জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ পুলিশের নারী সদস্যদের একাংশ। ছবি : বাংলাদেশ পুলিশ

আগামীকাল বুধবার (২৯ মে) আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদা ও আয়োজনের মধ্য দিয়ে উদযাপিত হবে। বুধবার ভোরে পিসকিপার্স রানের মধ্য দিয়ে শুরু হবে ‘আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস-২০২৪’-এর আনুষ্ঠানিকতা।

আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষায় অংশগ্রহণকারী সব সদস্যের সম্মানে উদযাপিত এ দিবসে বিশ্ব শান্তিরক্ষায় শাহাদাতবরণকারী ও আহত সদস্যগণের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হবে। এ উপলক্ষে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধান অতিথি হিসেবে অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে শাহাদাতবরণকারী ও আহত শান্তিরক্ষী এবং পরিবারের সদস্যদের সম্মাননা দেবেন। অনুষ্ঠানে মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত/হাইকমিশনার, জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী, তিন বাহিনীর প্রধানেরা এবং ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ (আইজিপি), বাংলাদেশ চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বিপিএম (বার), পিপিএম প্রমুখ উপস্থিত থাকবেন।

দিবসটির মর্যাদা ও গুরুত্ব তুলে ধরে জাতীয় পত্রিকায় বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হবে। বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ বিভিন্ন বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এবং বাংলাদেশ বেতারে বিশেষ আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্বের নিপীড়িত-নির্যাতিত মানুষের অধিকার আদায়ে ছিলেন বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর। বিশ্বশান্তি রক্ষায় বঙ্গবন্ধুর অঙ্গীকার বাংলাদেশের মহান সংবিধানেও প্রতিফলিত হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর মানবতার কল্যাণ ও শান্তি প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকারকে ধারণ করে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ পুলিশের পদযাত্রা সূচিত হয় ১৯৮৯ সালে; নামিবিয়া মিশনের মধ্য দিয়ে। বাংলাদেশ পুলিশের ২১ হাজার ৪৫৩ জন শান্তিরক্ষী বিভিন্ন দেশে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে পেশাদারত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়ে মিশন সম্পন্ন করেছেন। তাঁদের মধ্যে নারী শান্তিরক্ষী রয়েছেন ১ হাজার ৮১০ জন।

বর্তমানে ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো, মালি, সাইপ্রাস, সেন্ট্রাল আফ্রিকা, দক্ষিণ সুদান ও লিবিয়ায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ পুলিশের ১২০ জন নারী সদস্যসহ ৩৬৪ জন শান্তিরক্ষী নিয়োজিত রয়েছেন।

উল্লেখ্য, ২০০০ সাল থেকে বাংলাদেশ পুলিশের নারী পুলিশ কর্মকর্তাগণ জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অংশ নিয়ে আসছেন।

বাংলাদেশ পুলিশের শান্তিরক্ষীরা বিভিন্ন প্রতিকূলতার মধ্যেও মিশন এলাকার জনগণকে আপন করে নিয়েছেন, তাঁদের পাশে থেকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন।

বাংলাদেশ পুলিশ হাইতির ভূমিকম্প বিধ্বস্ত অসহায় মানুষের পাশে থেকে মানবিক সহায়তা দিয়েছে। আবার আফ্রিকা ও ইউরোপের বিভিন্ন যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে পুলিশি সেবা প্রদান, পুলিশের প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো পুনর্বিন্যাস ও পুনর্গঠন এবং সক্ষমতা বাড়াতে অনন্য ভূমিকা রেখেছে; যা আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে।

বাংলাদেশ পুলিশের শান্তিরক্ষীরা দুর্গম ভৌগোলিক পরিবেশ ও প্রতিকূল পরিস্থিতিতে মানবিকতায় উদ্বুদ্ধ হয়ে তিন দশকের বেশি সময় ধরে বিশ্বশান্তি রক্ষায় নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করে চলেছেন। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশ পুলিশের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ও মর্যাদা বাড়িয়েছে। বাংলাদেশ পুলিশ জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণের মাধ্যমে বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় অঙ্গীকারবদ্ধ।