একটি দেশের উন্নয়নে সবচেয়ে জরুরি বিষয় হলো জনগণের ক্ষমতায়ন। আর জনগণের ক্ষমতায়ন তখনই নিশ্চিত হয়, যখন সাধারণ মানুষ সঠিক তথ্য জেনে সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নেয়। তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯ জনগণের সেই তথ্যপ্রাপ্তির অধিকার নিশ্চিত করেছে।
২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের পর ২০০৯ সালের ২৯ মার্চ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনে তথ্য অধিকার আইন পাস হয়। তখন থেকে বাংলাদেশের জনগণের ক্ষমতায়নের জন্য তাদের তথ্য অধিকার প্রতিষ্ঠার আইনটি স্বীকৃতি পায়। এই আইনের অনন্য বৈশিষ্ট্য হলো, দেশের প্রচলিত অন্য সব আইনে কর্তৃপক্ষ জনগণের ওপর ক্ষমতা প্রয়োগ করে থাকে, কিন্তু এই আইনে জনগণ কর্তৃপক্ষের ওপর ক্ষমতা আরোপ করে। এটি একটি শক্তিশালী নাগরিকবান্ধব ও সর্বজনীন আইন। শ্রেণিগত ভেদাভেদ-নির্বিশেষে সর্বস্তরের নাগরিককে রাষ্ট্রের তথ্য পাওয়ার অধিকার দেয়।
সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, সংবিধিবদ্ধ সংস্থা এবং সরকারি বা বিদেশি অর্থায়নে পরিচালিত বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার কর্মকাণ্ডে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সুশাসন নিশ্চিত করাই এই আইনের মূল লক্ষ্য। আইনটির যথাযথ প্রয়োগের ফলে সরকার ও জনগণের মাঝে সেতুবন্ধ তৈরি হয়েছে। সরকারি প্রতিষ্ঠান এবং স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সংস্থার স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত হচ্ছে, যা দুর্নীতি কমাতে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে।
তথ্য অধিকার আইনের ৮ ধারা অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি এই আইনের অধীনে তথ্যপ্রাপ্তির জন্য সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কাছে তথ্য চেয়ে লিখিতভাবে বা ই-মেইল করতে পারেন।
বিশ্বব্যাপী টেকসই উন্নয়নের সব পদক্ষেপে অবাধ তথ্যপ্রবাহ ও তথ্যের অভিগম্যতার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট হলো অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন ও সমাজের সর্বক্ষেত্রে অসমতা দূরীকরণ। বৃদ্ধ, অসহায় ও হতদরিদ্র জনগোষ্ঠীর ক্ষুধা ও দারিদ্র্য নির্মূল করে তাদের সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মুক্তি নিশ্চিত করা। বাংলাদেশে তথ্য অধিকার আইন প্রণয়ন করে জাতিসংঘের সর্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণাপত্র এবং নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারের আন্তর্জাতিক চুক্তি অনুযায়ী জনসাধারণের তথ্যপ্রাপ্তির অধিকার নিশ্চিত করেছে সরকার। এর মাধ্যমে মৌলিক স্বাধীনতাও সুরক্ষিত হয়েছে।