রাজধানীর সড়কে শৃঙ্খলা রক্ষায় সর্বাত্মক চেষ্টা করেন ট্রাফিক সদস্যরা। ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর সড়কের জায়গা ব্যবহার করে ফ্লাইওভার ও মেট্রোরেলের মতো স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের একটি অংশও নির্মাণ করা হয়েছে সড়ক ব্যবহার করে। এ জন্য ঢাকা শহরে সড়কের প্রস্থ দিন দিন কমেছে; উল্টো বেড়েই চলেছে যানবাহন। যানবাহনের চাপে অন স্ট্রিট পার্কিং সুবিধা দিতে গিয়ে বিপাকে পড়েছে ট্রাফিক পুলিশ। মূল সড়কের বাইরে অলিগলি যেন এখন ‘অন স্ট্রিট পার্কিং জোন’।

গত রমজানে থানা-পুলিশের সহযোগিতায় রাজধানীর সড়কে শৃঙ্খলা রক্ষায় সর্বাত্মক চেষ্টা করেন মাঠপর্যায়ের ট্রাফিক সদস্যরা। ঈদের পর রাজধানীর যানজট নিরসন করে সড়ক-মহাসড়কে নির্বিঘ্ন ও সুষ্ঠু যাত্রা নিশ্চিতে ট্রাফিক বিভাগের কর্মকর্তাদের ডেকে দফায় দফায় বৈঠক করে কঠোর নির্দেশনা দেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার হাবিবুর রহমান বিপিএম-বার, পিপিএম-বার।

তাঁর নির্দেশনা মেনে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সড়ক শৃঙ্খলায় নজরদারি বাড়াতে বলা হয়েছে। অবৈধ পার্কিং বন্ধ, গেটলক সার্ভিসসহ গ্রহণ করা হয়েছে একগুচ্ছ পরিকল্পনা। ইতিমধ্যে গেটলক সার্ভিসের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন শুরু করেছে ট্রাফিক পুলিশ।

সাবেক পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, রাজধানীর সড়কের যে আয়তন, তার তুলনায় কয়েক গুণ বেশি যানবাহন চলাচল করে। এর বাইরে ভিভিআইপি, ভিআইপি মুভমেন্ট, যান্ত্রিক গোলযোগ, রাজনৈতিক কর্মসূচি, হাতের ইশারায় ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ আর পুলিশের অপর্যাপ্ত জনবল দিয়ে সড়কে শৃঙ্খলা রক্ষায় নেওয়া পরিকল্পনা বাস্তবায়ন প্রায় অসম্ভব। ব্যস্ততম সড়কগুলোতে ওয়াসা, তিতাস ও সিটি করপোরেশনের মতো বিভিন্ন সংস্থার নিত্য খোঁড়াখুঁড়ির মধ্যে নানা মেগা প্রজেক্টের উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ ট্রাফিক পুলিশের সব পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বড় বাধা।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, অন স্ট্রিট পার্কিং বন্ধ, অবৈধ পার্কিং বন্ধে আইনের সঠিক প্রয়োগ, যানবাহনে অননুমোদিত স্টিকার ব্যবহার বন্ধ, চালু করা ‘বাস বে’র সঠিক ব্যবহার ও নতুন করে পরিস্থিতি বিবেচনায় নতুন বাস বে চালু, গেটলক পদ্ধতিতে বাস চলাচল নিশ্চিত করা, অফিসগামী ও অফিস ছুটির সময় সড়কে বাড়তি চাপ সামলাতে নজরদারি বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে।

সড়কে শৃঙ্খলা ও যানজট নিরসনে ডিএমপির ৪টি ট্রাফিক বিভাগ ভেঙে কয়েক বছর আগে আটটি আলাদা বিভাগ করা হয়। আটটি বিভাগ হলো রমনা, লালবাগ, মতিঝিল, ওয়ারী, উত্তরা, গুলশান, মিরপুর ও তেজগাঁও ট্রাফিক বিভাগ। তৎপরতা বাড়াতে গত ৮ মে পৃথকভাবে আটটি বিভাগকেই চিঠি দেওয়া হয়েছে।

ওই চিঠিতে সংশ্লিষ্ট ট্রাফিক এলাকায় কাগজপত্রবিহীন যানবাহন, ব্যাটারিচালিত রিকশার সংখ্যা, কারা চালায় তাদের নাম ঠিকানা, বালু, মাটি, ইটসহ বিভিন্ন মাল বহন করা ট্রাকের তালিকা ও সংখ্যা, ব্যবস্থাপনা, অনুমোদিত যানবাহনে অননুমোদিত স্টিকার ব্যবহার, বিকন লাইট, হুটার বন্ধে ব্যবস্থা ও করণীয় সম্পর্কে নির্দেশনা দেওয়া হয়।

পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট ট্রাফিক এলাকায় ট্রাফিক সিগন্যালের সংখ্যা, কোথায় সিগন্যাল বাতি নষ্ট, বাস বের সংখ্যা, ট্রাফিক সার্জেন্ট ও ট্রাফিক ইন্সপেক্টরদের দায়িত্বপ্রাপ্ত এলাকার সুনির্দিষ্ট সীমানার ম্যাপ সম্পর্কেও জানাতে বলা হয়েছে। রাতে কোন সিগন্যালে কে থাকছেন, কোন সিগন্যালে রাতে বেশি চাপ থাকে, এসব তথ্য সুনির্দিষ্ট করে জানাতে বলা হয়েছে।

ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি, ট্রাফিক-অ্যাডমিন অ্যান্ড রিসার্চ) ও ঢাকা রোড সেফটি প্রজেক্টের (ডিআরএসপি) প্রকল্প ম্যানেজার মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, প্রতিদিনের অভিযানের ফলাফল সংগ্রহ করে তা বিশ্লেষণের মাধ্যমে ঢাকা মহানগরীর যানজট নিরসনে টেকসই উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে। যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে এবং জনসাধারণের নিরাপদ যাতায়াত নিশ্চিত করতে যেসব হকার ও গাড়ির ভ্রাম্যমাণ কাউন্টার ফুটপাত ও রাস্তা দখল করে ব্যবসা করছে, ডিএমপি কমিশনারের নির্দেশনায় তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করে রাস্তা ও ফুটপাত যান চলাচল ও জনসাধারণের চলাচলের উপযোগী করা হচ্ছে।

অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ প্রসঙ্গে মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ঢাকায় বড় সমস্যা তৈরি করছে মূল সড়কে ব্যাটারিচালিত রিকশার ব্যবহার। এসব যান হুটহাট চলে আসছে। সঙ্গে আছে ফিটনেসবিহীন যানবাহনের দৌরাত্ম্য। সড়কে একটা গাড়ি নষ্ট হলে সবদিকে চাপ পড়ে। অবৈধ ব্যাটারিচালিত রিকশার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করার পাশাপাশি মূল সড়কে যেন অযান্ত্রিক যান চলাচল করতে না পারে, সে জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে। ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের নির্দেশিত ছক অনুযায়ী ৮টি ট্রাফিক বিভাগ থেকে ব্যাটারিচালিত অবৈধ রিকশা, অবৈধ যানবাহন, মাটি ও বালু বহনকারী ট্রাক ও হকারদের তালিকাও সংগ্রহ করা হচ্ছে। সেই তালিকা পাওয়ার পর পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সোয়া ৩ বছরে ট্রাফিকের মামলা সাড়ে ৯ লাখ
ট্রাফিক আইন লঙ্ঘন ও কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যদের কাজে বাধা দেওয়ার ঘটনায় রাজধানীতে ট্রাফিকের মামলা তুলনামূলকভাবে বেড়েছে। গত সোয়া ৩ বছরে মামলা হয়েছে ৯ লাখ ৪৬ হাজার ৮৮৫টি। ট্রাফিক বিভাগের পরিসংখ্যানমতে, ২০২১ সালে দায়ের করা মামলার সংখ্যা ২ লাখ ৫৫ হাজার ৯১১টি, ২০২২ সালে ২ লাখ ৭১ হাজার ৫৫৬টি, ২০২৩ সালে ৩ লাখ ২৭ হাজার ৫২২টি এবং চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত ৪ মাসে মামলা দায়ের করা হয়েছে ৯১ হাজার ৮৯৬টি।

সোয়া তিন বছরে জরিমানা প্রায় ২০০ কোটি টাকা
একই সময়ে রাজধানীতে আটটি ট্রাফিক বিভাগে জরিমানা আদায়ও তুলনামূলকভাবে বেড়েছে। এই সময়ে আদায় করা জরিমানার পরিমাণ ১৯৮ কোটি ৯৫ লাখ ৫ হাজার ৪১২ টাকা। ২০২১ সালে ৫০ কোটি ৯৩ লাখ ৩২ হাজার ৩০৩ টাকা, ২০২২ সালে ৫৪ কোটি ৯৩ লাখ ১ হাজার ২২১ টাকা, ২০২৩ সালে ৭২ কোটি ৭ লাখ ২৩ হাজার ৯৬৩ টাকা এবং চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত চার মাসে ২১ কোটি ১ লাখ ৪৭ হাজার ৯২৫ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে।

