৃত্বে একটি দল, জেলা ডিবির একটি দল, জেলার চৌকস অফিসারের সমন্বয়ে একটি দল, ডিএসবির একটি দল গঠন করে সব কটি দলকে দিক নির্দেশনা প্রদান করেন।

৬টি দলের নিরলস পরিশ্রমে দ্রুত সময়ে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে ঘটনার সঙ্গে জড়িত আসামি মো. সজিব হোসেনকে (১৯) সোমবার সকালে তাঁর বসতবাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারের পর আসামি সজিবকে ঘটনাসংক্রান্তে নিবিড় ও গভীরভাবে জিজ্ঞাসাবাদে তিনি জানান, মেহেদী হাসান, রবিউল ইসলাম এবং অপর একজন মিলে ভিকটিমের ইজিবাইকটি ছিনতাই করার উদ্দেশ্যে মূলত হত্যাকাণ্ডটি ঘটিয়েছেন। ভিকটিম মিলন আসামি সঞ্জিব ও রবিউলের পূর্বপরিচিত। ঘটনার আগের দিন অর্থাৎ ১৩ মে রাতে তাঁরা বনপাড়া থেকে ২৫০ টাকায় ভাড়া ঠিক করে তাঁরা মিলনকে নিয়ে ঘাটচিলান গ্রামে যান। ভিকটিমের ইজিবাইকটি নতুন হওয়ায় তাঁরা সেটি ছিনতাই করার পরিকল্পনা করে এবং সেই পরিকল্পনা মোতাবেক ১৪ মে রাত সাড়ে ১১টার দিকে আসামি রবিউল ফোন দিয়ে খোরশেদ আলম মিলনকে ডেকে নিয়ে আসামি সঞ্জিব, মেহেদী হাসান, রবিউল ইসলাম ও অপর একজন ইজিবাইকে যাত্রীবেশে বনপাড়া থেকে রওনা হয়ে লালপুর থানাধীন ঘাটচিলান গ্রামে মো. আবদুস সামাদের মালিকানাধীন আখখেতের মাঝামাঝি উত্তর দিকের আইলের দক্ষিণে ভিকটিম খোরশেদ আলম মিলনকে নিয়ে গিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করে ইজিবাইকটি নিয়ে যায়। আসামী সজিবকে গত সোমবার আদালতে সোপর্দ করলে তিনি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। পরে আসামি সজিবের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী রবিউল ইসলামকে তাঁর নিজ বাড়ি থেকে এবং মেহেদী হাসানকে তাঁর নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। রবিউল ও মেহেদীর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী মো. সাগর আলীর হেফাজত থেকে তাঁর নিজ বাড়ি থেকে ছিনতাই করা ইজিবাইকটি জব্দ করা হয় এবং সাগরকে গ্রেপ্তার করা হয়। ঘটনার সঙ্গে জড়িত অপর আসামিকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।