হোতা আরিফ ও সহযোগী সুমন। ছবি : বাংলাদেশ পুলিশ

রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকায় একটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট (সিএ) হাসান আলীকে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসানোর ঘটনার প্রকৃত রহস্য উদ্ঘাটন করেছে পুলিশ। এ ঘটনার হোতাসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানা-পুলিশ।

শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানা-পুলিশ জানায়, গ্রেপ্তার আসামিরা হলেন ভুক্তভোগীর সহকর্মী আরিফ ইমরান খান এবং তাঁর সাবেক গাড়িচালক ফারুক মিয়া সুমন।

তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানা-পুলিশ জানায়, গত ২ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় রাজধানীর তেজগাঁওয়ের রহমানস রেগনাম সেন্টার ভবনের অফিস থেকে ভুক্তভোগী হাসান তাঁর দুই সহকর্মী বাশার ও ইমাম হোসেনের সঙ্গে বের হন। তাঁরা তিনজন এসকেএস স্কাই ভবনের ফুটপাত দিয়ে পুলিশ প্লাজার দিকে যাচ্ছিলেন। হাসান অফিস থেকে বের হওয়ার পর তাঁর পিছু নেন অজ্ঞাতপরিচয় দুজন ব্যক্তি। হাসান এসকেএস স্কাই ভবনের সামনে পৌঁছালে আচমকা চারদিক থেকে ৮-১০ জন লোক তাঁকে ঘিরে ধরেন এবং মারধর করেন। এ সময় কৌশলে হাসানের পকেটে ১৯৩টি ইয়াবা ঢুকিয়ে দেন দুর্বৃত্তরা। এক পর্যায়ে তাঁরা থানায় ফোন দিয়ে পুলিশকে বিষয়টি অবহিত করেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে হাসানকে থানায় নিয়ে আসে। জনতা ইয়াবাসহ হাসানকে আটক করায় পুলিশ তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করে আদালতে পাঠায়। পরে আদালত তাঁকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

পুলিশ হাসানকে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসিয়েছে এমন অভিযোগ উঠলে বিষয়টি নিয়ে একাধিক গণমাধ্যমে খবর ছাপা হয়। হাসান আলীর ঘটনায় তেজগাঁও বিভাগের বিভিন্ন পদমর্যাদার পুলিশ সদস্যকে জড়িয়ে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশের বিষয়টি নজরে আসে ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী এনডিসির। ডিএমপি কমিশনারের নির্দেশে ঘটনার প্রকৃত কারণ উদ্ঘাটন করতে মাঠে নামে পুলিশ।

তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানা-পুলিশ জানায়, নিরলস প্রচেষ্টায় ঘটনার প্রকৃত কারণ উদ্ঘাটন করতে সক্ষম হয় পুলিশ। এরপর গত ৫ ফেব্রুয়ারি তেজগাঁওয়ের পূর্ব নাখালপাড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে সুমনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। সুমনকে জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে ঘটনার প্রকৃত কারণ। পরে সুমনের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে হোতা আরিফকে গ্রেপ্তার করা হয়।

জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা জানান, হাসানের সঙ্গে দাপ্তরিক বিষয় নিয়ে দ্বন্দ্ব চলছিল আরিফের। হাসানকে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসাতে পারলে সুমনকে পুরস্কারের লোভ দেখান আরিফ। পুরস্কারের লোভে হাসানকে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসাতে ফাঁদ পাতেন সুমন। এরপর সুমন এক ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করে ইয়াবা সংগ্রহ করেন। সেই ব্যক্তি অজ্ঞাতপরিচয় আরও ৭-৮ জনকে ভাড়া করেন। সুমন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। আসামি সুমন ও আরিফ কারাগারে আছেন।

ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) এস এন নজরুল ইসলাম বলেন, ঘটনার প্রকৃত রহস্য উদ্ঘাটন করা হয়েছে। এর সঙ্গে পুলিশের কেউ জড়িত নন। মূল আসামিদের ধরা হয়েছে; একজন নিজের দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।

ভুক্তভোগী সিএ কর্মকর্তা হাসান আলী বলেন, ‘আমার অফিসের এক সহকর্মীর পরিকল্পনায় আমাকে ফাঁসানো হয়। বিনা কারণে সাত দিন কারাভোগের পর ৯ ফেব্রুয়ারি আমি জামিনে মুক্ত হই।’