রেহাই পাচ্ছে না পুলিশ/ডিএমপি স্টিকার বসানো যানবাহনও
ট্রাফিক পুলিশের বিশেষ কার্যক্রমের মধ্যে হাইড্রোলিক হর্নের কারণে ২৪, হুটার/বিকন লাইটের জন্য ৩১, উল্টো পথে চলাচল ২২৪৪, পুলিশ ও ডিএমপি লেখা স্টিকার ব্যবহার করায় ৫৬, মোটরসাইকেল ৮৯৪২, মোটরসাইকেল জব্দ ৩৭৪০, গাড়ি চালানোর সময় মোবাইল ফোন ব্যবহার করায় দুটি ভিডিও মামলা দিয়েছে ট্রাফিক পুলিশ।

বাড়ছে অবৈধ যানের সংখ্যা
বিআরটিএ সূত্রে জানা গেছে, ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত বিআরটিএ কর্তৃক রেজিস্ট্রেশনকৃত মোটরযানের সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৯৭ হাজার। ২০২৩ সালের ৩০ জুন সে সংখ্যা গিয়ে ঠেকেছে ৫৭ লাখ ৫৯ হাজার ৩৫৩টিতে। এর মধ্যে বাস ৫৩ হাজার ৬৫৬টি, মিনিবাস ২৮ হাজার ১২১, ট্রাক ১ লাখ ৪৯ হাজার ৪৭টি, প্রাইভেট কার ৪ লাখ ৪ হাজার ১৩৯টি, মোটরসাইকেল ৪১ লাখ ৫০ হাজার ৫৩৪টি, মাইক্রোবাস ১ লাখ ১৮ হাজার ৩৫৬টি, পিকআপ ১ লাখ ৫৬ হাজার ৫৭১টি, জিপ ৮৬ হাজার ৬৭৬টি, কাভার্ড ভ্যান ৪৭ হাজার ৪৩০টি, ডেলিভারি ভ্যান ৩৩ হাজার ৫১৪টি, হিউম্যান হলার ১৭ হাজার ৩৮৫টি, ট্রাক্টর ৪৭ হাজার ১০৫টি, অন্যান্য ৪ লাখ ৬৬ হাজার ৮১৯টি।

সবশেষ ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৬টি মেট্রো সার্কেল ও ৬৪ জেলা সার্কেল অফিসের মাধ্যমে ৪ লাখ ৬৯ হাজার ১৬৭টি যানবাহনকে নতুন করে রেজিস্ট্রেশন দেওয়া হয়েছে। যদিও ২০২১-২২ অর্থবছরে রেজিস্ট্রেশন আরও বেশি দিয়েছে বিআরটিএ। যার সংখ্যা ৫ লাখ ২৩ হাজার ৯টি।

রাজধানীর সড়কের যে আয়তন, তার তুলনায় কয়েক গুণ বেশি যানবাহন চলাচল করে। এর বাইরে ভিভিআইপি, ভিআইপি মুভমেন্ট, যান্ত্রিক গোলযোগ, রাজনৈতিক কর্মসূচি, হাতের ইশারায় ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ আর পুলিশের অপর্যাপ্ত জনবল দিয়ে সড়কে শৃঙ্খলা রক্ষায় নেওয়া পরিকল্পনা বাস্তবায়ন প্রায় অসম্ভব। ব্যস্ততম সড়কগুলোতে ওয়াসা, তিতাস ও সিটি করপোরেশনের মতো বিভিন্ন সংস্থার নিত্য খোঁড়াখুঁড়ির মধ্যে নানা মেগা প্রজেক্টের উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ ট্রাফিক পুলিশের সব পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বড় বাধা।

তবে যে পরিমাণ যানবাহনকে রেজিস্ট্রেশন দেওয়া হয়েছে, সে তুলনায় মোট যানবাহনের ফিটনেস সার্টিফিকেট ইস্যু ও নবায়ন করতে পারেনি বিআরটিএ। ২০২২-২৩ অর্থবছরে বিআরটিএ কর্তৃক ৬ লাখ ৮৫ হাজার ৫৫৭টি যানবাহনের ফিটনেস সার্টিফিকেট ইস্যু ও নবায়ন করা হয়েছে। ভাড়ায় চালিত নয় এমন মোটরকার, জিপ ও মাইক্রোবাসের ক্ষেত্রে তৈরির সাল থেকে ৫ বছর এবং ২০১৯ সাল থেকে প্রতি বছর অন্তর ফিটনেস নবায়নের সুযোগ সৃষ্টি করা হলেও অধিকাংশ যানবাহনই ফিটনেস নবায়ন করেনি। যার বেশির ভাগই অবৈধভাবে চলছে রাজধানীতে।

