দেশের মেডিকেল কলেজগুলোতে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের সাথে জড়িত ৭ চিকিৎসকসহ প্রশ্নপত্র ফাঁসকারী চক্রের ১২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
আগামী ১৭ আগস্ট থেকে শুরু হচ্ছে এইচএসসি পরীক্ষা। সারা দেশের প্রায় ১৫ লাখ শিক্ষার্থী এই পরীক্ষায় অংশ নেবেন। বিগত কয়েক বছরের অভিজ্ঞতায় দেখা যায়, পাবলিক পরীক্ষা এলেই একশ্রেণির চক্র বেশ সক্রিয় হয়ে ওঠে। এই চক্র নানা কায়দায় প্রশ্নপত্র ফাঁস যেমন করে, তেমনি গুজব ছড়িয়ে পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকদের বিভ্রান্তও করে। শিক্ষা খাতের ক্যানসার হিসেবে বিবেচিত এসব প্রশ্নপত্র ফাঁসকারী চক্রকে নির্মূল করতে নেতৃস্থানীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে পুলিশের সিআইডি।
দেশের সকল স্তরের প্রশ্নপত্র ফাঁস বন্ধে জিরো টলারেন্স নীতি বাস্তবায়নে সিআইডির বিশেষায়িত একাধিক দল সারা বছর মাঠে কাজ করে ইতোমধ্যে এসএসসি, এইচএসসি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা এবং বিসিএসসহ বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসকারী সর্ববৃহৎ চক্রকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় এনেছে।
এরই ধারাবাহিকতায় দেশের মেডিকেল কলেজের ভর্তি পরীক্ষাগুলোতে নিয়মিত প্রশ্নপত্র ফাঁসকারী বিশাল এক সিন্ডিকেটের খোঁজ পায় সিআইডির সাইবার টিম। এ ঘটনায় মিরপুর মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের হয়।
সিআইডি আজ এক সংবাদ সম্মেলনে জানায়, মামলাটি তদন্ত করতে গিয়ে দেখা যায়, সম্প্রতি চক্রের অন্তত ৮০ সক্রিয় সদস্য গত প্রায় ১৬ বছরে হাজার হাজার শিক্ষার্থীকে অবৈধ উপায়ে মেডিকেল কলেজগুলোতে ভর্তি করিয়ে শতকোটি টাকা আয় করেছে।
গত ৩০ জুলাই থেকে ৯ আগস্ট পর্যন্ত ঢাকা, টাঙ্গাইল, কিশোরগঞ্জ, বরিশাল জেলায় অভিযান পরিচালনা করে এ চক্রের ১২ সদস্যকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয় সিআইডির সাইবার টিম। গ্রেপ্তার ১২ জনের মধ্যে ৭ জনই চিকিৎসক। এদের প্রায় সবাই বিভিন্ন মেডিকেল ভর্তি কোচিং সেন্টার, নয়তো প্রাইভেট পড়ানোর আড়ালে প্রশ্নপত্র ফাঁস করতেন। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে ৮ জন তাঁদের দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। জবানবন্দিতে শতাধিক শিক্ষার্থীর নাম উঠে এসেছে, যাঁরা প্রশ্ন পেয়ে মেডিকেলে ভর্তি হয়েছেন। ইতোমধ্যে অনেকে পাস করে ডাক্তারও হয়ে গেছেন। এঁদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার কাজ প্রক্রিয়াধীন আছে বলে জানিয়েছে সিআইডি।
গ্রেপ্তার আসামিদের কাছ থেকে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের দেওয়া বিপুলসংখ্যক ব্যাংকের চেক এবং প্রবেশপত্র উদ্ধার করা হয়েছে। যেগুলো যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। এ ছাড়া চক্রের মাস্টারমাইন্ড জসীম উদ্দিন ভূইয়ার কাছ থেকে একটি গোপন ডায়েরি উদ্ধার করা হয়েছে, যেখানে সারা দেশে ছড়িয়ে থাকা তাঁর চক্রের অন্য সদস্যদের নাম রয়েছে। সেসব সদস্যকে ধরতে সিআইডির অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
তদন্তে উঠে এসেছে, ২০০১ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ১৬ বছরে অন্তত ১০ বার এই চক্র মেডিকেলের প্রশ্নপত্র ফাঁস করেছে। এদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে কোটি কোটি টাকার লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে, যেগুলো মানি লন্ডারিং মামলায় খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
গ্রেপ্তার আসামিদের কাছ থেকে মোবাইল ফোন ১৯টি, ল্যাপটপ ৪টি, ২ লাখ ১১ হাজার টাকা, ১৫ হাজার ১০০ থাই বাথ, বিভিন্ন ব্যাংকের চেকবই, ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড ১৫টি ও অনেক প্রবেশপত্র উদ্ধার করা হয়েছে।