ঘরের মাঠে শিরোপা ধরে রাখার লক্ষ্য নিয়ে বঙ্গবন্ধু কাপ-২০২৪ আন্তর্জাতিক কাবাডি টুর্নামেন্ট শুরু করেছিল বাংলাদেশ। সেই মিশন সফল করেছেন লাল-সবুজের জার্সিধারীরা। নেপালকে হারিয়ে বঙ্গবন্ধু কাপ আন্তর্জাতিক কাবাডি টুর্নামেন্টে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশ। খবর ডিএমপি নিউজের।
সোমবার (৩ জুন) মিরপুর শহীদ সোহরাওয়ার্দী ইনডোর স্টেডিয়ামে ফাইনাল ম্যাচে লাল-সবুজ জার্সিধারীরা ৪৫-৩১ পয়েন্টে নেপালকে হারিয়ে টানা চতুর্থবার অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করলেন। ২০২১ সালে শুরু হওয়া এই টুর্নামেন্টের সব কটি শিরোপা নিজেদের কাছে রাখলেন লাল–সবুজের প্রতিনিধিরা।
দারুণ ক্রীড়াশৈলী দেখিয়ে ম্যাচসেরা হয়েছেন বাংলাদেশের অধিনায়ক তারকা রেইডার আরদুজ্জামান মুন্সি। টুর্নামেন্টের বেস্ট রেইডার পুরস্কার জিতেছেন বাংলাদেশ দলের রেইডার মিজানুর রহমান। বেস্ট ক্যাচারের পুরস্কার জিতেছেন বাংলাদেশ দলের ক্যাচার রুমান হোসেন। টুর্নামেন্টসেরা হয়েছেন নেপালের ঘনশ্যাম রোকা মাগার।
ফাইনাল উপলক্ষে ইনডোর স্টেডিয়াম পরিপূর্ণ ছিল। বাংলাদেশের রেইডের সময় দর্শকেরা ‘বাংলাদেশ বাংলাদেশ’ আবার নেপালের রেইডের সময়ও গলা ফাটিয়ে উজ্জীবিত করেছে স্বাগতিকদের। শিরোপা জয়ের পর পতাকা নিয়ে খেলোয়াড়েরা উল্লাস করেছেন, দর্শকেরাও দাঁড়িয়ে তাঁদের অভিবাদন দিয়েছেন।
এর আগে দক্ষিণ কোরিয়াকে ৬৭-২২ পয়েন্টে হারিয়ে প্রতিযোগিতা শুরুর পর মালয়েশিয়ার বিপক্ষে ৭৩-২২ পয়েন্টে ও ইন্দোনেশিয়ার ৫৯-১৯ পয়েন্টে জিতেছিলেন আরদুজ্জামান-জিয়ারা।
নিজেদের চতুর্থ ম্যাচে পোল্যান্ডকে ৭৯-২৮ পয়েন্টে হারিয়ে সেমিফাইনাল খেলা নিশ্চিত করেছিল বাংলাদেশ। আর নেপালকে ৪৬-৩১ পয়েন্টে হারিয়ে টানা পাঁচ জয়ে গ্রুপ সেরা হয় বাংলাদেশ। সেমিফাইনাল ম্যাচে লাল-সবুজ জার্সিধারীরা ৪১-১৮ পয়েন্টে থাইল্যান্ডকে হারিয়ে ফাইনালে ওঠেন।
বঙ্গবন্ধু কাপ আন্তর্জাতিক কাবাডি টুর্নামেন্টের ফাইনালে প্রধান অতিথি ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ, বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ কাবাডি ফেডারেশনের সভাপতি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন (বিপিএম-বার), পিপিএম) এবং ডিএমপি কমিশনার ও বাংলাদেশ কাবাডি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান (বিপিএম-বার, পিপিএম-বার) উপস্থিত ছিলেন।
২০২১ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু কাপ আন্তর্জাতিক কাবাডি টুর্নামেন্টের যাত্রা শুরু হয়। করোনা মহামারির কারণে সে সময় নেপাল, শ্রীলঙ্কা, কেনিয়া, পোল্যান্ড, স্বাগতিক বাংলাদেশসহ পাঁচ দেশ অংশগ্রহণ করে।
২০২২ সালে দ্বিতীয় আসরে নেপাল, শ্রীলঙ্কা, কেনিয়া, ইংল্যান্ড, ইরাক, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, স্বাগতিক বাংলাদেশসহ ৮টি দেশ অংশগ্রহণ করে। ২০২৩ সালে তৃতীয় আসরে অংশগ্রহণ করেছিল রেকর্ড ১২টি দেশ। এশিয়া, ইউরোপ ও আফ্রিকা মহাদেশের গণ্ডি পেরিয়ে টুর্নামেন্টের ব্যাপ্তি ছড়িয়ে পড়েছিল দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশেও। টুর্নামেন্টের মূল আকর্ষণ ছিল ফুটবলের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনার কাবাডি দল। তৃতীয় আসরে অংশ নেওয়া দেশগুলো ছিল আর্জেন্টিনা, ইংল্যান্ড, পোল্যান্ড, কেনিয়া, ইরাক, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, চায়নিজ তাইপে, নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও স্বাগতিক বাংলাদেশ।
আন্তর্জাতিক আঙিনায় সাড়াজাগানো এই টুর্নামেন্ট এখন আন্তর্জাতিক কাবাডি ফেডারেশনের বর্ষপঞ্জিতে বিশেষ গুরুত্ব বহন করছে। বাংলাদেশের এ আসর বিশ্বকাপের বাছাইপর্ব হিসেবেও বিবেচিত হচ্ছে। গত তিনটি আসর শহীদ নূর হোসেন ভলিবল স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হলেও এবার নতুন ভেন্যু হিসেবে মিরপুর শহীদ সোহরাওয়ার্দী ইনডোর স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়।
গেল তিনটি আসরের হ্যাটট্রিক চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ। এবারও শিরোপায় চোখ রেখে ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে প্রস্তুতি অব্যাহত রেখেছে স্বাগতিকেরা। প্রথম আসরে কেনিয়াকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো কোনো আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে শিরোপা জয়ের কৃতিত্ব দেখায় বাংলাদেশ। এরপর ২০২২ সালেও সেই কেনিয়াকে ফাইনালে পরাজিত করে চ্যাম্পিয়ন হয় স্বাগতিকেরা। ২০২৩ আসরে চায়নিজ তাইপেকে হারিয়ে হ্যাটট্রিক শিরোপা ঘরে তোলে বাংলাদেশ।
২৬ মে স্বাগতিক বাংলাদেশ-কোরিয়া ম্যাচের মধ্য দিয়ে জমকালো আয়োজনে বঙ্গবন্ধু কাপ আন্তর্জাতিক কাবাডি টুর্নামেন্টের পর্দা ওঠে।
