বাংলাদেশ অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসার্স কল্যাণ সমিতির (বিআরপিওডব্লিউএ) ৪১তম বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শনিবার (২৮ ডিসেম্বর) রাজধানীর রাজারবাগে বাংলাদেশ পুলিশ অডিটোরিয়ামে এ বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
এতে প্রধান অতিথি ছিলেন সমিতির প্রধান পৃষ্ঠপোষক ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ (আইজিপি), বাংলাদেশ বাহারুল আলম বিপিএম। এ ছাড়া ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী এনডিসি বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
পবিত্র কোরআন থেকে তিলাওয়াতের মাধ্যমে সভার কার্যক্রম শুরু হয়। এরপর সমিতির মৃত্যুবরণকারী সব সদস্য এবং গত জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ ব্যক্তিদের আত্মার মাগফেরাত কামনায় মোনাজাত করা হয়। পরে শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অবসরপ্রাপ্ত ডিআইজি এম আকবর আলী বিপিএম, পিপিএম-এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সমিতির সহসভাপতি অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত ডিআইজি ইয়াসমিন গফুর পিপিএম। অনুষ্ঠানে বার্ষিক প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন সমিতির মহাসচিব অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার মিয়া লুৎফর রহমান চৌধুরী।
অনুষ্ঠানে আইজিপি বাহারুল আলম বিপিএম সমিতির পক্ষ থেকে সমিতির পাঁচজন বয়োজ্যেষ্ঠ পুলিশ সদস্যকে সম্মাননা স্মারক দেন। কমিউনিটি পুলিশিং ও সমাজসেবামূলক কার্যক্রমে বিশেষ অবদানের জন্য তিনজন পুলিশ কর্মকর্তাকে ‘এস এম আহসান স্মৃতি পুরস্কার’ দেওয়া হয়। এ ছাড়া নির্যাতনের শিকার নারী ও শিশু সুরক্ষায় ভিকটিম সাপোর্ট কার্যক্রমে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ একজন নারী পুলিশ কর্মকর্তাকে ‘প্রফেসর অনামিকা হক লিলি-ড. এম এনামুল হক অ্যাওয়ার্ড’ দেওয়া হয়।
এরপর সমিতির পক্ষ থেকে পুলিশ পরিবারের সন্তানদের মধ্যে এসএসসি পরীক্ষায় ভালো ফলাফল অর্জনকারী ৪০ জন মেধাবী শিক্ষার্থীকে ‘মরহুম মহিউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী-এম শহিদুল ইসলাম চৌধুরী এডুকেশন ফান্ড’, ‘মরহুম মহিউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী-মরহুমা নূরজাহান বেগম এডুকেশন ফান্ড’ এবং ‘এম সহীদুল ইসলাম চৌধুরী-মরহুমা খুরশিদা ইসলাম চৌধুরী এডুকেশন ফান্ড’-এর আওতায় শিক্ষাবৃত্তি ও সনদপত্র দেওয়া হয়। এইচএসসি পরীক্ষায় ভালো ফলাফল অর্জনকারী ১৮ জন মেধাবী শিক্ষার্থীকে সমিতির পক্ষ থেকে ‘এম এন ভক্ত-শিপ্রা ভক্ত শিক্ষা ফান্ড’ এবং ‘ক্ষিতিশ চন্দ্র মল্লিক-মায়া মল্লিক শিক্ষা ফান্ড’-এর আওতায় শিক্ষাবৃত্তি ও সনদপত্র দেওয়া হয়।
এ সময় অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসার্স কল্যাণ সমিতির ৪১তম বার্ষিক সাধারণ সভায় সমিতির গত এক বছরের বিভিন্ন সেবামূলক কার্যক্রমের সংক্ষিপ্ত বিবরণ তুলে ধরা হয়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে আইজিপি বাহারুল আলম বিপিএম বলেন, বাংলাদেশ পুলিশ একটি ক্রান্তিকাল অতিবাহিত করছে। বাংলাদেশ পুলিশের ইতিহাসে পুলিশকে এমন অবস্থায় আর কখনো পতিত হতে হয়নি। আগস্ট বিপ্লব-পূর্ব ও বিপ্লবোত্তর পুলিশের মধ্যে বিস্তর ব্যবধান। বিপ্লব-পূর্ব সময়ে পুলিশ হয়ে উঠেছিল ফ্যাসিস্ট সরকারের লাঠিয়াল। ফলে পুলিশকে জনরোষের শিকার হতে হয়েছে। পুলিশের নেতৃত্বস্তর ভেঙ্গে পড়েছিল, জন-আস্থা থেকে ছিটকে পড়েছিল পুলিশ। উদ্যম, আগ্রহ আর নিষ্ঠা নিয়ে আমরা পুলিশকে সংগঠিত করছি। এখন চ্যালেঞ্জ হচ্ছে পুলিশকে সুসংগঠিত করা, জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তোলা এবং এ পুলিশ যাতে আর কখনো জনবিরোধী অবস্থানে ফিরে যেতে না পারে, সে ব্যবস্থা করা।
আইজিপি বলেন, জাতীয় জীবনে গর্ব করার মতো অবদান আছে পুলিশের। এ বাহিনী ১৯৭১ সালে ২৫ মার্চ পাক হানাদারদের আক্রমণ রুখে দিয়ে গড়ে তুলেছিল সশস্ত্র প্রতিরোধ। আমরা সে বাহিনীর উত্তরসূরি।
পুলিশপ্রধান বলেন, জুলাই বিপ্লব পরবর্তী পুলিশের পুনর্গঠনের পবিত্র দায়িত্ব আমার ওপর বর্তেছে। আমি আশা করি, পুলিশ পুনর্গঠনের এ চ্যালেঞ্জিং সময়ে অবসরপ্রাপ্ত সব পুলিশ সদস্য আমাকে সহায়তা করবেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী এনডিসি বলেন, জুলাই-আগস্টের বিপ্লবের মাধ্যমে একটা বিষয় সামনে চলে আসে যে নিম্নপদস্থ পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের একটা দূরত্ব বিরাজমান ছিল। এই দূরত্ব দূর করতে হবে। তাঁদের সঙ্গে একটা সম্পর্কের সেতুবন্ধন তৈরি করতে হবে। আমি এবং আমার সহকর্মীরা সেই সেতুবন্ধন তৈরির চেষ্টা করছি।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, জুলাই আগস্টের ঘটনা পুলিশের জন্য লজ্জার। এ লজ্জাজনক ঘটনা থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে। মানুষকে সেবা দিতে হবে পেশাদারত্বের সঙ্গে। আর এই সেবা দেওয়ার মাধ্যমে আমাদের হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনতে হবে।
অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসার্স কল্যাণ সমিতির ৪১তম বার্ষিক সাধারণ সভায় সমিতির সদস্য বাংলাদেশ পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।