কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের এসপি আল আসাদ মো. মাহফুজুল ইসলামের কাছ থেকে দায়িত্ব বুঝে নিচ্ছে কিশোরী নাইমা। ছবি : বাংলাদেশ পুলিশ

প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের ‘গার্লস টেকওভার’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে একদিনের জন্য কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশ সুপারের (এসপি) দায়িত্ব পালন করেছে স্কুলছাত্রী ও যুব অধিকারকর্মী নাইমা।

মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) প্রতীকীভাবে কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের এসপি আল আসাদ মো. মাহফুজুল ইসলামের দায়িত্ব পালন করে সে।

কক্সবাজারের নাইমা গার্লস আউট লাউড প্রোগ্রামের সক্রিয় সদস্য এবং চ্যাম্পিয়ন অব চেঞ্জ গ্র্যাজুয়েট। কন্যাশিশুর অধিকার এবং যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য অধিকার নিয়ে কাজ করার মাধ্যমে নাইমা তার সহপাঠীদের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়ে সাহায্য করছে। সম্প্রতি নাইমা তার সম্প্রদায়ের দুটি পরিবারের মেয়েদের বাল্যবিয়ে বন্ধ করার ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছে। নাইমা ভবিষ্যতে সিভিল সার্ভিসে যোগ দিতে চায়। সে তার কমিউনিটি এবং এর বাইরেও ইতিবাচক ভূমিকা পালন করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।

বিশ্বব্যাপী ১১ অক্টোবর আন্তর্জাতিক কন্যা শিশু দিবস উদযাপনের অংশ হিসেবে কন্যাশিশুদের অধিকার তুলে ধরার পর্যাপ্ত সুযোগ তৈরির লক্ষ্যে প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ একাধিক টেকওভার কর্মসূচি আয়োজন করছে। এই অনুষ্ঠানটি প্ল্যান ইন্টারন্যাশনালের বিশেষ কর্মসূচি গার্লস টেকওভার ক্যাম্পেইনের অংশ। এবারের জাতিসংঘঘোষিত কন্যা শিশু দিবসের প্রতিপাদ্য ‘গার্লস ভিশন ফর দ্য ফিউচার’, যা কন্যাশিশুদের ক্ষমতায়ন, তাদের কণ্ঠস্বরকে জোরালো করা এবং একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়তে তাদের নিজস্ব কৌশল ও নীতি নির্ধারণের জন্য ভূমিকা পালন করার সুযোগ তৈরির ওপর গুরুত্বারোপ করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল ‘ইউনাইট ফর পিস’ প্রতিপাদ্যটি গ্রহণ করেছে।

নাইমা বলে, ‘আজকের এই গার্লস টেকওভারে অংশগ্রহণ করে আমি খুবই আনন্দিত ও অনুপ্রাণিত। আমার মনে হচ্ছে, ভবিষ্যতে এমন একটা পদে যাওয়া খুব কঠিন না। আমি যদি চেষ্টা করি তবে আমিও এই জায়গায় যেতে পারি। এই গার্লস টেকওভারে অংশগ্রহণ করে আমি অনেক অনুপ্রাণিত হয়েছি। আমার অভিজ্ঞতা অন্যদের সঙ্গে বিনিময় করে তাদের অনুপ্রাণিত করতে পারব বলে মনে করি।’

নাইমা গার্লস টেকওভারে কক্সবাজারে টুরিস্ট পুলিশের এসপির দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রতিটি বিভাগ পরিদর্শন এবং কর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করে। সভায় কক্সবাজারে পর্যটকদের সমস্যা সমাধান নিয়ে আলোচনা করা হয়। পরে সৈকত পরিদর্শনে গিয়ে নাইমা কয়েকজন পর্যটকের সঙ্গে কথা বলে এবং তাঁদের সমস্যাগুলোর বিষয়ে জানতে চায়। কোনো সমস্যায় পড়লে তাৎক্ষণিকভাবে টুরিস্ট পুলিশের শরণাপন্ন হওয়ার পরামর্শ দেয় নাইমা।

টুরিস্ট পুলিশের কক্সবাজার অঞ্চলের পুলিশ সুপার আল আসাদ মো. মাহফুজুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের মেয়েদের স্বপ্নপূরণের অভিযাত্রায় প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের গার্লস টেকওভার একটি অনন্য কর্মসূচি। আজ আমাদের অফিসের দায়িত্ব নিয়েছিল নাইমা। এই মেয়েটির মধ্যে যে উচ্চাকাঙ্ক্ষা ও অনুপ্রেরণা দেখেছি, তাতে আমরা বিশ্বাস করি আগামী দিনে তারা সত্যিকার অর্থেই এসব পদে ভূমিকা রাখার যোগ্যতা অর্জন করবে। তারা আমাদের দেশের বৃহত্তর মঙ্গলের জন্য কাজ করবে। এ দেশ বিনির্মাণে এবং কমিউনিটি বিনির্মাণে তারা আরও মোক্ষমভাবে কাজ করবে। আমি বিশ্বাস করি, এটি শুধু প্রতীকী হিসেবে থাকবে না। আজ থেকে ১০, ১৫ বা ২০ বছর পরে এটি সত্যিকার অর্থে বাস্তবায়তি হবে। শুধু সরকারি অফিসগুলোতে নয়, ইন্টারন্যাশনাল অফিসসহ সব জায়গায় আমাদের মেয়েরা ছড়িয়ে পড়বে।’