যানবাহন বাড়লেও বাড়েনি সড়ক ও পার্কিং সুবিধা
প্রতিবছর নতুন নতুন যানবাহনের রেজিস্ট্রেশন দেওয়া হলেও রাজধানীতে বাড়েনি সড়কের আয়তন। উল্টো উন্নয়ন ও সেবার নামে বছরজুড়ে চলে খোঁড়াখুঁড়ি। এতে মূল সড়কও সংকুচিত হয়ে পড়েছে। আন্ডারগ্রাউন্ড পার্কিং রাখার শর্তে সম্প্রতি ভবন নির্মাণ করা হলেও সড়কে কমেনি অবৈধ পার্কিং। সড়কে অবৈধ পার্কিংয়ের কারণে ব্যাহত হচ্ছে যান চলাচল, বাড়ছে যানজট।

রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক ও অলিগলিতে চলছে খোঁড়াখুঁড়ির কাজ। কোথাও মেট্রোরেল, এলিভেটর এক্সপ্রেসওয়ে, কোথাও বিদ্যুৎ লাইন, কোথাও মাটির নিচে নেওয়া হচ্ছে ঝুলন্ত তার, আবার কোথাও স্যুয়ারেজ লাইন, কখনো ওয়াসার পানির লাইনের সংস্কারকাজ।

দুই সিটি করপোরেশনের তথ্যমতে, রাজধানীর প্রায় সব এলাকাতেই কমবেশি এই খোঁড়াখুঁড়ি চলছে। দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন সড়কে সমন্বয়হীন খোঁড়াখুঁড়িতে মূল সড়ক, অলিগলিসহ প্রায় ৭০০ কিলোমিটার রাস্তার অবস্থা খারাপ। যার বড় প্রভাব পড়ছে যান চলাচলে। যানজটের ভোগান্তিতে পড়ছে নগরবাসী। কিন্তু কাজের শুরুতে পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় থাকলেও কাজ শেষ হওয়া নিয়ে সমন্বয়হীনতার বিস্তর অভিযোগ রয়েছে।

ডিএমপির যুগ্ম পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক-উত্তর) আবু রায়হান মুহাম্মদ সালেহ্ বলেন, অন স্ট্রিট পার্কিং বড় সমস্যা তৈরি করলেও সেটা সব স্টেকহোল্ডারের সঙ্গে সমন্বয় করেই চালু করেছিল সিটি করপোরেশন। তবে এর বাইরে অবৈধ পার্কিং কোনোভাবেই চলতে আর দেওয়া হবে না। স্পষ্ট বার্তা ডিএমপি কমিশনারের। আমরা সেটি মাঠপর্যায়ে প্রতিপালনে নির্দেশনা দিয়েছি। সেটি বাস্তবায়নে কাজ চলছে। অবৈধ পার্কিং করা হলে মামলা হচ্ছে।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (অতিরিক্ত সচিব) মীর খায়রুল আলম বলেন, ঢাকায় অন স্ট্রিট পার্কিং থাকবে। তবে এটির যাতে অপব্যবহার না হয়, তার জন্য সবাইকে সচেতন হতে হবে। আমরা সচেতনতার জন্য লিফলেট বিতরণ ও সমন্বয় সভা করছি। আর অবৈধ পার্কিংয়ের সুযোগ নেই। সড়কে অবৈধ পার্কিং বন্ধে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে। অবৈধ স্থাপনাবিরোধী নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করে যাচ্ছে ডিএনসিসি।

প্রতিদিনের অভিযানের ফলাফল সংগ্রহ করে তা বিশ্লেষণের মাধ্যমে ঢাকা মহানগরীর যানজট নিরসনে টেকসই উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে। যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে এবং জনসাধারণের নিরাপদ যাতায়াত নিশ্চিত করতে যেসব হকার ও গাড়ির ভ্রাম্যমাণ কাউন্টার ফুটপাত ও রাস্তা দখল করে ব্যবসা করছে, ডিএমপি কমিশনারের নির্দেশনায় তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করে রাস্তা ও ফুটপাত যান চলাচল ও জনসাধারণের চলাচলের উপযোগী করা হচ্ছে।

ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মো. জাহাঙ্গীর আলম ও বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, এখন সময় এসেছে হাতের ইশারায় ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার। করপোরেট, সরকারি কার্যালয়সহ হোটেল রেস্তোরাঁ কিংবা সুপারশপ ও মার্কেটের সামনের সড়কে অবৈধ পার্কিং বন্ধ করতে না পারা ব্যর্থতা। এটা মানতেই হবে। শুধু বিআরটিএর মতো মামলা, অভিযান, মোবাইল কোর্ট কিংবা জরিমানার ফিরিস্তি তুলে ধরা নয়, বাস্তব চিত্র বদলাচ্ছে কি না, সেটি গুরুত্বপূর্ণ। প্রটোকলে কথিত ভিআইপিদের মূল সড়কে উল্টো চলাচল বন্ধ না করে শুধু ‘নিয়ন্ত্রক’ ট্রাফিক পুলিশের যদি মামলাতেই আগ্রহ বেশি থাকে, তবে শৃঙ্খলা সম্ভব নয়। আমি মনে করি, ট্রাফিক পুলিশ যে বিশেষ কার্যক্রম শুরু করেছে, সেখানে এই বিষয়গুলোর নিশ্চয়তা থাকা উচিত।

‘এআইভিত্তিক রোবোটিক ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার চিন্তাভাবনা চলছে’
গতকাল ১৪ মে এক অনুষ্ঠানে ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান বিপিএম-বার, পিপিএম-বার বলেন, ডিএমপির ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় এআই বেজড ট্রাফিক সিস্টেম চালুর বিষয়ে চিন্তা চলছে। একটি পরিকল্পনাপত্র পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে রয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকেও এমন চিন্তা চলছে। রাজধানীতে যদি আমরা এটি করতে পারি, তবে সিসি ক্যামেরার ওপর ভিত্তি করে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা পরিচালনা করতে সক্ষম হব।

সড়কের পাশে যত্রতত্র গাড়ির অবৈধ পার্কিংয়ের কারণে সড়কে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। এ বিষয়ে ডিএমপি কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে ডিএমপি কমিশনার বলেন, রাজধানীতে ভবন নির্মাণ করতে গেলেই রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) অনুমতি নিতে হয়। সেখানে রাজউকের কিছু শর্ত থাকে, যেমন কতটুকু জায়গা ছাড়া হবে, পার্কিং লট রাখাসহ বিভিন্ন বিষয়। কিন্তু দেখা যায় অধিকাংশ ভবনমালিক সেগুলো মানছেন না। আমরাও অনেক অসচেতন, যতটুকু আইন রয়েছে ততটুকু আমরা মানছি না। ভবনমালিক, নির্মাণপ্রতিষ্ঠান, আমরা কেউই আইন ঠিকমতো মানছি না৷ সকলের সচেতন হওয়ার দরকার রয়েছে। একটি ভবন নির্মাণ করলে সেখানে পার্কিং রাখা অবশ্যই প্রয়োজন। নিজের গাড়ি ও তাঁর বাসায় আসা মেহমানের গাড়িটিও যাতে পার্ক করে রাখা যায়। এতে সড়কে আর অবৈধ পার্কিং করার প্রয়োজন হয় না। সড়কের পাশে অবৈধ পার্কিংয়ের বিষয়ে ট্রাফিক বিভাগ নিয়মিত কাজ করছে।

জরুরি সবার সচেতনতা
রাজধানীতে ১৯১টি ক্রসিং রয়েছে উল্লেখ করে ডিএমপি কমিশনার বলেন, এর মধ্যে কেবল একটি ক্রসিংয়ে একটি সিগন্যাল বাতি রয়েছে, সেটি হলো গুলশান-২ ক্রসিং। কিন্তু সিগন্যাল বাতি স্থাপন বা লাগানোর বিষয়টি সিটি করপোরেশনের। এটি ট্রাফিকের আওতায় নয়। সড়কে যানজট ও শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে ৪টি সংস্থা কাজ করে। এর মধ্যে ৪ ভাগের ১ ভাগের অর্ধেক নিয়ন্ত্রণ করে ট্রাফিক পুলিশ। শুধু আইন প্রয়োগের কাজটি করা হয় এখান থেকে। সড়কে শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে পুলিশের পাশাপাশি বাকি সংস্থাগুলোকেও দায়িত্ব পালন করতে হবে। সূত্র: ঢাকা পোস্ট